সাইফের বাড়িতে ওই রাতে ৩০ মিনিটে যা হয়েছিল

| রবিবার , ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৭:৪২ পূর্বাহ্ণ

মুম্বাইয়ের বান্দ্রায় বহুতল ভবন সৎগুরু শরণের ১২ তলায় ভারতীয় অভিনেতা সাইফ আলী খানকে ছুরিকাঘাতের ভয়াবহ ঘটনাটি ঘটে যায় মাত্র আধাঘণ্টায়। পুলিশের বরাত দিয়ে এনডিটিভি লিখেছে, হামলার দুই ঘণ্টা আগেও বাড়িতে কারও প্রবেশের কোনো চিহ্ন খুঁজে পায়নি ফরেনসিক বিভাগ। এমনকি ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ভিডিওতেও কারো প্রবেশের দৃশ্যও ধরা পড়েনি ওই ফ্ল্যাটে। খবর বিডিনিউজের।

সাইফের হামলাকারীকে ধরতে এর মধ্যে মুম্বাই অপরাধ দমন বিভাগের ১৫টি টিম মাঠে আছে আর মুম্বাই পুলিশের ২০টি টিম কাজ করছে এই তদন্তে। আর হামলার তদন্তের মূল দায়িত্ব পেয়েছেন পুলিশের অ্যানকাউন্টার বিশেষজ্ঞ দয়া নায়েক।

ঘটনার দুদিন পেরিয়ে এক সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আটক করেছে মুম্বাই পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গ্রেপ্তার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এছাড়া সাইফের বাড়ির ক্লোজড সার্টিক ক্যামেরায় ধরা পড়া ব্যক্তির পরিচয় সামনে আনেনি পুলিশ কর্তৃপক্ষ। সন্দেহভাজন হামলাকারীকে মুম্বাইয়ের বান্দ্রার রেলস্টেশনের কাছে একবার দেখা গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশের ধারণা বান্দ্রা স্টেশন থেকে প্রথম লোকাল ট্রেন ধরে জেলার পালঘর, বাসাই বা নালাসোপারার দিকে পালিয়েছেন ওই হামলাকারী। ওই সব জায়গায় অভিযান চালাচ্ছে পুলিশের টিম। বলিউডের তারকা দম্পতির বাড়িতে এ হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সিনেমা জগতের মানুষেরা। শহরের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিভিন্ন মহল।

তদন্তে পুলিশ প্রথমিকভাবে ধারণা করছে, চুরির উদ্দেশেই সাইফের বাড়িতে ঢুকেছিল হামলাকারী। বাড়ির প্রবেশপথ ও নকশা সম্পর্কেও তার জানা ছিল। পুলিশের ভাষ্য, চোর ঢুকেছিল বাড়ির ফায়ারস্পেস দিয়ে। এরপর ভবনের পেছনের দিকের সিঁড়ি বেয়ে উঠে যায় সাইফকারিনার অ্যাপার্টমেন্টে।

কিন্তু বাড়ির ভেতরে কীভাবে ওই ব্যক্তি ঢুকলো সেটি প্রকাশ করেনি মুম্বাই পুলিশ। গৃহকর্মী ইলিয়ামা ফিলিপস ওরফে লিমার বর্ণনায় ওই রাতের পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেছে এনডিটিভি। গত চার বছর ধরে কারিনাসাইফের সংসারে থাকা লিমা বলেছেন তিনিই প্রথম ওই অনুপ্রবেশকারীকে দেখেন, ওই ব্যক্তির বয়স ৩৫ থেকে ৪০ বছর।

