‘বিপদগ্রস্ত’ লালঘাড় পেঙ্গা

সমির মল্লিক, খাগড়াছড়ি | সোমবার , ৯ অক্টোবর, ২০২৩ at ৬:২৫ পূর্বাহ্ণ

প্রকৃতিতে শরৎকাল চললেও প্রায় প্রতিদিন বৃষ্টি নামছে। বৃষ্টির কারণে দূরে কোনো জঙ্গলে গিয়ে পাখির ছবি তোলার সুযোগ নেই। বাড়ির আশেপাশের জঙ্গলেই কয়েকদিন ধরে লালঘাড় পেঙ্গার দল ঘুরে বেড়াচ্ছে। তবে চঞ্চল প্রকৃতির হওয়ায় পেঙ্গার ছবি তোলা কষ্টসাধ্য। তবে শুক্রবার বিকালে একসাথে তিন জোড়া লালঘাড় পেঙ্গার দলকে ক্যামেরাবন্দি করা গেছে।

বাংলাদেশে প্রায় ৭শ প্রজাতির পাখির দেখা মিলে। এর মধ্যে অধিকাংশ পাখি পার্বত্য চট্টগ্রামের চিরসবুজ বনেও দেখা যায়। তবে বনের পরিমাণ কমে যাওয়া এবং গাছপালা ধ্বংস করার কারণে দিন দিন কমছে বন্যপ্রাণীর সংখ্যা। ধ্বংস হচ্ছে আবাসস্থল। লালঘাড় পেঙ্গা আমাদের দেশের স্থানীয় প্রজাতির পাখি। পেঙ্গার ইংরেজি নাম Rufous-necked Laughingthrush। বৈজ্ঞানিক নাম Garrulax ruficollis। স্থানীয় হলেও এদের মাঝে মাঝে দেখা যায়। তবে এরা একা ঘুরে বেড়ায় না। ভিতু প্রকৃতির এই পাখি দলবদ্ধভাবে ঘুরে বেড়ায়। এদের গলার স্বর কর্কশ। বাঁশঝাড় কিংবা ঝোপজঙ্গল ছাড়াও এদের পাহাড়ি লোকালয় দেখা যায়। পাহাড়ি টিলার ঝোপজঙ্গল এদের বেশি পছন্দ।

খাগড়াছড়ির শৌখিন আলোকচিত্রী সবুজ চাকমা জানান, লালঘাড় পেঙ্গার আবাসস্থল পাহাড়ি অরণ্য। এছাড়া লোকালয়েও চলে আসে এবং এরা বেশিরভাগ সময় জোড়ায় জোড়ায় থাকে। অন্তুত ১০১২টি পাখি একসঙ্গে থাকে। এরা দ্রুতগতিতে ছুটতে পারে। এ পাখিকে বাঁশঝাড় কিংবা ঝোপজঙ্গলে বেশি দেখা যায়। লালঘাড় পেঙ্গা লম্বায় প্রায় ২৩ সেন্টিমিটার। আকারে শালিকের মতো। এদের দেহ লালচে ও বাদামি। পেঙ্গার মাথা কালচে ধূসর। কপাল, গলা, কান, বুক ও গাল কালো। ঘাড় লালচে পট্টি। ঘাড়ের রঙের কারণে এদের লালঘাড় পেঙ্গা বলে। বাদামি রঙের চোখ। ওজন ৫১৭৩ গ্রাম। বুকের নিচ থেকে পেট পর্যন্ত গাঢ় বাদামি। লেজের তলা লাল। ঠোঁট কালো। পা ধূসর কালো। এদের প্রজননকাল মার্চ থেকে আগস্ট। মাটি থেকে অন্তত দেড়দুই মিটার উচ্চতায় ঝোপের উপর বাসা বাঁধে। এরা সাধারণত বাঁশপাতা, ঘাস, শিকড়, আগাছা ইত্যাদি দিয়ে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ৩৪টি। প্রায় দুই সপ্তাহ পড়ে ডিম ফুটে বাচ্চা হয়। এরা পোকামাকড় ও কীটপতঙ্গ খায়।

বাংলাদেশের পাখির ফিল্ডগাইড বইয়ের তথ্য অনুযায়ী, লালঘাড় পেঙ্গা কেবল চট্টগ্রাম ও সিলেটে বিভাগের চিরসবুজ বনে দেখা যায়। তবে বেশ কয়েকজন বন্যপ্রাণী বিষয়ক আলোকচিত্রী জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ ছাড়াও গাজীপুর, কুড়িগ্রামসহ দেশের একাধিক স্থানে এদের দেখা মিলে। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার ও চীনে লালঘাড় পেঙ্গা দেখা যায়। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থা (আইইউসিএন) তালিকা অনুযায়ী, পেঙ্গা ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণে এই প্রজাতিটি সংরক্ষণ করা হয়নি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাঁশখালীতে পুকুরে ডুবে নিখোঁজের ১৪ ঘণ্টা পর বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার
পরবর্তী নিবন্ধনগরীর বাসায় বিনাজুরি ইউপির মহিলা মেম্বারের ঝুলন্ত লাশ