শৃঙ্খলাবিরোধী কার্যক্রম, চবির ১৮ শিক্ষার্থী বহিষ্কার

এরমধ্যে ১৭ জনই ছাত্রলীগের ডিসিপ্লিনারি কমিটির তিন সুপারিশ

চবি প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ১২ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৫:৪২ পূর্বাহ্ণ

ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় আবাসিক হল ভাঙচুর, সাংবাদিক হেনস্তা ও ক্যাম্পাস অস্থিতিশীলসহ বিভিন্ন শৃঙ্খলাবিরোধী কার্যক্রমে জড়িত থাকার দায়ে ছয় ঘটনায় ১৮ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) কর্তৃপক্ষ। বহিষ্কার আদেশ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বহিষ্কৃতরা একাডেমিক সকল কার্যক্রম ও হলে অবস্থান থেকে বিরত থাকবে। বহিষ্কৃতদের মধ্যে ১৭ জনই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এদের অনেকে শাখা ছাত্রলীগের পদেও রয়েছে। এছাড়া সাংবাদিকদের কক্ষে গিয়ে হুমকিসহ নানা ঘটনায় বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মীকে সতর্ক করেছে প্রশাসন। পাশাপাশি তিনটি সুপারিশ দিয়েছে ডিসিপ্লিনারি কমিটি। গতকাল বুধবার বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন চবি প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, গত ৯ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব রেসিডেন্স, হেলথ ও ডিসিপ্লিনারি কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বহিষ্কারাদেশ ৯ জানুয়ারি থেকেই কার্যকর হবে।

বহিষ্কারের নোটিশে উল্লেখ করা হয়, ২০২২ সালের ১১ আগস্ট খালেদা জিয়া হলে ছাত্রীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনায় ইংরেজি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের তাসফিয়া জাসারাত নোলককে দেড় বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া ২৬ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় এ এফ রহমান হলে কর্মরত এক সাংবাদিককে শারীরিকভাবে হেনস্তার ঘটনায় দুই ছাত্রলীগ কর্মীকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃতরা হলেন, লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের আরশিল আজিম নিলয় ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শোয়েব মোহাম্মদ আতিক।

গত বছরের ৮ অক্টোবর আলাওল হলের প্রভোস্ট কক্ষ ভাঙচুরের ঘটনায় সমাজতত্ত্ব বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের হাসান মাহমুদকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। একই ঘটনায় ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী শহিদুল ইসলামকে ২ বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া গত ২ ডিসেম্বর চবির এ এফ রহমান হলে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে দফায় দফায় সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়া, হলের কক্ষ ভাংচুরসহ মূল্যবান সম্পদ নষ্ট করা ও কর্তব্যরত সাংবাদিকদের ওপর হামলার চেষ্টা ও হুমকি প্রদর্শনের ঘটনায় ছয়জনকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃতরা হলেন, সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের অনিক দাস, ইসলামের ইতিহাস বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের তনয় কান্তি সরকার, একই শিক্ষাবর্ষের অর্থনীতি বিভাগের লাবিব সাঈদ ফাইয়াজ, ইতিহাস বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের সিফাতুল ইসলাম, একই বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের মো. মোবারক হোসেন ও একই সেশনের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের নাহিদুল ইসলাম।

চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি দিবাগত রাত হতে ৬ জানুয়ারি গভীর রাত পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সোহরাওয়ার্দী হল ও শাহজালাল হল সংলগ্ন এলাকায় কিছু উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থী দ্বারা পরিকল্পিতভাবে সংলগ্ন এলাকায় বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেশীয় অস্ত্রসহ সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়া, বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন দোকানপাট ভাঙচুর ও আইন-শৃঙ্খলার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের কারণে আরও ছয়জনকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করেছে প্রশাসন।

এ ঘটনায় বহিষ্কৃতরা হলেন, ফাইন্যান্স বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আমিরুল হক চৌধুরী, বাংলা বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. সাখাওয়াত হোসেন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসেন ইলিয়াস, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ ফাহিম, ইতিহাস বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. ইকরামূল হক, দর্শন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নয়ন দেবনাথ।

শাটল ট্রেনে নাশকতার পরিকল্পনা, বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক সুনাম বিনষ্টের দায়ে আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের মো. জোবায়ের হোসেনকে দুই বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

ডিসিপ্লিনারি কমিটির তিন সুপারিশ : আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় গোপন তথ্যের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থানকারী যেকোনো মাদকাসক্ত ব্যক্তি, ক্যাম্পাস ও সংলগ্ন সম্ভাব্য মাদক বিক্রির স্পট এবং মাদক সেবনের স্থানসমূহে নিয়মিত অভিযান পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকায় অবস্থানকারী ছাত্রত্ববিহীন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় এমন ব্যক্তিদের ক্যাম্পাস ত্যাগ করার বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা গ্রহণ করা। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত একাধিক ঘটনায় দেখা যায়, কিছু শিক্ষার্থী কর্তৃক শিক্ষক/কর্মকর্তা/কর্মচারীদের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও অসদাচরণ, সন্ধ্যা পরবর্তী সংঘর্ষে জড়ানো, অনিয়ন্ত্রিত আগ্রাসন, বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে অন্ধকারাচ্ছন্ন করাসহ সামগ্রিক বিষয়টি ‘ওভার সুপেরিয়রিটিতে’ ভোগার শামিল। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেওয়া।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচবি ছাত্রলীগকে কেন্দ্রের শোকজ
পরবর্তী নিবন্ধ১০ বছর ধরে শিক্ষক প্রতিনিধি নেই সিন্ডিকেটে নির্বাচন চেয়ে বারবার চিঠি