৫৬ বছর বয়সী লিমার ভাষ্য, সাইফকারিনার ছোট ছেলে জাহাঙ্গীর আলী খানকে ঘুম পাড়ানোর ঘণ্টা তিনেক পর একটি আওয়াজে তার ঘুম ভেঙে যায়। হামলাকারী প্রথমে জেহর (জাহাঙ্গীর আলী খানকে) ঘরে ঢুকেছিল। ওই ঘরের বাথরুমের দরজা খোলা দেখি এবং সেখানে আলো জ্ব্‌লছিল। ভেবেছিলাম মিসেস কাপুর (কারিনা কাপুর) বোধহয় জেহকে দেখতে ঘরে এসেছেন। একটু পর বুঝতে পারলাম কোথাও একটা সমস্যা আছে। আমার ঘর থেকে জেহর ঘরে গিয়ে দেখি একটা লোক বাথরুম থেকে বেরিয়ে জেহর ঘরে এসে দাঁড়াল। আমাকে দেখে ওই ব্যক্তি ঠোঁটের সামনে আঙুল ধরে শাসিয়ে বলল যে আমি যেন কোনো শব্দ না করি এবং ঘর থেকে বের না হই। লিমা বলেছেন, তিনি দৌড়ে জেহর বিছানার কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তখন ওই ব্যক্তি এক হাতে লাঠি এবং আরেক হাতে ব্লেড নিয়ে এসে তাকে আটকাতে চেষ্টা করে। আমি যখন হাত দিয়ে ঠেকাতে যাই, তখন ওই ব্যক্তি আমার বাম হাতের মধ্যমার উপরে ব্লেড চালিয়ে দেয়। আমি তখন জিজ্ঞাসা করি আপনি কি চান? তখন ইংরেজিতে উনি বলেন যে এক কোটি রুপি তাকে দিতে হবে। আরেক গৃহকর্মী জুনু লিমার ওপরে হামলার ঘটনা দেখে দৌড়ে সাইফকারিনার ঘরে যেয়ে তাদের ডেকে তোলেন।

সাইফ দৌড়ে জেহর ঘরে আসার পর সাইফও বলেন, আপনি কি চান? উত্তরে তখনও ওই ব্যক্তি টাকা দাবি করেন বলে জানিয়েছেন লিমা। এরপর ওই ব্যক্তি ছুরি বের করে সাইফকে একের পর এক আঘাত করেন। আর কাঁদতে কাঁদতে জেহ ওই ঘর থেকে পালিয়ে যায়।

বাড়ির তৃতীয় গৃহকর্মী গীতা এরপর ওই ব্যক্তিকে প্রায় আরেকটি ঘরে আটকে ফেলেছিলেন, কিন্তু কোনো রকমে তিনি পালিয়ে যান। আর বাড়ির সবাইকে নিয়ে কারিনা তখন ওপরের তলায় চলে যান বলে জানিয়েছেন লিমা।

আর যদি ২ মিলিমিটার গভীরে ঢুকত ছুরি

গাড়ি না পেয়ে রক্তাক্ত সাইফকে অটোতে হাসপাতালে নেন ইব্রাহিম। এরপর সাইফঅমৃতার বড় ছেলে ইব্রাহিম খান বান্দ্রার বাড়িতে আসেন। ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হওয়ার পর যখন রক্তে ভেসে যাচ্ছিলেন, তখন তাকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য একটি গাড়িও বাড়িতে প্রস্তুত ছিল না। উপায় না দেখে অটোতে করে বাবাকে মুম্বাইয়ের লীলাবতী হাসপাতালে নিয়ে যান তার বড় ছেলে ইব্রাহিম, তাদের সঙ্গে ছিল তৈমুরও।

পুলিশের প্রকাশ করা ভিডিওতে দেখা গেছে, বুধবার রাত ২টা ৩৩ মিনিটে সাইফের বাড়ির পেছনের সিঁড়ি দিয়ে দ্রুত এক যুবক নেমে যাচ্ছেন। তাকে সিসিটিভির দিকেও তাকাতে দেখা গেছে। সেই ব্যক্তি সাদা কলারের কালো টি শার্ট পরেছেন। গলার কাছে ঝুলছে গামছা, পরনে জিনস। কাঁধে একটি ব্যাগও রয়েছে। এদিকে, পাঁচ ঘণ্টার অস্ত্রোপচার শেষে সাইফের শরীর মেরুদণ্ডের খুব কাছ থেকে ছুরির আড়াই ইঞ্চির ভাঙা অংশ চিকিৎসকরা বের করেছেন বলে লীলাবতী হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। অভিনেতাকে আইসিইউ থেকে সাইফকে বিশেষ একটি কেবিনে স্থানান্তরিত করা হয়েছে জানিয়ে চিকিৎসক নীতিন নারায়ণ বলেছেন, অস্ত্রোপচারতো বটেই, মেরুদণ্ডের ক্ষতের কারণে আগামী এক সপ্তাহের জন্য দর্শনার্থী চলাচল সীমিত করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনেপালকে হারিয়ে শুভসূচনা বাংলাদেশের
পরবর্তী নিবন্ধরাশিয়ার হয়ে যুদ্ধে ১২ ভারতীয় নিহত,নিখোঁজ ১৬