মনে পড়ে প্রাইমারি স্কুলে যখন ক্লাস ফোর–এ পড়ি সে সময়ের কথা। আমি বাংলায় খুব ভালো ছিলাম বলে বাংলার স্যার আমাকে খুব স্নেহ করতেন। যারা ‘হোম টাস্ক’ করে আনতো না তাদের তিনি কানে ধরে বেঞ্চে দাঁড় করিয়ে রাখতেন। কানে ধরে বেঞ্চে দাঁড়াতে আমারও ইচ্ছে হতো।
একদিন সত্যি সত্যি আমি দাঁড়িয়ে গেলাম। বাংলার স্যার এ–অবস্থায় আমাকে দেখে বললেন, তুমি তো নিয়মিত ‘হোম টাস্ক’ করে আনো। তিনি আমাকে জোর করে বেঞ্চে বসিয়ে দিলেন। আমি বললাম, স্যার আমি যদি ‘হোম টাস্ক’ করে না আনি তবে কান ধরে বেঞ্চে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবো তো? তিনি অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন। তাঁর সে দৃষ্টি এখনো আমার চোখে ভাসে।
রাতে ভালো ঘুম হয়না বলে সারাদিন আমি কেবল ঝিমোই। পরিচিতজনরা আমাকে দেখতে আসলে আমি বলি, ঝিমোচ্ছিনা– মেডিটেশন করছি। কেও কেও বলছে এ সব নাকি দরবেশ–ফকির হওয়ার লক্ষণ। ভাগ্য ভালো এখন পর্যন্ত কেও আমাকে ভন্ড ফকির বলেনি। ভালোই আছি। ঝিমোচ্ছি আর মানুষ দেখা করতে আসলে বলি, আমি মেডিটেশনে আছি।
অনেক কথাই মনে পড়ে। স্মৃতি কাতরতায় ভুগি। আমি শহরে পড়াশুনা করি। বাবা–মা থাকেন গ্রামে। মাঝে তাঁদের দেখতে গ্রামের বাড়িতে যাই। গ্রামে এসেছি। মা বললেন, তুই একটু কষ্ট করে বিল হতে আমাদের হলুদ রং–এর গরুটা আনতো। বিলে গিয়ে এ ধরনের কয়েকটি গরু দেখতে পেলাম। একটিকে মনে হলো
আমাদের গরু। সেটাই নিয়ে আসলাম। সেটা ছিল অন্য গরু। বাবা–মা দেখেই বুঝতে পারলো যে আমি অন্য আরেক জনের গরু ধরে নিয়ে এসেছি। কিছুক্ষণ পর দেখলাম গরুর আসল মালিক আমাদের গরুটা সাথে করে নিয়ে এসেছে। ওরা সবাই আমার দিকে তাকিয়ে হো হো করে হেসে উঠল। বোকা নাকি তিনবার হাসে। আমিও তিনবার হাসলাম।