হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস এক্সপো উদ্বোধন

অংশ নিয়েছে তিন দেশের ২৪টি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৬:২৩ পূর্বাহ্ণ

বন্দর-পতেঙ্গা আসনের সংসদ সদস্য ও চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (সিসিসিআই) সাবেক সভাপতি এম এ লতিফ বলেছেন, আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক কিংবা শিক্ষা-স্বাস্থ্য, যে খাতেই হোক; ভারতের যে অবস্থান তা কারো সাথে তুলনা হয় না। ভারতের চিকিৎসকরা খুবই মেধাবী। তাদের চিকিৎসা ব্যবস্থাও অনেক উন্নত। তাই ভারতের সাথে যৌথভাবে কাজ করলে আমরাও চিকিৎসা খাতে আরো উন্নতি করতে পারব। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নগরীতে দুদিনব্যাপী ‘হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস এক্সপো’ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ‘আপনার সুস্থতা, আমাদের উদ্যোগ আপনাদের উপস্থিতি আমাদের সার্থকতা’ স্লোগানে রেডিসন ব্লু হোটেলের মেজবান হলে যৌথভাবে এ এক্সপোর আয়োজন করেছে দ্য বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (কলকাতা), মাটি-টা ওয়েলনেস এন্ড হসপিটালিটি এবং অ্যাপোলো হসপিটাল গ্রুপ। ভারত, মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের সুপরিচিত ২৪টি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান এতে অংশ নিয়েছে। দুদিনব্যাপী এই এক্সপো আজ (১৬ সেপ্টেম্বর) রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে।
অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন চট্টগ্রামস্থ ভারতীয় দূতাবাসের সহকারী হাই কমিশনার ডা. রাজিব রঞ্জন, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাহবুবুল আলম, দ্য বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ভাইস প্রেসিডেন্ট অর্ণব বাসু, অ্যাপোলো হসপিটাল গ্রুপের সিইও রানা দাশ গুপ্ত, নগদের পরিচালক (পাবলিক অ্যাফেয়ার্স) সোলায়মান সুখন। ভারত থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন মেডিকা গ্রুপের চেয়ারম্যান ডা. অলক রায়, অ্যাপোলো হসপিটাল গ্রুপের জয়েন্ট ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডা. সঙ্গীতা রেড্ডি। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন দ্য বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের এসিসটেন্ট ডিরেক্টর জেনারেল অঙ্গনা গুহ রায় চৌধুরী। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মাঝে দৈনিক আজাদীর পরিচালনা সম্পাদক ওয়াহিদ মালেক, মাটি-টা লিমিটেড এর চেয়ারম্যান ডা. মুনাল মাহবুব, ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাসনিম মাহমুদ, ডা. পূর্নেন্দু রায় প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিদেশ থেকে কেউ চিকিৎসা নিতে গেলে তারা একটু এঙট্রা খাতির (সহায়তা) পেলে খুশি হন মন্তব্য করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এম এ লতিফ বলেন, বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে কেউ চিকিৎসা নিতে গেলে যাতে একটু আলাদাভাবে কেয়ার নেয়া হয়, ভারতীয় স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আমরা সে আহ্বানটুকু জানাই।
বক্তব্যে ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার ডা. রাজিব রঞ্জন বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের মাঝে সম্পর্কটা অর্গানিক। লাভ-ক্ষতির হিসাব করে এই সম্পর্ক বিচার করা যাবে না। বাংলাদেশ থেকে বড় একটি অংশ ভারতে চিকিৎসা নিতে যান। এ সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ভারতে চিকিৎসা নিতে আগ্রহীদের এ ধরনের আয়োজন (এঙপো) যথেষ্ট সহায়তা করবে। এমন উদ্যোগের জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদও জানান ডা. রাজিব রঞ্জন।