অবসর প্রাপ্ত মানে জীবন গুটিয়ে ফেলা নয়। চাকুরি থেকে অবসরে গেলে, বয়স বাড়লে জীবন গুটিয়ে নিতে হয় এটা বাঙালির একটা ভ্রান্ত ধারণা, যা একজন মানুষকে জীবম্মৃত করে দেয় । আর কোন জাতি এই মানসিকতা লালন করে বলে মনে হয় না আমার। এই ভুল ধারণা থেকে প্রতিটি মানুষের বের হয়ে আসা খুবই জরুরি, বরং বয়স হলেই যে বিষয়টি সবার আগে ভাবতে হবে তা হলো আমিই এখন আমার পরম বন্ধু, আমিই এখন আমাকে সবার চেয়ে বেশি ভালোবাসবো, ভালো রাখবো। আমার জন্য কেউ ভাববে, সহানুভূতিশীল হবে, ভালো রাখার দায়িত্ব নেবে সেই আশা না করাই বরং নিজেকে ভালো রাখতে সহায়তা করে। মানুষ যত বয়স হয় তত অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হয় যা চিন্তা, চেতনা ও মনকে পরিপক্ব করে। সেই অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে পারলে সমাজ উপকৃত হয়। ছড়িয়ে দেওয়ার অনেক পথ আছে। বেছে নিতে হবে নিজেকেই। অধিকাংশ মানুষ তা না করে ঘরকুনো হয়ে পড়ে থাকেন।একাকীত্বে ও হতাশায় ভোগেন। এর প্রভাব পড়ে শরীর ও মনে। তাই তা একদম অনুচিত।নিজেকে ফিট রাখতে চাইলে সৃজনশীল কাজের সাথে জড়িত থাকার কোন বিকল্প নেই। বয়স একটা সংখ্যা মনে হয় যখন মনের তারুণ্য ধরে রাখা যায়। নেগেটিভ চিন্তা একদম ঝেঁটিয়ে বিদায় করতে হবে নিজেকে সবুজ সজীব রাখতে হলে। নিজের ব্যর্থতা কখনো ফিরে দেখা উচিত নয় একটা বয়সের পর এসে। তখন শুধুই হিসাব কষা আমি এই পৃথিবীতে জন্ম নিয়ে কী কী দায়িত্ব পালন করেছি। কোন কোন ভালো কাজ করতে পেরেছি। শেষ বয়সে এসে কী পাইনি তার হিসেব মেলাতে গেলে নিজের প্রতিই অবিচার করা হয়। জীবনে যা পেয়েছি যথেষ্ট, বহু লোক আমার মতো এত পায়নি এই ভাবনাই শেষ বয়সে মানুষের আত্মতুষ্টি আনে।
অনেক সময় সমালোচনার ভয়ে বয়স হয়ে গেলে মনের বিরুদ্ধে মানুষের খুশির জন্য নিজের জীবনধারা বদলাতে থাকি আমরা। এই কাজটা যে কত ভুল তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
মনে রাখবেন কোন মানুষই সমালোচনার উর্ধ্বে নয়। আর বাঙালি সমাজে মানুষ নেতিবাচক সমালোচনাই বেশি করে যেটা অনেকটা বাঙালির স্বভাবজাত। তাই সমালোচনা গ্রহণ করেই নিজের জন্য যা ভালো সেই মতো চলতে হবে। সমালোচকদের ভয়ে নিজের ভালো থাকা বদলাতে যাবেন না কখনো। কারণ আপনি খারাপ থাকলে তারা কখনোই আপনার ভালো থাকার ব্যবস্থা করে দেবে না। আপনার একাকীত্বে সঙ্গ দিতেও আসবে না ।
আপনি কোন রঙের কাপড় পরলেন, কীভাবে সাজলেন, কার সাথে কোথায় বসে চা/কফি খেলেন তা নিয়ে সমালোচকরা সর্বদাই ব্যস্ত থাকবে।
কিন্তু আপনার কাপড় কেনার টাকা, চিকিৎসার টাকা, খাওয়ার টাকা আছে কী না, ভালো আছেন কী না, একাকী বেঁচে থাকার জন্য কিছু প্রয়োজন কীনা সে নিয়ে তারা কখনোই ভাববে না, জিজ্ঞাসাও করবে না। তাই এই ধরনের সমালোচনা অগ্রাহ্য করে নিজেকে ভালো রাখতে সহায়তা করে এমন জীবন যাপন বেছে নেওয়া আপনার নিজের প্রতি নিজের একটা কর্তব্য। অবসর জীবনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে নিজেকেই। ফিরে আসুন নিজের ভালো লাগার জগতে যা বহুদিন আপনি ভুলে ছিলেন।
পছন্দের কাজ, ভালো লাগা হবি আবার ফিরিয়ে আনুন। ব্যস্ত থাকুন সৃজনশীল কাজের মাঝে। সময় কাটান প্রকৃতির সাথে, বই পড়ে, গান শুনে, স্রষ্টার আরাধনায়, শিশুদের সাথে, পোষা প্রাণী নিয়ে।
রেঁধে ফেলুন নিজের পছন্দের কোনও ডিশ। ভ্রমণ করুন নিজের সাধ্য মতো। ভ্রমণের মতো আনন্দ আর কিছুই নেই। নিজের প্রতি যত্নবান হোন, প্রাণ খুলে হাসুন, উপভোগ করুন প্রতিটি দিন। সহজ জীবন যাপন করুন কিন্তু গোছানো, পরিচ্ছন্ন এবং পরিপাটি থাকুন যেমনটি ছিলেন ইয়ং বয়সে। ভুলেও ভাবতে যাবেন না কে কী ভাবছে।
অবসর মানে অনিয়ম জীবনধারা নয়।বরং বেশি নিয়ম মেনে চলতে হবে সুস্থ থাকতে। নিয়মিত হাঁটতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়া, ঘুমানো, সকালে ঘুম থেকে ওঠা একান্ত জরুরি স্বাস্থ্য নীরোগী রাখতে। আমরা সবাই মরণশীল। কিন্তু তার আগেই যেন জীবম্মৃত হয়ে না যান, পরিবারের গলগ্রহ বা বোঝা না হোন সেই দায়িত্বটা একান্ত আপনার। তাই সুস্থ থেকে আত্মসম্মান নিয়ে আত্মবিশ্বাসী ও আত্মনির্ভরশীল হয়ে অবসর উত্তর জীবন যাপন করার চেষ্টা অব্যাহত রাখুন আমৃত্যু। নিজেই হয়ে যান নিজের বস।