ড. মঈনুল ইসলামের কলাম

বাংলাদেশে অবৈধভাবে কর্মরত ভারতীয় নাগরিকদের সংখ্যা আসলে কত

| বৃহস্পতিবার , ৬ মার্চ, ২০২৫ at ১১:২২ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশে বৈধ কিংবা অবৈধভাবে কর্মরত ভারতীয়দের সংখ্যা নিয়ে সম্প্রতি একটি বড় ধরনের বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। কিছুদিন আগে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা প্রফেসর আসিফ নজরুল বললেন, বাংলাদেশে বাইশ লাখ ভারতীয় কর্মরত। তাঁর এই অবিশ্বাস্য বক্তব্য বাংলাদেশ ও ভারতে প্রচন্ড আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বছরখানেক আগে সোশ্যাল মিডিয়ার ইউটিউবে প্রচারিত পশ্চিমবঙ্গের কোলকাতার একটি নিউজক্লিপে দাবি করা হয়েছিল যে বাংলাদেশে পাঁচ লাখেরও বেশি ভারতীয় কর্মরত রয়েছে, যার মধ্যে অনুমিত সাড়ে চার লাখই নাকি ‘ট্যুরিস্ট ভিসা’ নিয়ে অবৈধভাবে এদেশে কাজ করছে। ঐ নিউজক্লিপের মতে মাত্র ১০ শতাংশ মানে পঞ্চাশ হাজার ভারতীয় বাংলাদেশ সরকার থেকে বৈধ অনুমতি ও ‘ওয়ার্ক পারমিট’ নিয়ে এদেশে চাকুরি করছে। এই পাঁচ লাখ ভারতীয়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নাকি কর্মরত রয়েছে তৈরি পোশাক কারখানা ও বায়িং হাউজগুলোতে, তারপর আইটি সংশ্লিষ্ট ফার্মগুলোতে, এরপর ট্রাভেল এজেন্সি ও অন্যান্য সেবাখাতে। তৈরি পোশাক খাতে প্রায় এক লাখ ভারতীয় নাকি টেকনিশিয়ান, ডিজাইনার এবং ম্যানেজমেন্ট সংক্রান্ত চাকুরিগুলোতে কর্মরত রয়েছে, যাঁদের মাসিক আয় দুই হাজার ডলার থেকে দশ হাজার ডলার। তৈরি পোষাক খাতের বায়িং হাউজগুলোতেও প্রায় এক লাখ ভারতীয় নাকি কাজ করছে, যেজন্য দেশের বায়িং হাউজগুলোতে ভারতীয়দের দাপট সহজেই চোখে পড়ে। আইটি ফার্মগুলোতে সফটওয়্যার এক্সপার্ট হিসেবে এবং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমগুলোতেও ভারতীয় দক্ষ বিশেষজ্ঞদেরকে বিপুল সংখ্যায় কাজে লাগানো হচ্ছে, কারণ বাংলাদেশে এসব কাজের উপযুক্ত দক্ষ পেশাজীবীর বিরাট ঘাটতি রয়েছে। ঐ নিউজক্লিপের দাবি, বেশির ভাগ ভারতীয় বৈধঅবৈধ চাকরিজীবীরা হুন্ডি প্রক্রিয়ায় তাদের আয়ের সিংহভাগ ভারতে পাচার করে চলেছে। এই নিউজক্লিপের দাবি মোতাবেক বাংলাদেশ থেকে তাদের বেতন বাবদ অবৈধভাবে পাচার করা অর্থের পরিমাণ বাংলাদেশী টাকার অংকে প্রায় ২৬,৪০০ কোটি টাকা হবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে বিডিজবস.কমের একটি জরিপেএমন দাবি করেছেন ঐ সংস্থার একজন শীর্ষ কর্মকর্তা। তৈরি পোষাক শিল্প ও আইটি ফার্মের এক শ্রেণীর বাংলাদেশী মালিক তাঁদের নানাবিধ অবৈধ কান্ড গোপনে ও নির্বিঘ্নে চালানোর জন্য এই ভারতীয় কর্মকর্তাদেরকে নিয়োগ দেওয়াকে নাকি বেশি নিরাপদ মনে করে থাকেন। অভিবাসী হিসেবে এদেশে তাদের আইনীমর্যাদার দুর্বলতা তাদেরকে মালিকপক্ষের নানাবিধ অবৈধ কর্মকান্ডে সহায়তা প্রদান ও ওসব তৎপরতা গোপন রাখতে বাধ্য করে বলে নিউজক্লিপে দাবি করা হয়েছে।

