নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গাজী টায়ারসে লুটপাটের পর দেওয়া আগুনের ঘটনার চার দিন পেরিয়ে গেলেও ক্ষতিগ্রস্ত ছয়তলা ভবনটিতে উদ্ধার অভিযান শুরু করতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। প্রায় তিন দিন ধরে জ্বলতে থাকা ভবনটির অবস্থা অনিরাপদ থাকায় উদ্ধার অভিযান শুরু করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তারা। এতে অপেক্ষা বেড়েছে আগুনের সময় ভবনটিতে আটকে পড়া নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনদের।
গতকাল বুধবার বিকালে জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা কারখানাটি পরিদর্শন করে জানিয়েছেন, উদ্ধার অভিযানের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে আজ বৃহস্পতিবার। স্থানীয় জনবলের মাধ্যমে উদ্ধার অভিযান চালানো সক্ষম না হলে জাতীয়ভাবে অভিজ্ঞদের সহযোগিতা চাওয়া হবে। প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর অভিজ্ঞ দলকেও ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছেন তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হামিদুর রহমান। প্রয়োজনে স্বাস্থ্য বিভাগের অভিজ্ঞদের সহযোগিতাও নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। খবর বিডিনিউজের।
গতকাল বিকালে কারখানাটি পরিদর্শনে আসেন আট সদস্যের কমিটি। কমিটির সদস্য হিসেবে ফায়ার সার্ভিস, জেলা পুলিশ, উপজেলা প্রশাসন, কলকারখানা অধিদপ্তর, গণপূর্ত বিভাগ, তিতাস গ্যাস ও পল্লী বিদ্যুতের প্রতিনিধিরা ছিলেন। তারা কারখানা কর্তৃপক্ষ, প্রত্যক্ষদর্শী, নিখোঁজদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে কমিটির প্রধান হামিদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ২৫ অগাস্ট কিছু অনুপ্রবেশকারী কারখানাটিতে ঢুকে লুটপাট চালায়। তারা ভবনটির বিভিন্ন তলায় ছড়িয়ে পড়ে। রাতের কোনো একটা সময় ভবনটি নিচতলায় আগুন দেওয়া হয়। তখন অনেকে ভবনটিতে আটকা পড়েন, যারা মারা গেছেন বলে দাবি করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, কমিটির লোকজনকে নিয়ে প্রাথমিকভাবে আজ (বুধবার) পরিদর্শন করেছি। ভবনটির ভেতরে কোনো কাজ চালাতে পারবেন কিনা তা টেকনিক্যাল পারসনরা আমাদের মতামত দিবেন। যদি লোকালি ওনারা না পারেন তাহলে ন্যাশনালি আরও অত্যাধুনিক ইকুইপমেন্ট ব্যবহার করার জন্য সুপারিশ করবো। নিখোঁজদের ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তালিকা করা হয়েছে জানালেও কতজন তালিকাভুক্ত হয়েছেন সে ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা জানাননি তিনি। হামিদুর বলেন, যে ব্যক্তি এসে বলছেন যে, তার স্বজন নিখোঁজ আছেন–তাদের নাম–ঠিকানা আমরা লিপিবদ্ধ করছি। আমরা প্রকৃত সংখ্যা বলতে পারছি না। তবে আগুনের সময় ভবনটিতে শতাধিক ব্যক্তি ছিলেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। যদিও নির্দিষ্ট কোনো প্রুফ আমরা পাইনি। কিন্তু এখানে একজন মানুষ থেকে থাকলেও সেটি গুরুত্ব সহকারে নেব। আমাদের মূল চেষ্টাটা হল ভেতরের অবস্থাটা কী তা দেখা। ফায়ার সার্ভিসের ড্রোন, বড় মই (টিটিএল) দিয়ে ভবনের ভেতরে একাধিকবার অনুসন্ধান চালিয়েছে। ভবনটির চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ তলা পর্যন্ত মেঝে ধসে পড়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো মরদেহের সন্ধান মেলেনি বলে জানান তদন্ত কমিটির প্রধান। এখানে যেহেতু অনেক বেশি ক্যামিকেল পুড়েছে, সুতরাং কোনো মানুষ যদি আদৌ থেকেও থাকে তা অক্ষত অবস্থায় পাওয়ার সম্ভাবনা তেমন নেই। কেননা অন্তত ২২ ঘণ্টা টানা আগুন জ্বলেছে। যেখানে তিন–চার ঘণ্টার মধ্যেই একটা মানুষের দেহ পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়ার কথা। এদিকে, গতকাল সন্ধ্যা ৭টার দিকে ভবনটিতে আবারও আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপ–সহকারী পরিচালক আব্দুল মন্নান বলেন, কিছুটা ফ্লেইম এখনো রয়েছে। কারণ, সব তো প্ল্যাস্টিক আর রাবার। এগুলো গলে গলে পড়ে আবার উত্তাপ থেকে আগুন ধরে যায়। তবে, এ আগুন ছড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। আমরা কাজ করছি।