মাহে রমজানের সওগাত

মুহম্মদ মাসুম চৌধুরী | বৃহস্পতিবার , ২৮ মার্চ, ২০২৪ at ৫:৪০ পূর্বাহ্ণ

আজ ঐতিহাসিক বদর দিবস। পবিত্র মদিনা নগরী হতে প্রায় ৮০ মাইল দক্ষিণ পশ্চিমে বদর নামক উপত্যকায় ৬২৪ খ্রিস্টাব্দে ১৭ মার্চ, দ্বিতীয় হিজরীর ১৭ রমজান সোমবার কাফের ও মুসলমানদের মধ্যে বদরের যুদ্ধ সংগঠিত হয়। এই যুদ্ধে মুসলমানের সংখ্যা ছিল ৩১৩ জন, কাফেরের সংখ্যা এক হাজারের অধিক। অসম এই যুদ্ধে আল্লাহর অপরিসীম মদদ ছাড়া মুসলমানদের পক্ষে বিজয় অর্জন করা সম্ভব ছিল না। দ্বীন ইসলাম ও কুফরের মধ্যে বদরের যুদ্ধ প্রথম আনুষ্ঠানিক সম্মুখ যুদ্ধ এবং বিজয়।

মক্কার কুরাইশ কাফেরগণ প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হত্যা করতে ব্যর্থ হলে তারা চিন্তা করেছিল জনভূমি ত্যাগের কারণে তিনি দুর্বল হবেন এবং ইসলাম ধর্ম প্রতিষ্ঠিত হতে পারবেনা। কিন্তু পবিত্র নগরী মদিনায় ইসলাম ধর্ম ব্যাপক প্রসারের ফলে তারা বিচলিত হয়ে মদিনার বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি নেয়। সামরিক অভিযানের জন্য অর্থ ও অস্ত্র সংগ্রহের জন্য আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে একটি কাফেলা সিরিয়া পাঠায়। মক্কার কুরাইশ কাফেরগণ যুদ্ধের লক্ষ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে মুসলমান কর্তৃক আবু সুফিয়ান আক্রান্ত হওয়ার গুজব রচনা করে। ফলে বদরের অভিমুখে এক হাজার সেনাবাহিনী আবু জেহেলের নেতৃত্বে যাত্রা করে। কাফেরগণ মুসলমানদের ঈমানী শক্তিকে আমলে না নিয়ে মনে করেছিলেন, যুদ্ধে মুসলমানদের মুহুর্তের মধ্যেই পরাজিত করবে। কিন্তু তাদের মিথ্যা অহমিকা তাসের ঘরের মত ধসে পরে। মুসলমানদেরই বিজয় হয়।

এই যুদ্ধে কুরাইশদের ৭০ জন নিহত এবং ৭০ জন বন্দি হয়। মুসলমানদের ১৪ জন শহীদ হন। তাদের মধ্যে ৬ জন মুহাজির এবং ৮ জন আনসার।

বদরের যুদ্ধের বিজয়ের কারণে মুসলমানদের ঈমানী শক্তি বহুগুণে বৃদ্ধি পায় এবং পরবর্তী যুদ্ধে বিজয়ের পথ সুগম করে। এই যুদ্ধ ইসলাম ধর্ম প্রচার প্রসারে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। জোসেফ হেল বলেন, ‘এ বিজয়ের ফলে মদিনাবাসীরা দলে দলে ইসলামের পতাকাতলে আশ্রয়গ্রহণ করে। নিকলসন বলেন, ‘এই যুদ্ধে বিজয়ের কারণে সকলের দৃষ্টি মহানবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর নিবদ্ধ হয়। ইসলামের উপর আরব জনতার আগ্রহ বৃদ্ধি পায়’।

পি কে হিট্টির মতে, ‘বদরের যুদ্ধ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পার্থিব শক্তির ভিত্তি স্থাপন করে। ইসলামের প্রথম তার সামরিক বিজয়ের সূচনা করে।

অল্পসংখ্যক সৈন্য কিভাবে বিশাল কাফের দলের বিরুদ্ধে বিজয়ী হলো তা এক বিস্মিত ঘটনা। যুদ্ধ জয়ের পর মুসলমানগণ বলাবলি করতে থাকে যে, আল্লাহর অদৃশ্য সাহায্য ছাড়া মুসলমানদের পক্ষে এ বিজয় অর্জিত হয় নি। মুসলমানের পক্ষে অনেক অপরিচিত ব্যক্তিকে যুদ্ধ করতে দেখা গেছে। যার ফলে কাফেরগণ মানসিক দুর্বল হয়ে পড়ে। ইসলামের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়। মদিনার অমুসলিমগণ ইসলামের মহত্ব দেখে মুগ্ধ হয় । উইলিয়াম মুর বলেন, ‘মদিনাবাসীর উপর আর্শীবাদ বর্ষিত হউক, তারা আমাদেরকে উটঘোড়ায় চড়তে দিয়ে নিজেরা হেঁটে চলত। তারা নিজেদের সামান্য রুটিও নিজেরা না খেয়ে আমাদের খেতে দিয়ে নিজেরা খোরমা খেয়ে ক্ষুধা নিবৃত করতো।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিএনপি নেতারা স্ত্রীদের ভারতীয় শাড়ি পোড়াবেন কি না, জানতে চান প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধ৩ কোটি ৩ টাকায় ৫০০ একর জমি পেল চট্টগ্রাম বন্দর