কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ ঠেকাতে হাত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা গুরুত্বপূর্ণ বলে স্বীকৃত। আর এ হাত ধোয়াকে কেন্দ্র করেই নতুন নতুন প্রকল্প নেওয়ার আবদার করা হচ্ছে। এর আগে ‘মানবসম্পদ উন্নয়নে গ্রামীণ পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধি’ প্রকল্পে সাধারণ মানুষকে হাত ধোয়া শেখানোর জন্য প্রচারণা চালাতে ৪০ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছিল। করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে বিশেষত হাত ধোয়া এবং আচরণগত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার মাধ্যমে টেকসই স্বাস্থ্যাভ্যাস গড়ে তোলার জন্য আবারও নেওয়া হচ্ছে ৩২৬ কোটি ৫৯ লাখ ২০ হাজার টাকার প্রকল্প। এ মোটা অংকের টাকার মধ্যে ৪০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা দেবে সরকার। আর বাকি ২৮৬ কোটি ১১ লাখ টাকা ঋণ হিসেবে দেবে উন্নয়ন সহযোগীরা। মোটা অংকের এ টাকার আবদার করা হয়েছে ‘কোভিড-১৯ মোকাবিলায় হাইজিন প্রকল্প’-এর জন্য। প্রকল্পের আওতায় লক্ষ্য হলো- প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে বিশেষত স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহে বিভিন্ন ধরনের হাত ধোয়ার বেসিন স্থাপনের মাধ্যমে কমিউনিটি পর্যায়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও সংক্রামক রোগের সংক্রমণ কমিয়ে আনা। স্বাস্থ্যবিধি চর্চার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে গণমাধ্যমের মাধ্যমে সামাজিক সচেতনতা তৈরি করা। অথচ গত ২২ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ‘গ্রামীণ পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধি’ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা। প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ৪২৫টি বেসিন সেট স্থাপন করবে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। এগুলো স্থাপনে মোট ২৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। এছাড়া সাধারণ মানুষকে হাত ধোয়া শেখানোর জন্য প্রচারণা চালাতে ৪০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। কিন্তু জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (ডিপিএইচই) ফের একই ধরনের প্রকল্পের প্রস্তাব করেছে পরিকল্পনা কমিশনে। তবে প্রকল্পটি এখনই একনেক সভায় উপস্থাপন করা হবে না, জানিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। খবর বাংলানিউজের।
‘কোভিড-১৯ মোকাবিলায় হাইজিন প্রকল্প’-এর প্রস্তাব ২০২০ সালের জুলাই মাসে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায় ডিপিএইচই। ইতোমধ্যে প্রায় ছয় মাস অতিবাহিত হয়েছে। প্রকল্পের অনেক কম্পোনেন্ট পরিবর্তন হয়েছে। এর মধ্যে একই ধরনের একটি প্রকল্প একনেক সভায় অনুমোদন পেয়েছে। তাই কমিশন চাইছে, নতুন করে প্রকল্পটি তদারকি করেই একনেক সভায় তুলতে।
পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মো. মামুন-আল-রশীদ বলেন, ডিপিএইচই ছয় মাস আগে প্রকল্পের প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে। কোভিড-১৯ নিয়ে ছয় মাস আগের চিত্র ও বর্তমানের চিত্র এক নয়। আমরা প্রকল্পটি রিভিজিট করবো। প্রকল্পের ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) পুনর্গঠিত হতে পারে। প্রকল্পের প্রয়োজন আছে কি না? কোথাও পরিবর্তন হবে কিনা এসব দেখেই চিন্তা করবো প্রকল্পের অনুমোদন দেবো কি দেবো না। তবে এখনই প্রকল্পটি একনেক সভায় উঠছে না। ’
ডিপিএইচই সূত্র জানায়, প্রকল্পটি চলতি সময় থেকে ২০২২ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে- পানি সরবরাহসহ বিভিন্ন হাসপাতাল, বস্তি, কমিউনিটি ক্লিনিক ও জনসমাগমপূর্ণ এলাকায় হাত ধোয়ার সুবিধা স্থাপন করা। প্রকল্পের আওতায় ১২ হাজার ৪০০টি হাত ধোয়ার সুবিধা স্থাপন করা হবে। ১২ হাজার ৪০০টি স্থানে পানি সরবরাহ ব্যতিত হাত ধোয়ার সুবিধা স্থাপন করা হবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে হাত ধোয়ার জন্য বহনযোগ্য ৮০০টি ইউনিট সরবরাহ করা হবে। প্রকল্পের আওতায় হাইজিন কিট, ব্লিচিং পাউডার, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হ্যান্ড ওয়াশ, পানি পরিশোধন ট্যাবলেট ইত্যাদি কেনা ও সরবরাহ করা হবে। সংশ্লিষ্ট জনবলের জন্য পিপিই, গামবুট, মাস্ক ইত্যাদি ক্রয় ও সরবরাহ করা হবে। কোভিড-১৯ মহামারির মতো ব্যাধি মোকাবিলায় প্রস্তাবিত প্রকল্পের জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় মাঠ পর্যায়ের তথ্য সংগ্রহপূর্বক দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির কাছ থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদনের আলোকে প্রস্তাবিত প্রকল্পের উপর একটি বিস্তারিত সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়েছে বলে জানায় ডিপিএইচই।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী (পরিকল্পনা বিভাগ) আরিফ আনোয়ার খান বাংলানিউজকে বলেন, প্রকল্পের প্রস্তাবনা পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। তবে এই বিষয়ে বিস্তারিত বলবেন প্রধান প্রকৌশলী স্যার (মো. সাইফুর রহমান)।