হ্যালোইন উৎসব : মোমের আলোয় জ্বলে উঠবে আমেরিকা!

এমরান হোসাইন | রবিবার , ৩১ অক্টোবর, ২০২১ at ৫:৩৭ পূর্বাহ্ণ

রবিবার হ্যালোইন উৎসবে মেতে উঠবে আমেরিকা। চলছে ঘরেঘরে নানা বর্ণিল আয়োজন। আশপাশের রঙিন উৎসব দেখে- বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত শিশু রায়িদ সিদ্দিকী মায়ের সাথে বায়না ধরেছে পাম্পকিন পাসে (কুমড়া ক্ষেতে) যাবে। মা রোমানা বৃষ্টি ছেলে (রায়িদ)কে নিয়ে সোজা ক্যানসাসের মেজ শহরের পাম্পকিন পাসে। যেখানে হ্যালোইনকে সামনে রেখে পুরো কুমড়া ক্ষেত বর্ণিল সাজে সাজিয়েছে। সারাদিন মজা করেও শিশু রায়িদ যেন ঘরে ফিরতে চায়না।এ যেন গায়ে হলুদ দেয়া ঘোমটা মাথায় নববধূ (কুমড়া ক্ষেত )।
হ্যালোইন আমেরিকার একটি অন্যতম মহাউৎসব। প্রতি বছরের মত এবারও ৩১অক্টোবর সন্ধ্যা-আকাশের আলো-ঝলমলে রাতের তারায় ঘরে-ঘরে মোমের আলোয় জ্বলে উঠবে আমেরিকা। বাঁধভাঙা আনন্দ-উচ্ছ্বাসে শিশু-কিশোর এঘর থেকে ওঘরে ছুটে যাবে। একে-অপরের ঘরের দরজায় “ট্রিক অর ট্রিট” বলে কড়া নাড়বে। এদিকে ছোট-বড় শহরের বাড়ির আঙিনা, স্থানীয় গীর্জা,শপিংমলের সামনে গাঢ় হলদে কুমড়া, হ্যালোইন কষ্টিউমসহ নানা রংয়ের পণ্যসামগ্রী দিয়ে থরেথরে সাজানো হয়েছে। স্কুল -কলেজে ফল-কনসার্টে হ্যালোইনকে স্বাগত জানিয়ে “দি ডারক নাইট “ অনুষ্ঠানের করা হয়েছে।এ দিনকে সামনে রেখে সারা বছর আমেরিকার কৃষকরা কুমড়া চাষ করে থাকেন। কমিউনিটি ভয়েস সহ একাধিক খবরের কাগজ থেকে জানা যায়, এ উৎসবকে ঘিরে প্রতিবছর আমেরিকায় ১.৫ বিলিয়ন পাউন্ড কুমড়া উৎপাদন করা হয়ে থাকে। যার বাজার মূল্য প্রায় ১হাজার কোটি টাকা। ঐতিহ্যের এ উৎসব-হ্যালোইন শুরু হয়েছিল মূলত আয়ারল্যান্ড- স্কটল্যান্ডে। এসব দেশে এই উৎসব ছিল নবান্নের উৎসব। আইরিশ ও স্কটিস লোকসাহিত্যে হ্যালোইনকে বলা হয়েছে- “সুপারন্যাচারাল এনকাউন্টারস। সেসময় মানুষের বিশ্বাস ছিল- শীতের শুরুতে হ্যালোইন সন্ধ্যায় সব মৃত আত্মীয়-স্বজনের আত্মা নেমে আসে পৃথিবীর বুকে। তাই হ্যালোইন ডে’র প্রতিকী হিসেবে বড় বড় কুমড়াকে মানুষের মুখায়ব আকৃতি দেয়া হয়। কুমড়ার মাঝখানে একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে দেয়া হয়। এ দিয়ে বোঝানো হয় -মানুষের আত্মা স্বর্গ-নরকের মাঝামাঝি অবস্থান করছে। সবাই নিজ বাড়ির সামনে ল্যান্টেন ও রঙিন বাতি জ্বালিয়ে রাখেন যেন মৃত আত্মা পথ দেখে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারেন। প্রতিটি বাড়ির সামনে রাখা হয় বড়-বড় মিষ্টি কুমড়া। এর ভেতরে টিমটিম করে বাতি জ্বলতে থাকে আর বাড়ির ভেতরটা ঘুটঘুটে অন্ধকার করে রাখা হয়। অপেক্ষা করা হয় কখন দরজার কড়া নাড়বে ট্রিক অর ট্রিট”। দলবেঁধে ছেলে মেয়েরা একে-অপরের বাসা থেকে সংগ্রহ করে ব্যাগ ভর্তি চকলেট কেন্ডি। অনেকে নিজ বাড়ির আঙিনায় মাকড়শার জাল বিছিয়ে কঙ্কাল টাঙ্গিয়ে ভুতুড়ে একটা পরিবেশ করে রাখেন। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, আমেরিকায় এ উৎসবের ধারা বদলে গিয়ে হ্যালোইনকে স্পিরিট বা গুড সোল বলে থাকেন। অধিকাংশ আমেরিকান বিশ্বাস করেন এ দিনে সব মৃত আত্মাগুলো পৃথিবীর বুকে নেমে আসেন নিকটজনের সান্নিধ্য লাভের আশায়। হ্যালোইন এখন আমেরিকায় মহা উৎসবে পরিণত হয়েছে। (যুক্তরাষ্ট্র থেকে লেখা)

পূর্ববর্তী নিবন্ধবৈদেশিক মুদ্রার আয় বাড়াতে হবে আমাদের
পরবর্তী নিবন্ধমানুষ হই আগে