সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে চায়। ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বলতে বোঝায় প্রযুক্তিনির্ভর নির্মল ও স্বচ্ছ তথা নাগরিক হয়রানিবিহীন রাষ্ট্র বিনির্মাণ প্রক্রিয়া, যেখানে ভোগান্তি ছাড়া স্বাভাবিকভাবে প্রত্যেক নাগরিক অধিকারের নিশ্চয়তা পাবে এবং কর্তব্য পালনের সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি হবে। সেই স্মার্ট বাংলাদেশের রূপরেখাকে চার ভাগে ভাগ করে ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট সোসাইটি। আর এ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য প্রয়োজন একটি স্মার্ট প্রজন্ম। একটি আধুনিক, প্রযুক্তিনির্ভর, সুখী, অভিযোজনে সক্ষম বিশ্ব নাগরিক গড়ার জন্য এ প্রজন্মকে তৈরি করতে প্রয়োজন শিক্ষার আধুনিকায়ন। আক্ষরিক অর্থে যাই হোক না কেন, শিক্ষাক্রম শব্দটি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে এবং যুগের পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় শিক্ষাক্রমের ধারণা ক্রমাগত বিবর্তিত হচ্ছে। তাই শিক্ষাক্রমের সর্বজন স্বীকৃত কোনো একক সংজ্ঞা বা ধারণার উদ্ভব হয়নি। প্রাচীনকালে মানুষের বেঁচে থাকার দক্ষতা অর্জনই ছিল শিক্ষার প্রতিপাদ্য বিষয়। ফলে তখনকার অনানুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষাক্রমের ধারণা বাস্তবরূপ পেতে থাকে এবং স্কটল্যান্ডে সপ্তদশ শতাব্দীতে তা প্রচলিত ছিল। শিক্ষাক্রমের মূল ফোকাস ছিল শিশুর মানসিক এবং জ্ঞানের বিকাশ। এ জন্য শিক্ষাক্রমে বংশানুক্রমিক সুসংবদ্ধ জ্ঞান ও মানসিক শৃঙ্খলা অর্জনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হতো। প্রাচীনপন্থী শিক্ষাবিদদেরও ধারণা ছিল, শিশুর সুষ্ঠু মানসিক বিকাশ ঘটাতে হলে স্কুলে শিক্ষাক্রমে কতকগুলো অপরিহার্য বিষয় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এগুলো হলো মাতৃভাষা, গণিত, বিজ্ঞান, ইতিহাস, দর্শন, পশ্চিমা ও দেশীয় ভাবধারার বিষয়। শিক্ষাক্রমের পুরোনো ধারণার অবসান ঘটিয়ে একটি নতুন ধারণা ‘শিক্ষাক্রম হলো শিক্ষকের পরিচালনায় শিক্ষার্থীর অর্জিত সকল অভিজ্ঞতা’ প্রস্তাব করেন। সে সময়ের অন্যান্য শিক্ষাক্রম বিশেষজ্ঞরা শিক্ষাক্রমের এ ধারণাকে সমর্থন করেন। এভাবে শিক্ষাক্রম তার সংকীর্ণ ধারণার গণ্ডি পার হয়ে ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হতে শুরু করে এবং শিক্ষাক্রম কেবল পাঠ্যবিষয়ের পরিবর্তে স্কুল নিয়ন্ত্রিত সব শিখন–অভিজ্ঞতার সমষ্টিরূপে পরিগণিত হতে থাকে। শিক্ষাক্রম হলো শিক্ষার লক্ষ্য অর্জনের জন্য স্কুল কর্তৃক পরিকল্পিত ও পরিচালিত শিক্ষার্থীর সব শিখন অভিজ্ঞতা।
শিক্ষাক্রম পরিবর্তনের জন্য বিবেচ্য বিষয়গুলো হলো শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক ও আনন্দময় পড়াশোনার পরিবেশ সৃষ্টি; বিষয় এবং পাঠ্যপুস্তকের বোঝা ও চাপ কমিয়ে দক্ষতা ও যোগ্যতায় গুরুত্ব আরোপ;
মুখস্থ নির্ভরতার পরিবর্তে অভিজ্ঞতা ও কার্যক্রমভিত্তিক শিখনে অগ্রাধিকার প্রদান; খেলাধুলা ও সৃজনশীল কার্যক্রমের মাধ্যমে শিখনের ওপর গুরুত্ব প্রদান;
জাতীয় শিক্ষাক্রম–২০২১ এর রূপকল্প: মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত দেশপ্রেমী, উৎপাদনমুখী, অভিযোজনে সক্ষম সুখী ও বৈশ্বিক নাগরিক গড়ে তোলা। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য দরকার স্মার্ট জনগোষ্ঠী। শিশুকাল থেকেই যেন তারা তা শিখতে পারে সেই ব্যবস্থা করা। আজকের শিশুরাইতো হবে আগামী দিনের স্মার্ট জনগোষ্ঠী। যারা এদেশটাকে গড়ে তুলবে।
শিশুদের চোখ সমৃদ্ধির স্বপ্ন রঙিন’। কবি সুকান্তের কবিতার ভাষায়-‘যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ, প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল, এ বিশ্বকে শিশুর বাসযোগ্য করে তৈরি করাই হবে আমাদের সবার লক্ষ্য।