প্রফেসর আসিফ নজরুল এবং নিউজক্লিপের ‘আলোড়নসৃষ্টিকারী’ দাবিগুলোকে বিশ্বাসযোগ্য মনে করেন না ওয়াকিবহাল মহল। কিন্তু কয়েক মাস আগে ইউটিউবে দেখলাম, হামীম গ্রুপের মালিক এ কে আজাদ দাবি করেছেন বাংলাদেশে এক লাখ পঁচিশ হাজার ভারতীয় কাজ করছে এবং তারা প্রতি বছর ৪৬ বিলিয়ন ডলার হুন্ডি পদ্ধতিতে ভারতে নিয়ে যাচ্ছে। অতএব, বাংলাদেশে কর্মরত ভারতীয়দের সংখ্যা সম্পর্কে বিভ্রান্তি নিরসনের জন্য এদেশে কর্মরত ভারতীয় নাগরিকদের সংখ্যা সঠিকভাবে নিরূপণে অবিলম্বে সরকারের একটি সরেজমিনে জরিপ পরিচালনা করা আবশ্যক হয়ে পড়েছে মনে করি। বিশেষত উল্লেখযোগ্য, বাংলাদেশে বৈধ ‘ওয়ার্ক পারমিট’ নিয়ে কর্মরত বিদেশী অভিবাসীদের যে হিসাব বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) প্রকাশ করেছে সেটা উপরে বর্ণিত চিত্রের ধারেকাছেও নেই। এই চিত্রে দেখানো হয়েছে, বাংলাদেশে ২০২১২২ অর্থবছরে মোট ১৫,১২৮ জন বিদেশীকে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (Bangladesh Invested Development Authority কিংবা বিডা) বৈধভাবে ‘ওয়ার্ক পারমিট’ দিয়েছে। এর মধ্যে ৭,৭৯০ জন বিদেশী নতুন ওয়ার্ক পারমিট নিয়েছে এবং ৭,৩৩৮ জন বিদেশী পুরানো ওয়ার্ক পারমিট নবায়ন করিয়ে নিয়েছে। মোট ১০৬টি দেশের নাগরিকরা ওয়ার্ক পারমিট নিয়েছে। বিডার হিসাব মোতাবেক এদেশে বৈধভাবে কর্মরত বিদেশীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রাশিয়ান নাগরিক,৯৬৬ জন, তারপর ভারতীয়,২১২ জন, এরপর চীনা নাগরিক,৩৪৬ জন। রাশিয়ার অর্থায়নে নির্মীয়মাণ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারণে রাশিয়ান অভিবাসীদের সংখ্যাধিক্য সৃষ্টি হয়েছে। চীনা নাগরিকরাও বেশ কয়েকটি চীনঅর্থায়িত প্রকল্পে কর্মরত। ভারতীয় অভিবাসীরা প্রকল্পের চাইতেও নানা শিল্প কারখানায় কর্মরত। কিন্তু, ভারতীয়দের এই উল্লিখিত সংখ্যাটি বাইশ লাখ, পাঁচ লাখ বা এক লাখ পঁচিশ হাজার ভারতীয় বাংলাদেশে কর্মরত থাকার ‘ফ্যানটাস্টিক’ বিষয়টিকে কোনভাবেই সমর্থন করছে না। কোলকাতা থেকে প্রচারিত ইউটিউবের খবরটিতে পঞ্চাশ হাজার ভারতীয় ‘ওয়ার্ক পারমিট’ নিয়ে কাজ করার কথা বলা হয়েছে। তাদেরকে বাংলাদেশের কোন্‌ সরকারী কর্তৃপক্ষ ওয়ার্ক পারমিট দিয়েছে? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যদি তাদেরকে ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট দিয়ে থাকে তাহলে এক্ষেত্রে বিডা কর্তৃক প্রকাশিত আলাদা পরিসংখ্যানের যৌক্তিকতা কী? ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে বিদেশী নাগরিকদের বাংলাদেশে কাজ করার বিষয়টি শুধু ভারতীয়দের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, শ্রীলংকারও কয়েক হাজার নাগরিক এদেশে অবৈধভাবে কাজ করার অভিযোগটি বেশ পুরানো।

অন্যদিকে, বিজিএমইএ এর এক জরিপে এক লাখ ভারতীয়কে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি স্রেফ অস্বীকার করা হয়েছে। ঐ জরিপে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মোট চার হাজার পাঁচ শত ষাটটি তৈরি পোশাক কারখানার মধ্যে মাত্র বায়ান্নটিতে ১৭৭ জন ভারতীয় কর্মকর্তা কর্মরত রয়েছে। এটা যে কতখানি হাস্যকর ও ভুয়া তথ্য সেটা তৈরি পোশাক কারখানা সম্পর্কে যাঁরা খবরাখবর রাখেন তাঁরা সহজেই উপলব্ধি করতে পারছেন। অনেক বেশি ভারতীয় যে তৈরি পোষাক শিল্পে কর্মরত এতবড় সত্যটাকে কিভাবে অস্বীকার করলো বিজিএমইএ? তাঁরা ব্যাপারটি এভাবে অস্বীকার করে কি সততা কিংবা দেশপ্রেমের পরিচয় দিলেন? প্রায় পৌনে তিন বিলিয়ন বা ৪৬ বিলিয়ন ডলার অবৈধ হুন্ডি পদ্ধতিতে ভারতীয়রা বাংলাদেশ থেকে পাচার করে দিচ্ছে, এবং এই কাজে এদেশের গার্মেন্টস মালিক ও আইটি ফার্মের মালিকদের একাংশ সক্রিয় মদদদাতার ভূমিকা পালন করে চলেছেনব্যাপারটা খুবই গুরুতর অপরাধের শামিল নয় কি? এখনো সরকার এসম্পর্কে নিষ্ক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করে চলেছে কার্‌ স্বার্থে? ভারতীয়দের সংখ্যা আড়াল করার পেছনে যুক্তি কী? তৈরি পোশাক কারখানাগুলোতে মার্কেটাইজার, মান নিয়ন্ত্রক, প্রকৌশলী, টেকনিশিয়ান, গবেষক, উন্নয়ননমুনা পরীক্ষক, বিপণন কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপক হিসেবে যে বিপুল সংখ্যক ভারতীয় এবং শ্রীলংকার নাগরিক কাজ করছেন তা দেশের তৈরি পোশাক শিল্প সম্পর্কে যাঁরা খোঁজখবর রাখেন তাঁদের কাছে বহুদিন ধরেই জানা আছে। শ্রীলংকায়ও হুন্ডি পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার হওয়ার বিষয়টি ওয়াকিবহাল মহলের অজানা নয়।

ভারতের শাসকদল বিজেপি বহু বছর ধরে দাবি করে চলেছে যে ভারতে নাকি কয়েক কোটি বাংলাদেশী অবৈধভাবে বসবাস করছেন ও কর্মরত রয়েছেন। এটা দু’দেশের অতীত ইতিহাসের একটা বিষয়, যেটা বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে ডাঁহা মিথ্যা হিসেবে পরিগণিত হওয়ার কথা। বাংলাদেশের ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপিজামায়াতের সন্ত্রাসীদের তান্ডবের শিকার হয়ে অনেক সংখ্যালঘু হিন্দু দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন, ওটাই বাংলাদেশ থেকে ভারতে বিপুলসংখ্যক শরণার্থী গমনের সর্বশেষ অধ্যায়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় যে প্রায় এক কোটি বাংলাদেশী শরণার্থী ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন তাদের মধ্যেও একটা অংশ মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর বাংলাদেশে ফেরত আসেননি বলে মনে করা হয়। এরপর নিজেদের ইচ্ছায় এদেশের সহায়সম্পত্তি বিক্রয় করে মধ্যবিত্ত ও উঁচু জাতের হিন্দুদের একাংশ নীরবে প্রতি বছর দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যাচ্ছেন সেটাও অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ও মহাজোট বাংলাদেশে ক্ষমতায় আসার পর এদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছিল তা কি অস্বীকার করা যাবে? বিশেষত, শেখ হাসিনার সরকার ২০০৯ সাল থেকে সংখ্যালঘুদেরকে নিজেদের রাজনৈতিক মিত্র হিসেবে বিশ্বাস করে যে তাদের ন্যায্য পাওনা দিতে কার্পণ্য করেননি সেটা কি ভারতীয়দের চোখে পড়ছে না? ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট স্বৈরশাসক হাসিনার পতনের পরও হিন্দুদের ভারতে যাওয়ার কোন অস্বাভাবিক প্রবণতা দেখা যায়নি।

তারপরও বিজেপি’র নেতারা নিজেদের কট্টর হিন্দুত্ববাদী ক্ষুদ্র রাজনৈতিক ও নির্বাচনী স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য অবৈধ বাংলাদেশীরা ভারতে দলে দলে পাড়ি জমানোর কেচ্ছাকাহিনী ফেঁদে যাচ্ছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘পয়েন্টসম্যান’ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ বাংলাদেশীদেরকে ‘উই পোকার’ মত ভারতকে খেয়ে ফেলার অভিযোগ তুলতেও দ্বিধা করেননি। আরেকজন প্রতিমন্ত্রী তো এমনও দাবি করেছেন যে ভারতবাংলাদেশ সীমান্ত খুলে দিলে অর্ধেক বাংলাদেশী নাকি ভারতে পাড়ি জমাবে! কতখানি মূর্খতার পরিচায়ক এধরনের অভিযোগ তা চিন্তা করা যায়? আসামের একজন বিজেপি নেতা দম্ভভরে বলেছিলেন, তার দল নির্বাচনে জিতলে আসামের অবৈধ বাংলাদেশীদেরকে লাথি মেরে বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেবে। এটা যে বিজেপি’র হাতে একটা মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে কার্যকর হয়ে চলেছে সেটাও বোঝা যায় বিজেপি আসাম ও ত্রিপুরায় এই ট্রাম্পকার্ড খেলে ক্ষমতা দখলে সফল হওয়ার ব্যাপারটায়। শুধু পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি’র এই খেলা বুমেরাং হয়ে গেছে, গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি এহেন প্রোপাগান্ডা চালিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের বিজয় ঠেকাতে গিয়ে গোহারা হেরে গিয়েছিল মমতা ব্যানার্জির কাছে। কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার মোটামুটি প্রশংসনীয় ছিল মনে করা হয়। করোনা ভাইরাস মহামারি এবং রাশিয়াইউক্রেন যুদ্ধের নেতিবাচক অভিঘাত ২০২০২১ অর্থবছর থেকে ২০২২২৩ অর্থবছর পর্যন্ত জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারকে ক্ষতিগ্রস্ত করা সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ২০২৩২৪ অর্থবছরেও মোটামুটি ইতিবাচক ধারায় প্রবাহিত হচ্ছিল। তারই প্রতিফলন হয়তো দেখা যাচ্ছে ক্রমবর্ধমান হারে বাংলাদেশে উচ্চবেতনে ভারতীয়দের কর্মসংস্থানের প্রবাহ সৃষ্টির মধ্যে। বাংলাদেশে যেহেতু আধুনিক প্রযুক্তিবিদ, প্রকৌশলী, দক্ষ ব্যবস্থাপক ও আইটি বিশেষজ্ঞের অভাব রয়েছে তাই তৈরি পোশাক শিল্প এবং আইটি খাতে লোভনীয় বেতনে ভারতীয় এবং শ্রীলংকানদেরকে নিয়োগ দিয়ে চলেছে বাংলাদেশের এই দুটো খাতের এক শ্রেণীর মালিক। গোপনীয়তা ও বিশ্বস্ততার ইস্যুটা এক্ষেত্রে প্রধান বিবেচ্য এই মালিকদের কাছে। কিন্তু, এসব অবৈধ অভিবাসীরা যে ‘ট্যুরিস্ট ভিসা’ নিয়ে কাজ করছে এবং কয়েক বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ থেকে হুন্ডি প্রক্রিয়ায় নিজেদের দেশে পাচার করার অভিযোগ উঠেছে সেটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনো নিষ্ক্রিয় কেন? ভারত থেকে বাংলাদেশে বৈধ ও অবৈধ উভয় পথে রেমিট্যান্স প্রবাহ একেবারেই নগণ্যএটা ওয়াকিবহাল মহলের অজানা নয়। অথচ, সাবেক সরকারের শাসনামলে চিকিৎসা ও শিক্ষা খাতে বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রতি বছর কয়েক বিলিয়ন ডলার পাচার হয়ে যাওয়ার বিষয়টি সবারই জানা আছে। সম্প্রতি হাসিনা সরকারের পতনের পর কোলকাতায় চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশীদের যাতায়াত অনেকখানি স্তিমিত হওয়ায় ওখানে যে হাহাকার উঠেছে সেটা তো সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রায়ই শোনা যাচ্ছে! গোপনে যেসব সংখ্যালঘু বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাড়ি জমাচ্ছে তারাও হুন্ডি ব্যবসার সহায়তায় দেশ থেকে পুঁজিপাচার করছে, এটাও অজানা কোন বিষয় নয়। অতএব, বাংলাদেশ থেকে ভারতে অবৈধ অভিবাসী প্রবাহের বিষয়টি সাম্প্রতিককালে উল্টোরূপ পরিগ্রহ করেছে কিনা জানা প্রয়োজন। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সুফল ভোগ করার জন্য ভারতীয়রাই এখন ক্রমবর্ধমান সংখ্যায় বাংলাদেশে ঢুকে পড়ার ব্যাপারটিকে হয়তো আর অস্বীকার করার যুক্তি নেই! ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং তাঁদের হিন্দুত্ববাদী সাগরেদরা কি ব্যাপারটা মানতে পারবেন? সম্প্রতি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অবৈধ ভারতীয়দেরকে বাংলাদেশ থেকে বের করার প্রয়াস জোরদার করার ঘোষণা দিয়েছেন। আমরা এই ঘোষণাকে স্বাগত জানাই।

লেখক : সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি, একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ও অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্মৃতিতে জননেতা আবদুল্লাহ আল নোমান
পরবর্তী নিবন্ধস্বপ্নবিলাস বিদ্যানিকেতনের ইয়ুথ লিডারশিপ প্রোগ্রাম