হার দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু বাংলাদেশের

ক্রীড়া প্রতিবেদক | সোমবার , ১৮ অক্টোবর, ২০২১ at ৭:৪০ পূর্বাহ্ণ

ঘরের মাঠে দুটি বড় দলের বিপক্ষে সিরিজ জয়, ওমানে গিয়ে কন্ডিশনিং ক্যাম্প। বেশ ভাল প্রস্তুতি। কোন কিছুই কাজে আসল না। আকাশচুম্বি প্রত্যাশা নিয়ে বিশ্বকাপে খেলতে যাওয়া বাংলাদেশ দল প্রথম ম্যাচেই উপহার দিল একরাশ হতাশা। প্রত্যাশিত জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করা হলোনা টাইগারদের। উল্টো অপ্রত্যাশিত হার দিয়ে যাত্রা শুরু হলো বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। স্কটল্যান্ডের মত দলের কাছেও এখনো হারতে হয় বাংলাদেশকে। বিশ্বকাপের আগে দুটি বড় দলকে হারালেও বিশ্বকাপের মঞ্চে গিয়ে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচের ব্যর্থতা যেন পরিষ্কার হয়ে উঠল বাংলাদেশের খেলায়।
র‌্যাংকিংয়ের কারণে এমনিতেই সরাসরি বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলা হচ্ছেনা বাংলাদেশের। খেলতে হচ্ছে এক রকম বাছাই পর্ব। সে বাছাই পর্বেও শুরুটা হলো বাংলাদেশের হার দিয়ে। স্কটল্যান্ডের কাছে ৬ রানে হার দিয়ে বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু করল বাংলাদেশ। সাকিব-মোস্তাফিজদের আইপিএল অভিজ্ঞতা কিংবা তারুণ্যের জয়গান কোন কিছুই কাজে দিলনা। একরাশ হতাশাকে সঙ্গী করে বিশ্বকাপ শুরু টাইগারদের। দিনের শুরুতে বোলিংটা আশার আলো দেখালেও ব্যাটিংটা পুড়িয়েছে হতাশার আগুনে। ডেথ ওভারের ব্যাটিং কিংবা বোলিং কোনটিই যে বাংলাদেশ এখনো আয়ত্ব করতে পারেনি তা যেন পরিষ্কার হয়ে গেল গতকাল। না হয় ১৫ ওভার পর্যন্ত দুর্দান্ত বোলিং করে বাংলাদেশ খেই হারিয়ে ফেলে শেষ পাঁচ ওভারে। ঠিক তেমনি পাওয়ার প্লে কে মোটেও কাজে লাগাতে পারেনি টাইগার ব্যাটসম্যানরা। সব মিলিয়ে ফল যা হওয়ার তাই হয়েছে।
টসে হেরে ব্যাট করতে নামা স্কটল্যান্ড ব্যাটিংয়ে শুরুতেই আঘাত হেনেছিলেন সাইফউদ্দিন। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে বল করতে এসে কাইল কোয়েৎজারকে বোল্ড করেন সাইফউদ্দিন। শুরুর ধাক্কা সামলে জর্জ মানসে এবং ম্যাথিউ ক্রস মিলে বেশ সাবধানেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন। এ জুটি ভাঙ্গেন স্পিনার মেহেদী হাসান। নিজের প্রথম ওভারেই জোড়া আঘাত মেহেদীর। ফেরার ভয়ংকর হয়ে উঠার ইঙ্গিত দেওয়া মানসে এবং ক্রসকে। মানসে ২৩ বলে ২৯ এবং ক্রস ১৭ বলে ১১ রান করে ফিরেন। পরের ওভারে বল করতে এসে এবার সাকিবের জোড়া আঘাত। তার শিকার ব্যারিংটন এবং মিশেল লিস্ক। এরপর মেহেদীর তৃতীয় শিকারে পরিণত হয়ে ম্যাকলিয়ড ফিরলে ৫৩ রানে ৬ উইকেট হারায় স্কটল্যান্ড। এরপর প্রতিরোধ গড়ে তোলেন ক্রিস গ্রেভস এবং মার্ক ওয়াট। এ দুজন বেশ ভালই চেপে বসেন বাংলাদেশের বোলারদের উপর। ৫১ রানের জুটি গড়ে দলকে শতরান পার করে দেন দুজন। ওয়াটকে ফিরিয়ে এ জুটি ভাঙ্গেন তাসকিন। ১৭ বলে ২২ রান করেন ওয়াট। তখনো ব্যাটিং তাণ্ডব চালাচ্ছিলেন গ্রেভস। শেষ পর্যন্ত হাফ সেঞ্চুরি থেকে ৫ রান দুরে থাকতে মোস্তাফিজের বলে থামেন গ্রেভস। তার ২৮ বলে ৪৫ রানের ইনিংসটিতে ৪টি চার এবং ২টি ছক্কার মার ছিল। শেষ দিকে ডেভি এবং শরীফের ৮ রানের দুটি ছোট্ট ইনিংসের উপর ভর করে ১৪০ রান সংগ্রহ করে স্কটল্যান্ড। বাংলাদেশের পক্ষে সফল বোলার স্পিনার মেহেদী হাসান। ১৯ রানে ৩ উইকেট নেন তিনি। ২টি করে উইকেট নিয়েছেন মোস্তাফিজ এবং সাকিব। একটি করে শিকার তাসকিন এবং সাইফউদ্দিনের।
১৪১ রান তাড়া করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই ফিরেন সৌম্য সরকার। ব্যাটিং পজিশনের পরিবর্তন হলেও পাফরম্যান্সের কোন পরিবর্তন হয়নি সৌম্যর। ৫ রান করে ফিরেন সৌম্য। সে ধাক্কা না সামলাতেই লিটনকে হারানোর ধাক্কা খেল বাংলাদেশ। দুজনই উড়িয়ে মারতে গিয়ে ধরা পড়েন সীমানায়। ১৮ রানে নেই দুই ওপেনার। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ মাত্র ২৫। সে চাপ থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেন দুই অভিজ্ঞ সাকিব এবং মুশফিক। প্রয়োজনের রান রেটের সাথে পাল্লা দিয়ে এগুতে পারছিলেন না দুজন। হাত খুলে মারার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছিলেন। নবম ওভারে লিস্ককে পরপর দুটি ছক্কা মেরে রানের চাকাকে কিছুটা ঘুরানোর চেষ্টা করেন মুশফিক। এরপর হাত খুলতে গিয়েছিলেন সাকিব। তখনই ঘটে বিপদ। গ্রেভেসকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে একেবারে সীমানার কাছে গিয়ে ধরা পড়েন সাকিব। ২৮ বলে ২০ রান করে ফিরেন সাকিব। ভাঙ্গে ৪৭ রানের জুটি। মুশফিকও পারলেন না দলকে টানতে। এক রকম আত্নহত্যা করেই এলেন দারুণ খেলতে থাকা মুশফিক। স্কুইপ খেলতে গিয়ে হলেন বোল্ড। ৩৬ বলে মুশফিকের ৩৮ রানের ইনিংসে ১টি চার এবং ২টি ছক্কার মার ছিল। মাহমুদউল্লাহ এবং আফিফের উপর যখন প্রত্যাশা বাড়ছিল ঠিক তখনই প্রত্যাশার চাপে ভেঙ্গে পড়লেন আফিফ। তিনিও ফিরলেন ছক্কা মারতে গিয়ে। একজন ব্যাটসম্যানও তাদের শটটাকে সীমানার ওপারে নিয়ে যেতে পারলেন না। সবাই ফিরলেন সীমানার কাছে গিয়ে। আফিফ ফিরলেন ১২ বলে ১৮ রান করে। সোহানও ধরা পড়লেন সেই সীমানায় গিয়ে। সবাই যেন একই পথে হেঁটে আসলেন। শেষ চেষ্টা করা অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ ফিরে আসর সাথে সাথেই শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের সব সম্ভাবনা। হতাশায় পুড়তে পুড়তে ফিরে আসা টাইগার অধিনায়কের ব্যাট থেকে আসে ২২ বলে ২৩ রান। মেহেদী হাসানের একটি চার আর একটি ছক্কা খানিকটা রোমাঞ্চ দিয়েছে বটে। তা হারের লজ্জা থেকে বাঁচাতে পারেনি দলকে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅনেক কিছুই দেখেছি এখন প্রমাণের অপেক্ষায় : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধটি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক সাকিব