হাকুমাকু

রাজিব উল হাসান | বুধবার , ১৩ এপ্রিল, ২০২২ at ৭:৫৬ পূর্বাহ্ণ

বনে এখন গভীর রাত। বনের বাসিন্দারা যে যার মতো রাতযাপনে ব্যস্ত।একটু গভীর বনে বাস করে ১৫/২০ জনের একটি হাতি পরিবার। বন থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে তাদের সময়গুলো বেশ কাটছিলো। হাতি সর্দারের বাচ্চা হাকুমাকু খুব চঞ্চল। নিজের মতো বনময় খেলে বেড়ায় সে। বড়োরা সাবধান করে হাকুমাকু একা একা দূরে কোথাও যেও না। হাকুমাকু বললেও কে শোনে কার কথা। হাকুমাকু কোনদিন বানরের বাচ্চা কোনদিন প্রজাপতির সাথে খেলে বেড়ায়। প্রজাপতির সুন্দর পাখা দেখে হাকুমাকু অবাক হয়ে থাকিয়ে থাকে। অবাক হয়ে থাকিয়ে থাকতে দেখে প্রজাপতির বাচ্চা প্রনু বলে,কি রে কি দেখো এমন করে। তোমাকে দেখি। প্রনু বলে, যাঃ আমাকে দেখার কি আছে। আছে আছে বলে হাকুমাকু সামনের দিকে এগোয়। প্রনুর সাথে খেলতে খেলতে কখন যে বেলা ডুবে গেল দুজনে খেয়ালই করলো না। মায়ের কথা মনে পড়ে যায় তার…..। বাড়ি ফেরার জন্য ছটফট করে হাকুমাকু। প্রজাপতির বাচ্চা প্রনু বলে, কি হয়েছে তোমার? চলো,বাড়ি ফিরি। হ্যাঁ,তাই চলো। বলে দুজনেই রওনা দিলো। বাড়ি ফিরে বাবা মাকে দেখে আনন্দে মনটা ভরে উঠলো হাকুমাকুর। বাবার পাশ ঘেঁষে বসে নানারকম আহলাদ করতে থাকে সে। একফাঁকে খাবার দিয়ে যায় মা। খাবার খেতে খেতে হাকুমাকু খেয়াল করলো অন্যদিনের মতো বাবাকে আজ হাসিখুশী লাগছে না। কেমন যেন অন্যমনস্ক লাগছে। কি হয়েছে বাবা? বনে ঝামেলা বাড়ছে…। কি ঝামেলা বাবা? মানুষ নামের প্রাণীগুলো নানা কারণে বন ধ্বংস করছে। এতে আমাদের খাবার ও মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের চরম সংকট দেখা দিবে বাবা। বাবার কথা শুনতে শুনতে হাকুমাকু কবেই ঘুমিয়ে পড়েছে। ঘুমানোর আগে তাঁর ছোট্ট মনে একটা কথা বেশ আঘাত করলো। আর তা হলো, খাবার ও মাথা গোঁজার চরম সংকট হবে। মন খারাপ নিয়েই খেলতে বের হলো হাকুমাকু। প্রনু এসেছে সঙ্গে বানরের বাচ্চা মংকু। অন্যদিন হাকুমাকু খুব দৌড়ঝাঁপ করতো।আজ সে চুপচাপ….। হবেই বা না কেন? বিপদ ঘনিয়ে আসছে বনে….। বুদ্ধিমান মানুষ প্রাণীগুলো কি তাহলে বোকা প্রাণীতে পরিণত হচ্ছে। আরে…বন, বনের প্রাণীগুলো বাঁচলেই না সভ্যতা বিকশিত হবে। সে তাঁর বন্ধুদের বিষয়গুলো খুলে বললো। কেউ বললো, চলো ওদের আমরা অতিষ্ট করে তুলি। আর কেউ বললো, চলো রাতের আঁধারে ওদের ঘর বাড়ি ধ্বংস করি। হাকুমাকু বললো, না সংঘাত না…। শান্তির পথ খুঁজতে হবে। বড়োরা কি সিদ্ধান্ত নেয় দেখি। আমরা ও বড়দের সাথে দল তৈরি করে কাজ করবো। এর কয়েকদিন পরে বনের গভীরে বনের এই প্রকৃতি ও প্রাণীদের এক সভা বসলো। সভায় মানুষের কর্মকাণ্ড নিয়ে অনেক আলোচনা হলো। কিভাবে রক্ষা করা যায় বন ও প্রাণীকূলকে। সবাই রুখে দাঁড়ানোর পক্ষে মত দিলে প্রকৃতি ও প্রাণীকূল হৈ হৈ করে সমর্থন দিলো। সভায় বাবার পাশে চুপটি করে হাকুমাকু বসে ছিলো। প্রকৃতি ও বনের প্রাণীকূলদের মতের সাথে একমত হতে পারলো না হাকুমাকু। তাঁর ছোট মনে শঙ্কা জেগে উঠলো।মানুষের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে গেলে পরিনতি ভালো হবেনা। ঘরে ফিরে তার বাবাকে নানাভাবে বুঝাতে থাকে। তুমি ছোট, এগুলো বুঝবে না। যাও ঘুমিয়ে পড়ো। ছোট্ট হলেও হাতি সর্দার ছেলের কথার গুরুত্ব বুঝতে পারলো। বনে টিকতে হলে বুদ্ধিমান মানুষ প্রাণীর বিরুদ্ধে যাওয়া যাবে না। এর কিছুদিন পর বনে আরেকটা সভার আয়োজন হলো। সভায় আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে সমপ্রীতির ডাক দেয়ার সিদ্ধান্ত হলো। একদিন বনের সব প্রাণীকূল বনের সীমান্তে এসে বুদ্ধিমান মানুষ প্রাণীর কাছে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার দাবি জানাবে। একথায় বনের সবার মাঝে সাড়া পড়ে গেল। একটা সংঘাত ঠেকাতে পেরে হাকুমাকুর চোখ জুড়ে আনন্দাশ্রু দেখা দিলো।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিদেশি ঋণ শোধ করা সম্ভব নয়
পরবর্তী নিবন্ধপহেলা বৈশাখ