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, প্রতিবছর ১২/১৩ লাখ মানুষ ভারতে যান। যার অর্ধেকই চিকিৎসা সেবা নিতে। বেঙ্গল চেম্বার ২০০ বছর পুরনো। চট্টগ্রাম চেম্বারেরও বয়স ১১৭ বছর। দুই চেম্বারের মেলবন্ধনই এই আয়োজন। চেম্বার সভাপতি বলেন, যারা ভারতে চিকিৎসা নিতে যান, তাদের অনেকেই কোন ডাক্তার দেখাবেন, কোথায় দেখাবেন, খরচ কেমন; এসব নিয়ে দ্বিধায় পড়েন। অনেকে দালালের খপ্পরেও পড়েন। যার কারণে এই মেলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ধরনের মেলা থেকে বাইরে যারা চিকিৎসা নিতে আগ্রহী তারা খুব সহজে প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে পাবেন। এটা কম নয়। এজন্য এ মেলা চালু রাখতে হবে। পরবর্তী মেলা চট্টগ্রাম চেম্বারের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে আয়োজনের অনুরোধ জানান মাহবুবুল আলম।
অ্যাপোলো হসপিটাল গ্রুপের সিইও রানা দাশ গুপ্ত তার বক্তব্যে বলেন, হেলথ কেয়ার কিভাবে রিমোট এলাকায় পৌঁছানো যায়, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের হেলথ সেক্টরের জনবলকে (ডাক্তার-নার্স) কি করে আরো স্কিলড করা যায়, তা এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে বের হয়ে আসতে পারে। বাংলাদেশ থেকে প্রচুর রোগী ভারতের কলকাতা এবং অন্যান্য প্রদেশে যায়। এই মেলা তাদের জন্য নিঃসন্দেহে বড় ধরনের সহায়ক ভূমিকা রাখবে। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর দেশি-বিদেশি প্রখ্যাত চিকিৎসকদের নিয়ে প্যানেল ডিসকাশনের আয়োজন ছিল মেলায়।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে যৌথ ট্রেনিং প্রোগ্রাম, রিসোর্স শেয়ারিং প্রোগ্রাম, নব্য চিকিৎসা-সেবার পরিচিতি, বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা পরামর্শ, দেশ-বিদেশের প্রখ্যাত বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণে স্বাস্থ্যবিষয়ক টকশোর পাশাপাশি চিকিৎসা সেবার বিভিন্ন তথ্যের সমাহার থাকছে এই হেলথ এক্সপোতে।
এক্সপোতে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাটি-টা ওয়েলনেস এন্ড হসপিটালিটি, জিডি এসিস্ট, নগদ, ডিএমএফআর, বায়ো-জিন, এপিক হেলথ কেয়ার, মা ও শিশু হসপিটাল এবং সার্জিস্কোপ হসপিটাল অংশ নিচ্ছে। আর ভারতের প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অ্যাপোলে হসপিটাল গ্রুপ, আমরি হসপিটালস, অনুভব লিমিটেড, কলকাতা হার্ট ক্লিনিক এন্ড হসপিটাল, ফর্টিস হসপিটাল, জিডি হসপিটাল এন্ড ডায়াবেটিস ইনস্টিটিউট, জেনেসিস হসপিটাল, জিনোম-দ্য ফার্টিলিটি সেন্টার, হার্মস ভয়াজেস লিমিটেড, আইসিএটিটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসেস, আইকিউ সিটি মেডিকেল কলেজ এন্ড হসপিটালস, মেডিকা গ্রুপ অব হসপিটাল, সরোজ গুপ্ত ক্যান্সার সেন্টার এন্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট, সেভেন বোটস ইনফো সিস্টেম এবং সোলেয়ার ইনিশিয়েটিভ লিমিটেড এই এঙপোতে অংশ নিচ্ছে। এছাড়া মালয়েশিয়ার ইনস্টিটিউট জানটাং নেগারা (আইজেএন) প্রতিষ্ঠানটিও এই হেলথ এক্সপোতে অংশ নিচ্ছে।
মানুষের কাছে খুব সহজে স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যেই এ হেলথ এক্সপোর আয়োজন বলে জানান মাটি-টা লিমিটেডের চেয়ারম্যান ডা. মুনাল মাহবুব। তিনি বলেন, আমরা দেখছি, প্রতি বছর বিশাল সংখ্যক মানুষ চিকিৎসা সেবা নিতে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে যান। এর মাঝে চট্টগ্রামের বড় একটি অংশ রয়েছে। যারা দেশ-বিদেশের এই উন্নত স্বাস্থ্য সেবা চান, সহজে তাদের এই সেবা পৌঁছে দেয়াই আমাদের উদ্দেশ্য। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই আমরা এই হেলথ এক্সপোর আয়োজন করেছি। দুদিনব্যাপী এই এক্সপো সবার জন্য উন্মুক্ত বলেও জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএক সপ্তাহ পর জেলেরা ফের সাগরে
পরবর্তী নিবন্ধকোনো পুলিশ সদস্য অপরাধ করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে