হাসান আকবর
আগামী একশ’ বছরের বন্দর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে যাওয়া চট্টগ্রাম বন্দরের বে টার্মিনালের জমি সমস্যার সমাধান হতে চলেছে। মাত্র ৩ কোটি ৩ টাকায় বে টার্মিনালের জন্য ৫০০ একর জমি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বরাবরে ভূমি বরাদ্দ দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের নিকট এই নির্দেশনার চিঠি এসে পৌঁছেছে।
চট্টগ্রাম বন্দর এবং জেলা প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, দেশের আগামী একশ’ বছরের বন্দর হিসেবে বে টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। হালিশহর উপকূলে সাগরে জেগে উঠা একটি চর এবং চ্যানেলকে কেন্দ্র করে সম্ভাবনাময় এই প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। বেশ আগে গ্রহণ করা প্রকল্পটির জন্য প্রায় ৯শ’ একর ভূমি হুকুমদখলের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। সরকারি খাস এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন এই ভূমির সাথে সাগর ভরাট করে তোলা মোট আড়াই হাজার একর ভূমির ওপর গড়ে তোলা হবে বে টার্মিনালের চারটি পৃথক টার্মিনাল। কিন্তু প্রকল্পটি শুরু থেকে ভূমি নিয়ে জটিলতায় পড়ে। ব্যক্তি মালিকানাধীন ৬৮ একর ভূমি ২০১৬ সালের দিকে হুকুমদখল করা হলেও সরকারি খাস জায়গার কোন সুরাহা হচ্ছিল না। মৌজাভ্যালুর তিনগুণ দাম দিয়ে সরকারের কাছ থেকে ভূমি কিনতে হলে কমপক্ষে ১০ হাজার কোটি টাকা দরকার।
এতে প্রকল্পব্যয় এত বেশি হয়ে যাবে যে সেটি বাস্তবায়ন করা অসম্ভব হয়ে উঠবে। তাই চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ শুরু থেকে সরকারের কাছ থেকে বিনে মূল্যে ভূমি পাওয়ার চেষ্টা করছিল। সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এই ব্যাপারে বেশ সহায়তা করেন। কিন্তু বিনা মূল্যে সরকারি ভূমি বরাদ্দ দেয়ার ব্যাপারটি প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ারাধীন হওয়ায় দিনের পর দিন ফাইল চালাচালি চলছিল। একটির পর একটি ধাপ পার হতে সময় চলে যাচ্ছিল বছরের পর বছর। এতে করে পুরো প্রকল্পটি থমকে গিয়েছিল। মুখ থুবড়ে পড়েছিল বে টার্মিনালের কার্যক্রম। অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নির্দেশনায় বে টার্মিনালের জমি সংকট সুরাহা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ তিন ধাপে প্রয়োজনীয় ভূমি পাবে। প্রথম ধাপে ৫০০ একর অকৃষি খাসজমি বন্দোবস্ত পায় বন্দর কর্তৃপক্ষ। বিভিন্ন মামলায় ঝুলে থাকা দক্ষিণ কাট্টলী মৌজার ১৮৮ একর জমি অধিগ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। এছাড়া কাজীর গরুর মতো কাগজে থাকা সংরক্ষিত বনভূমির নামের ২৬৭ একর ভূমিও পাচ্ছে বে টার্মিনাল। কোন বন না থাকায় বনভূমি হিসেবে গেজেটভুক্ত জমি ডি গেজেটভুক্ত করে সরকারের ১ নম্বর খতিয়ানে খাস হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে বে টার্মিনালের নামে বরাদ্দ দেয়ারও প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, বে টার্মিনালের জমির সমস্যার সুরাহা হয়ে গেছে। আমাদেরকে প্রথমে খাস খতিয়ানভুক্ত ৫০০ একর জমি ৩ কোটি ৩ টাকায় বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। পরবর্তীতে আরো দুই ধাপে আমাদেরকে আরো প্রায় ৪৫৫ একর জমি দেয়া হবে। এই ভূমির সাথে সাগরের রিক্লেম ভূমি মিলে বে টার্মিনাল বাস্তবায়িত হবে। তিনি স্বীকার করেন যে, সরকারের এই নিদের্শনার ফলে ঝুলে থাকা বে টার্মিনাল বাস্তবায়ন প্রকল্প পুরোদমে গতিশীল হবে।
উল্লেখ্য, বে টার্মিনাল নির্মিত হলে দেশের বন্দরের সক্ষমতা বহুগুনে বৃদ্ধি পাবে। চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে যেখানে সর্বোচ্চ ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়ানো যায় সেখানে বে টার্মিনালে অনায়াসে ১২ মিটার ড্রাফটের জাহাজ বার্থিং দেয়া যাবে। চট্টগ্রাম বন্দরে যেখানে সর্বোচ্চ ১৯০ মিটার ল্যান্থের জাহাজ ভিড়ানো যায় সেখানে কোন বাঁক না থাকায় বে টার্মিনালে যে কোন ল্যান্থের জাহাজ ভিড়ানো সম্ভব হবে। চট্টগ্রাম বন্দরে শুধু দিনের বেলায় জোয়ারের সময় জাহাজ ভিড়ানো যায়, বে টার্মিনালে রাতে দিনে যে কোন সময় জাহাজ ভিড়ানো সম্ভব হবে। বে টার্মিনাল বিশ্বের শিপিং সেক্টরে চট্টগ্রাম বন্দরের ইমেজ ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলেও কর্নকর্তারা মন্তব্য করেন।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান গতকাল দৈনিক আজাদীকে বলেন, বে টার্মিনালের জমি সংকটের সুরাহা হয়েছে। কিছু আনুষ্ঠানিকতা শেষে অচিরেই আমরা বন্দর কর্তৃপক্ষকে জমি বুঝিয়ে দেবো। স্মরণ করা যেতে পারে যে, প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার তালিকাভুক্ত বে টার্মিনাল প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর প্রকল্পটির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেছিলেন।