মি. ডিপেন্ডেবল খ্যাত মুশফিকুর রহিম। তার ব্যাট বহুবার পথ দেখিয়েছে বাংলদেশকে। গতকালও রাওয়ালপিন্ডিতে তেমন একটি দিন গেছে। দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে একের পর এক মাইলফলক ছুঁয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন মুশফিকুর রহিম। একবার জীবনও পেলেন। মনে হচ্ছিল, তার এই ইনিংস যেন থামবেই না। কিন্তু হুট করেই একটু ভুল করে বসলেন। ডাবল সেঞ্চুরির সুবাস পেয়েও তাই হারিয়ে ফেললেন। অসাধারণ ইনিংসটির সমাপ্তি হলো আফসোসকে সঙ্গী করে।
পাকিস্তানের বিপক্ষে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের চতুর্থ দিনের শেষ সেশনে ১৯১ রান করে আউট হন মুশফিক। তিনটি ডাবল সেঞ্চুরি তার আছে আগে থেকেই। বাংলাদেশের হয়ে একাধিক দ্বিশতক নেই আর কারও। চতুর্থটিরও খুব কাছে পৌঁছে গিয়েছিলেন। কিন্তু শেষের দূরত্বটুকু পেরোতে পারলেন না। ৫৫ রান নিয়ে গতকাল শনিবার দিনের খেলা শুরু করেন মুশফিক। এরপর একেকটি মাইলফলক পেরিয়ে যান আর ধরা দেয় দারুণ সব অর্জন। বাংলাদেশের হয়ে দেশের বাইরে টেস্ট সেঞ্চুরির সংখ্যায় তিনি (৫টি) পেছনে ফেলেন তামিম ইকবালের চার সেঞ্চুরিকে। পরে ১৪০ রানের সময় দেশের বাইরে সবচেয়ে বেশি টেস্ট রানের রেকর্ডেও তিনি পেছনে ফেলেন তামিমকে। দ্বিতীয় সেশনে ধরা দেয় জুটির রেকর্ড। মেহেদী হাসান মিরাজকে নিয়ে গড়েন বাংলাদেশের হয়ে সপ্তম উইকেটে সেরা জুটি। পেছনে পড়ে যায় ২০১০ সালে সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহর গড়া ১৪৫ রানের রেকর্ড।
এই পথচলায় দেড়শ রানও পূরণ হয় তার। বাংলাদেশের হয়ে তিনি টেস্টে দেড়শ ছুঁলেন ষষ্ঠবার। দুইয়ে থাকা মোমিনুল হক পেরেছেন তিনবার। ১৫০ রানে একবার জীবনও পান মুশফিক। সালমান আলি আঘার বলে লেগ স্লিপে ক্যাচ নিতে পারেননি বাবর আজম। এরপর ক্লান্ত পাকিস্তানি বোলারদের আরও হতাশ করে ডাবল সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে যান। কিন্তু আচমকা মনোযোগে একটু চিড় ধরে। স্টাম্পের একটু বাইরের বলে কাট করার চেষ্টা করেন। একটু বাড়তি লাফিয়ে মুশফিকের ব্যাটের কানা ছুঁয়ে বল আশ্রয় নেয় কিপারের গ্লাভসে। থেমে যায় ৩৪১ বলের ইনিংস। তাতে চার ছিল ২২টি, ছক্কা ১টি। বাংলাদেশের হয়ে ১৯০ ছুঁয়েও ডাবল সেঞ্চুরিতে যেতে না পারার আক্ষেপ আগে ছিল কেবল মোহাম্মদ আশরাফুলের। ২০১৩ সালে শ্রীলংকার বিপক্ষে গলে তিনি আউট হয়েছিলেন ১৯০ রানে। মুশফিক এই ইনিংসে ক্রিজে ছিলেন ৫১৫ মিনিট। বাংলাদেশের হয়ে এক ইনিংসে ৫০০ মিনিট ব্যাট করার পঞ্চম নজির এটি। এর মধ্যে মুশফিকই করলেন তিনবার। ৫৮৯ মিনিট ব্যাটিংয়ের রেকর্ড তার। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২১৯ রানের অপরাজিত ইনিংসটি খেলেছিলেন তিনি ২০১৮ সালে মিরপুরে। পরে ২০২২ সালে শ্রীলংকার বিপক্ষে মিরপুরে ১৭৫ রানের অপরাজিত ইনিংসে ব্যাট করেছিলেন ৫২৭ মিনিট। এছাড়া অভিষেক টেস্টে ১৪৫ রানের ইনিংস খেলতে আমিনুল ইসলাম ব্যাট করেছিলেন ৫৩৫ মিনিট, ২০২১ সালে শ্রীলংকার বিপক্ষে ১৬৩ রানের ইনিংসে নাজমুল হোসেন শান্ত ব্যাট করেছিলেন ৫৩৩ মিনিট। কিপারের গ্লাভসে বল যেতেই মাথা নুইয়ে যায় মুশফিকের। হতাশায় ক্রিজে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকেন কিছুক্ষণ। ফেরার পথে আকাশে তাকিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন আবার। ড্রেসিং রুমে ফেরার পর অবশ্য গোটা দল দাঁড়িয়ে অভিনন্দন জানায় তাকে। অভিবাদন পান তিনি গ্যালারির দর্শকদের কাছ থেকেও।