হরেক পণ্য, বড় মেলা

লালদীঘিতে বৈশাখী মেলা শুরু হচ্ছে আজ জব্বারের বলীখেলা কাল

ঋত্বিক নয়ন | বুধবার , ২৪ এপ্রিল, ২০২৪ at ৬:১০ পূর্বাহ্ণ

ক’দিন ধরে রুষ্ট প্রকৃতি নগর জীবনকে স্থবির করে দিতে চাইছে। এমনিতে নগর জীবনে আমোদ প্রমোদের স্থান ক্রমশ কমছে। বাড়ছে সংকট। এর মধ্যে দুই দণ্ড স্বস্তির পরশ বুলিয়ে দিতে আজ বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে তিনদিনব্যাপী ঐতিহাসিক জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা। আগামীকাল ২৫ এপ্রিল থাকবে মূল আয়োজন বলীখেলা।

বাঙালির ঐতিহ্য টিকে আছে বাঙালি সংস্কৃতিতে। ঐতিহ্যের টানে শত বছর ধরে চলছে জব্বার সওদাগরের এ আয়োজন। প্রচলিত আছে, একসময় এই আয়োজনকে সামনে রেখে মেয়েরা শ্বশুরবাড়ি থেকে বাপের বাড়ি বেড়াতে আসত। যাওয়ার সময় মেলার নানা সামগ্রী পাঠানো হতো মেয়ের বাড়িতে। এখন সেই জৌলুস না থাকলেও আবেদন কমেছে এ কথা বলা যাবে না। দেশের সবচেয়ে বর্ণিল ও ঐতিহ্যবাহী এই মেলার ভিডিওগ্রাফি ব্রিটিশ মিউজিয়ামের আর্কাইভে সংরক্ষিত আছে। ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সকলে সারা বছর জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলার অপেক্ষায় থাকে। ঐতিহ্যবাহী এ আয়োজন এবার দাঁড়িয়েছে ১১৫তম পর্বে।

ভারতবর্ষের স্বাধীন নবাব টিপু সুলতানের পতনের পর সেই দেশে ব্রিটিশ শাসন শুরু হয়েছিল। বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশ এবং একই সঙ্গে বাঙালি যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্রিটিশবিরোধী মনোভাব গড়ে তোলা এবং শক্তিমত্তা প্রদর্শনের মাধ্যমে তাদের মনোবল বাড়ানোর উদ্দেশ্যে আন্দোলনের কৌশলী সংগঠক নগরীর বদরপাতি এলাকার সওদাগর আবদুল জব্বার ১৯০৯ সালে খেলার সূচনা করেন। ব্যতিক্রমধর্মী ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনের জন্য ব্রিটিশ সরকার আবদুল জব্বার মিয়াকে খান বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত করলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি আমলে বৃহত্তর চট্টগ্রাম ছাড়াও বার্মার আরাকান অঞ্চল থেকেও নামীদামি বলীরা এ খেলায় অংশ নিতেন।

ঐতিহ্যবাহী এ খেলার উদ্যোক্তা পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেও ঐতিহ্য ধরে রেখেছে চট্টগ্রামবাসী। জব্বারের মৃত্যুর পর তার বংশধররা এ খেলা চালু রাখেন। তারপর থেকে হাঁটি হাঁটি পা পা করে জব্বার মিয়ার বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা উপমহাদেশের বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম ধারক বাহকে পরিণত হয়েছে। এবার বসছে ১১৫তম আসর। বর্তমানে চট্টগ্রামের মানুষের সবচেয়ে বড় উৎসব এটি। আয়োজনটি নগরবাসীকে বিরাট আনন্দের উপলক্ষ এনে দেয়।

আয়োজক সূত্রে জানা যায়, বলীখেলার জন্য লালদীঘি মাঠে ২০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২০ ফুট প্রস্থের বালুর মঞ্চ তৈরি করা হয়। সেখানে পাঁচটি ধাপে প্রতিযোগিতা হয়। প্রথম বাছাইয়ের পরের রাউন্ড পর্বে ৫০ জনকে নিয়ে খেলা হয়। সেখান থেকে ২৫ জন যান মূল চ্যাম্পিয়ন পর্বে। এখানে কোনো পয়েন্ট ব্যবস্থা নেই। কুস্তি করতে করতে মাটিতে যার পিঠ যে লাগাতে পারবে সেই বিজয়ী হবে। প্রতি বছর ১০০ থেকে ১৫০ জন বলী দূরদূরান্ত থেকে এসে খেলায় অংশ নেয়।

কমিটির সাধারণ সম্পাদক শওকত আনোয়ার বাদল বলেন, আশা করছি প্রতি বছরের মতো এবারও উৎসবমুখর পরিবেশে এ আয়োজন অনুষ্ঠিত হবে।

একসময় জব্বারের বলী খেলার মূল ক্ষণ ছিল ১০ বৈশাখ। আর বৈশাখের ১১, ১২ ও ১৩ তারিখ ছিল মেলার নির্ধারিত দিন। কিন্তু কালের বিবর্তনে ও ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য বৈশাখ মাসের বিভিন্ন সময়ে নগরীর বিভিন্ন স্থানে বৈশাখী আয়োজন থাকায় মেলা যেমন পিছিয়েছে, তেমনি প্রসারতা বেড়েছে। বর্তমানে ২৫ এপ্রিল বলীখেলার নির্ধারিত দিন। এ উপলক্ষে আয়োজিত বৈশাখী মেলা আজ থেকে শুরু হচ্ছে। শেষ হবে পরশু ২৬ এপ্রিল। কিন্তু প্রতিবারের মতো এবারও সময়ের বেড়াজালে আটকে নেই বৈশাখী মেলা। রোদের আঁচ উপেক্ষা করে দূরদূরান্ত থেকে দোকানিরা হরেক রকমের পসরা নিয়ে ক’দিন ধরেই ভিড় করছেন মেলা প্রাঙ্গণে। আনুষ্ঠানিকতার অপেক্ষা না করেই দোকানিরা তাদের পছন্দসই স্থানে বিক্রি শুরু করে দিয়েছেন।

জব্বারের বলীখেলা ঘিরে লালদীঘি ময়দান ও আশপাশের প্রায় এক বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বসেছে গ্রামীণ লোকজ মেলা। লালদীঘি ময়দান, জেল রোড এলাকা, টেরীবাজার, হাজারী লেইন, আন্দরকিল্ল্লা, কেসিদে রোড, সিনেমা প্যালেস মোড়, কোতোয়ালী মোড়সহ আশপাশের এলাকায় বিক্রি হওয়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গ্রামীণ মেধায় গড়া সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে ঢাকঢোল, মন্ডামিঠাই, শীতল পাটি, হাতপাখা, ফুলের ঝাড়ু, মাটির তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী, রেশমী চুড়ি, পুতুল, বাঁশি, মুখোশ, নৌকা, ফুলদানি, ব্যাগ, তামা পিতল ও কাঁসার সামগ্রী, মেয়েদের চুড়ি, বাঁশ ও কাঠের তৈরি গহনা, হাঁড়ি পাতিল, কলসি, কুলা, চালন, ছুরি, কাঁচিসহ বিভিন্ন পণ্য।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ‘আমরা তো চাঁদাবাজি করছি না, মেলা উপলক্ষে কিছু ইনকাম করছি’
পরবর্তী নিবন্ধদুই মেধাবী শিক্ষার্থীর চলে যাওয়া ও কাপ্তাই সড়কে চলাচলের নিরাপত্তা