ঈদের ছুটিতে দেশের প্রধান অবকাশযাপন কেন্দ্র কক্সবাজার এখন পর্যটকে টইটম্বুর। ঈদের পরদিন থেকে কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল নামলেও গত ১৩ ও ১৪ এপ্রিল ছিল উপচে পড়া ভিড়। হোটেলগুলো ছিল হাউসফুল।
এ সময় হাজার হাজার পর্যটক হোটেলে কক্ষ না পেয়ে রাস্তার ধারে অথবা সৈকতেই রাত কাটালেও গতকাল সোমবার ঈদের ছুটি শেষে অফিস–আদালত খোলার দিনে কক্সবাজারে পর্যটকের চাপ কিছুটা কমেছে। এরপরও কক্সবাজারে এখন লক্ষাধিক পর্যটক অবস্থান করছেন বলে জানান হোটেল মালিকরা। আগামী শনিবার পর্যন্ত কক্সবাজারে পর্যটকদের এ চাপ থাকবে বলে হোটেল মালিকদের ধারণা। তাদের মতে, ঈদের টানা ছুটি শেষে গতকাল সোমবার অফিস–আদালত খুললেও এখনও সর্বত্র ঈদের আমেজ বিরাজ করছে। কর্মব্যস্ত মানুষ একটু বুক ভরে নিশ্বাস নিতে এখনও সপরিবারে অথবা দল বেধে বন্ধু–বান্ধব নিয়ে ছুটিতে আসছে সাগরপাড়ের শহরে।
হোটেল মালিকরা জানান, প্রতিবছর দুই ঈদ এবং থার্টিফার্স্টের ছুটিতে কক্সবাজারে সর্বোচ্চ সংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটে। এ সময় হোটেল–মোটেলে শতভাগ রুম বুকিং থাকে। বর্তমানে কক্সবাজার শহরের ৫ শতাধিক আবাসিক হোটেল ও কটেজে প্রায় দেড় লাখ পর্যটকের রাতযাপনের সুবিধা রয়েছে।
বাংলাদেশ ট্যুরিজম সার্ভিসেস এসোসিয়েশন কক্সবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার হোটেল–মোটেল–গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জানান, এবারের ঈদের ছুটিতে সমিতির মালিকানাধীন মধ্যম মানের তারকাবিহীন হোটেলগুলোতে ৪০% থেকে ৫০% ভাগ এবং তারকা হোটেলগুলোতে ৫০% থেকে ৬০% ভাগ কক্ষ আগাম বুকিং হলেও এবারের ঈদের ছুটিতে প্রত্যাশিতভাবেই রেকর্ড সংখ্যক পর্যটক এসেছে। এরমধ্যে গত ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত ছিল উপচে পড়া ভিড়। হোটেলগুলো ছিল হাউসফুল। তবে ঈদের ছুটি শেষে গতকাল সোমবার অফিস–আদালত খোলায় কক্সবাজারে পর্যটকের চাপ কিছুটা কমেছে। এরপরও হোটেলগুলোতে ৮০% এর বেশি কক্ষ বুকিং হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
সাগরপাড়ের তারকা মানের হোটেল কক্স টুডের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার আবু তালেব দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমাদের হোটেলে ১৩ এপ্রিল ও ১৪ এপ্রিল প্রায় শতভাগ বুকিং রয়েছে। তবে ১৫ এপ্রিল থেকে চাপ কমেছে। এরপরও বলা যায়, ভাল পর্যটক রয়েছে।
আরেক তারকা মানের হোটেল সি–গালের প্রধান নির্বাহী ইমরুল ছিদ্দিকী রুমীও একই তথ্য জানান। তিনি বলেন, ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবের ছুটিতে এবং শীতকালীন পর্যটন মৌসুমের কয়েক মাস মোটামুটি ভাল ব্যবসা করে। কিন্তু বছরের বাকী সময়ে লোকসান গুণতে হয়। এবারের ঈদুল ফিতরের ছুটির সাথে নববর্ষের ছুটি যুক্ত হয়ে টানা সরকারি বন্ধ থাকায় কক্সবাজারের নজিরবিহীন পর্যটকের সমাগম ঘটেছে বলে মনে করেন কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশনের (টোয়াক) সিনিয়র সহ–সভাপতি এমএম সাদেক লাবু।
এবারের ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের চাপের কথা মাথায় রেখে কক্সবাজার–ঢাকা রুটে বিশেষ ট্রেন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রুটে প্রথমবারের মতো স্পেশাল কমিউটার ট্রেন চালু করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। স্পেশাল ট্রেনটি ঈদের পরদিন থেকে টানা ১০ দিন পর্যন্ত অর্থাৎ ২১ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে। এবারের ঈদের ছুটিতে বিমানপথেও পর্যটকদের চাপ থাকায় বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ ঢাকা–কক্সবাজার রুটে ফ্লাইট চলাচল বাড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক গোলাম মোর্তজা হোসেন।
টুরি্যস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের প্রধান ও অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, এবারের ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের জন্য দেশে প্রথমবারের মতো কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ইন্টারকম ও ইমার্জেন্সি বাটন স্থাপন করেছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। যার মাধ্যমে পর্যটকরা কোনো সমস্যায় পড়লে তৎক্ষণিক আমাদের অভিযোগ জানাতে পারবেন। তিনি বলেন, এবারের ঈদের ছুটিতে কক্সবাজারের রাস্তাঘাটে এবং পর্যটন স্পটসমূহে ট্যুরিস্ট পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া শহরের কলাতলী থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার সৈকতে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা পুলিশী নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। শহর স্পট সমূহে পুলিশী টহল বাড়ানো হয়েছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, কক্সবাজারে পর্যটকেরা যাতে হয়রানির শিকার না হয় তা নিশ্চিত করতে পুলিশের পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের বিচকর্মীরা দায়িত্ব পালন করছে। দুইজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পর্যটন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতও সক্রিয় রয়েছে।
ট্যুর অপারেটররা জানান, এবারের ঈদের ছুটিতে সেন্টমার্টিন যাওয়ার সুযোগ না থাকায় পর্যটকেরা কক্সবাজার শহরের সমুদ্র সৈকত, বার্মিজ মার্কেট, শুটকীপল্লী, শহরতলীর দরিয়ানগর, হিমছড়ি, ইনানী, পাটুয়ারটেক ও টেকনাফ সমুদ্র সৈকত ছাড়াও জাহাজে এবং স্পিডবোটে সোনাদিয়া দ্বীপে ভ্রমণে যাচ্ছেন। আর কেউ কেউ ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, রামু বৌদ্ধ মন্দির ও মহেশখালী আদিনাথ মন্দির পরিদর্শনে যান। পাশাপাশি ঘুরতে যান কক্সবাজারের পাশ্ববর্তী পার্বত্য বান্দরবান জেলার বিভিন্ন পর্যটন স্পটে ভ্রমণে।