চালের বাজার যেকোনো প্রকারে স্থিতিশীল রাখতে হবে

| শনিবার , ১১ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৪:৫৪ পূর্বাহ্ণ

দেশের বাজারে প্রতিনিয়তই বাড়ছে চালের দাম। সমপ্রতি খুচরা পর্যায়ে কেজিতে চালের দাম পাঁচ টাকা থেকে আট টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। কোনোভাবেই বাগে আনা যাচ্ছে না চালের বাজার। উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হওয়া, হাটবাজারসড়কে অব্যাহত চাঁদাবাজি, আমদানি করা চাল না আসা, সরকারের সংগ্রহ টার্গেট ফেল করা, কয়েক স্তরে হাতবদল, সরকারি মজুত কমে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে অব্যাহতভাবে বাড়ছে চালের দাম। গত ৯ জানুয়ারি দৈনিক আজাদীতে ‘ঘাটতি নেই, তবু দাম বাড়তি’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দেশের সরকারি গুদামে প্রচুর চাল মজুদ রয়েছে। বেসরকারি চাল ব্যবসায়ীদের কাছেও অভাব নেই চালের। রাইস মিলগুলোতেও প্রচুর ধান এবং চালের মজুদ। দেশে আমনের ভরা মৌসুম চলছে। সরকার বিপুল পরিমাণ চাল আমদানিও করেছে। জাহাজে জাহাজে চাল আসছে বন্দরে। অথচ বাজারে এর কোনো প্রভাব নেই। চালের দাম হু হু করে বাড়ছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দর কেজি প্রতি ৫ টাকারও বেশি বেড়ে গেছে। এক মাসের ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ১২ টাকা। সংঘবদ্ধ একটি চক্র চাল নিয়ে নানাভাবে চালবাজি করছে বলে অভিযোগ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো এই চালবাজদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। অবশ্য সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে, আমদানির চাল আসতে শুরু করেছে। চালের দাম দ্রুত কমে আসবে।

উৎপাদন পর্যায় এবং সরকারের গুদামে পর্যাপ্ত চাল থাকার পরও মজুদদারির কারণে চালের বাজার ‘অস্থিতিশীল’ হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। তিনি বলেছেন, আমাদের তথ্যউপাত্ত অনুযায়ী বাজারে চালের কোনো ঘাটতি নেই। সরকারের নিজস্ব যে মজুদ, সেখানেও ঘাটতি নেই, স্থানীয় উৎপাদনেও তেমন ঘাটতি নেই। কারণ আমরা আমনের ভরা মৌসুম পার করছি। এই মুহূর্তে বাজারে মূল্যস্ফিতির কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ আমরা দেখছি না। আশা করি কিছু দিনের মধ্যে এটা নেমে আসবে। তিনি বলেন, ভোক্তা পর্যায়ে বিশেষ করে নাজিরশাইল ও মিনিকেট, এই দুটি চালের দাম ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। খুচরা লেভেলে যে ধরনের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে, তার থেকে পাইকারি লেভেলে দামের বৃদ্ধিটা অনেক বেশি। আমনের ভরা মৌসুমে বাজারে নতুন চালের ভালো সরবরাহ থাকলেও দাম উল্টো বাড়ছে। রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা টিসিবির হিসাবে, এক সপ্তাহে মোটা চালের দাম কেজিতে তিন থেকে চার টাকা বেড়েছে। আর মাঝারি মানের চালের দাম কেজিতে দুই টাকা বেড়েছে। এই দাম বৃদ্ধি ‘অযৌক্তিক’ মন্তব্য করে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমাদের যেটা করতে হবে, সেটা হলো, আমদানির ‘উদারীকরণ’। আমরা আলুর ক্ষেত্রে উদারীকরণ করেছি, তখন আলুর দাম ব্যাপকভাবে নেমে এসেছে। আমাদের কাছে মনে হয়েছে, একটা সাময়িক মজুতদারির ঘটনা ঘটছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের নানামুখী উদ্যোগেও কমেনি চাঁদাবাজি। হাতবদলের পরে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে চাঁদাবাজরা। যার প্রভাব পড়ছে বাজারগুলোতে। ফলশ্রুতিতে বাড়ছে চালের দাম। হাসিনা সরকারের পতনের পর মাসখানেক বন্ধ থাকলেও চাঁদাবাজরা ভোল পাল্টে আবার মাঠে সক্রিয় হয়েছে। এ কারণে চালসহ প্রায় সব ধরনের পণ্যই চড়া দামে বাজারে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে ব্যবসায়ীরা। একজন ব্যবসায়ীকে হাটে, বাজারে, সড়কে, মহাসড়কে, আড়তে, পাইকারি বাজারে, খুচরা বাজারে এবং মহল্লার দোকানে পর্যন্ত বিভিন্ন কায়দায় চাঁদা দিতে হচ্ছে। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান সমপ্রতি বলেন, বাজার সিন্ডিকেট ও চাঁদাবাজির কারণে পণ্যের দাম ৩০ শতাংশ বাড়ে।

চালের দাম স্থিতিশীল রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান হোছাইনী জানিয়েছেন, খুচরা বাজারে চালের দাম স্থিতিশীল রাখতে আমরা ৫৯টি কোম্পানিকে ৩ লাখ ২৭ হাজার টন সিদ্ধ ও আতপ চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছি। বেসরকারি আমদানিকারকদের বিগত ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে চাল বাজারজাত করতে হবে বলেও আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে। খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেছেন, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চাল সংগ্রহে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে ২২ লাখ টন খাদ্য মজুত আছে। সেটিকে ৩০ লাখ করার জন্য কাজ করছে সরকার।

গবেষকদের মতে, চাল এমন একটি পণ্য, এর দাম বাড়লে সবচেয়ে বেশি চাপে পড়ে শ্রমজীবী ও গরিব মানুষ। অতএব, চালের দাম যাতে কোনোভাবে না বাড়ে, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। আমদানি নয়, বরং খাদ্য উৎপাদন বাড়িয়ে এবং সরকারি গুদামে প্রয়োজনীয় ধানচাল মজুত করেই বাজার স্থিতিশীল রাখার ওপর জোর দিতে হবে। দেশের নিম্ন আয়ের মানুষের সংখ্যা বেশি। চালের বাজার বৃদ্ধি হলে সাধারণ ভোক্তার কষ্ট বাড়ে। তাই আমরা মনে করি, চালের বাজারদর যে কোনো মূল্যেই স্থিতিশীল রাখতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে