শিক্ষার গুণ ও মানের দিকে নজর দিতে হবে

| বৃহস্পতিবার , ১৯ জুন, ২০২৫ at ১০:৫০ পূর্বাহ্ণ

শিক্ষা উপেদেষ্টা ড. সি আর আবরার বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা সমিতি (এফপিএবি) ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক সেমিনারে বলেছেন, ‘আমাদের বর্তমান জায়গা থেকে ভালো অবস্থানে পৌঁছাতে হলে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য খাতে আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের ওপর।’ ১৭ জুন যুব ও নারীর ক্ষমতায়ন, অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা এবং টেকসই উন্নয়ন বিষয়ে গঠনমূলক সংলাপ ও অংশীদারি উৎসাহিত করতেই এই সেমিনারটি আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন এফপিএবির সভাপতি ও সাবেক রাষ্ট্রদূত মসয়ূদ মান্নান।

সি আর আবরার বলেন, আগের সরকার শিক্ষাব্যবস্থাকে খারাপ অবস্থায় নিয়ে গিয়েছিল। আমরা সেই জায়গা থেকে বেরিয়ে আসতে চাই। শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, আমরা দেশ গঠনের একটি সুযোগ পেয়েছি। এই দেশকে এগিয়ে নিতে হলে আমাদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। তবে এসব ক্ষেত্রে আমাদের নীতিগুলো দুর্বল। আবার অনেক সময় আমাদের শক্তিশালী নীতি থাকলেও যথাযথ বাস্তবায়ন নেই। তাই দুর্বল নীতিগুলোর সংস্কার ও শক্তিশালী নীতিগুলো বাস্তবায়নে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, ২০২০ সালে করোনা সংক্রমণের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অটোপাস ও সংক্ষিপ্ত সিলেবাস চালু হয়। এর ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ৭০ লাখ শিক্ষার্থী অটোপাস বা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা দিয়েছে। ২০২০ সালে করোনা সংক্রমণের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অটোপাস ও সংক্ষিপ্ত সিলেবাস চালু হয়। এর ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ৭০ লাখ শিক্ষার্থী অটোপাস বা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে অটোপাস কোনো সমাধান নয়। বরং এতে দীর্ঘমেয়াদে শিক্ষার্থী ও দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। উচ্চ শিক্ষা, চাকরির বাজারে অটোপাসের পরিপ্রেক্ষিতে নানা বেগ পোহানোসহ সামাজিকভাবে তাদের মধ্যে হীনম্মন্যতা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। দুঃখজনকভাবে সে আশঙ্কার কিছুটা বর্তমানে পরিলক্ষিতও হচ্ছে। এমন ঘটনা কভিডের সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে ২০২০ সালে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা না দিয়ে পাস করা শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে। সে সময় এসএসসি, জেএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের গড় মূল্যায়ন করে ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছিল। বর্তমানে তাদের অটোপাস জেনারেশন নামে হেয়প্রতিপন্ন করা হয়। তাছাড়া যারা পরিশ্রমী শিক্ষার্থী তাদের ওপর এটি এক ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণও বটে। অটোপাস পদ্ধতিতে প্রকৃত মেধার মূল্যায়ন সম্ভব নয়।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, সীমিত সিলেবাসে পরীক্ষা বা অটোপাসের কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে মৌলিক জ্ঞানের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের অনেক বিষয় বুঝতে অসুবিধা হয়, যেগুলো তাদের মাধ্যমিকে শিখে আসার কথা, ফলে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে পড়াতে গিয়ে তাদের পুরনো শ্রেণীর বিষয়ও নতুন করে বুঝিয়ে দিতে হচ্ছে। আবার অনেকেই স্নাতকে ফেল করছেন। আবার পূর্ণাঙ্গ পাঠ্যক্রমে পরীক্ষা দিয়ে আসা ব্যাচগুলোর তুলনায় এসব শিক্ষার্থীর ফলাফলও তুলনামূলক খারাপ। অর্থাৎ এ ব্যবস্থার কারণে শিক্ষার মান আরো নিম্নমুখী হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, শিক্ষার মান ভালো না হলে দেশের টেকসই অগ্রগতি সম্ভব নয়। দীর্ঘদিন ধরে দেশের শিক্ষা মান প্রশ্নবিদ্ধ। তার ওপর জুলাই গণঅভ্যুত্থান চলাকালীন শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হয়। কিন্তু প্রত্যাশা ছিল নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর শিক্ষাঙ্গনে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসবে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের ১০ মাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও খুব বেশি স্বাভাবিক হয়ে আসেনি শিক্ষার পরিবেশ।

শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, গত ৫০ বছরে শিক্ষার বিস্তার বেড়েছে, তবে মানের আশানুরূপ উন্নয়ন হয়নি। মানের দিকে আরও নজর দিতে হবে। শিক্ষার মানের সঙ্গে শিখন পদ্ধতি, পাঠ্যক্রম, পাঠ্যবই, শিক্ষক সমভাবে গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার্থীদের মননশীলতা জাগিয়ে তুলতে না পারলে ফলসর্বস্ব শিক্ষাব্যবস্থা দিয়ে মানের উন্নয়ন ঘটবে না। তবে সনদ সর্বস্ব শিক্ষা থেকে বেরিয়ে আসার কথা বলেছেন শিক্ষাবিদরা। বলেছেন, গতানুগতিক চিন্তাধারা থেকে বেরিয়ে এসে শিক্ষা ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আনতে হবে। সংখ্যায় নয়, শিক্ষার গুণ ও মানের দিকে নজর দিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে