স্বাধীনতার গল্প শোনো

দীপক বড়ুয়া | বুধবার , ২৩ মার্চ, ২০২২ at ৯:৩৭ পূর্বাহ্ণ

প্রতিদিন সন্ধ্যা হলে নারিতা, নোরা, লিওন বলে,- গল্প বলো ঠাম্মি। ঠাম্মি গল্প শোনায় প্রজাপতি, পরী,রূপকথা, ভূতের।
আজকে ও বলে,- একটি মজার ভূত গল্প শুনবে?
নারিতা খুশি নয় ভূত গল্প শুনতে। নোরা বলে, ভূত গল্প কত বলেছ, আর নয়। ভালো লাগে না।
লিওন জড়িয়ে বলে, ভূত গল্প নয়, অন্যকিছুর গল্প বলো।
ঠাম্মি ভাবে, কিসের গল্প বলা যায়! কথাটা মিথ্যে বলেনি কেউ। একই গল্প কতবার শোনা যায়। গলায় জোর দিয়ে বলে, দেশের গল্প শুনবে?
– দেশের গল্প আছে ঠাম্মি? নারিতা প্রশ্ন করে।
– কোন দেশের গল্প? লিওনের প্রশ্ন।
– আমাদের দেশের ও গল্প আছে ঠাম্মি? নোরা প্রশ্ন করে।
তিনজনের জানার আগ্রহে ঠাম্মি দারুণ খুশি। বলে, সবাই মুখোমুখি বসো। আজ আমাদের দেশের গল্প বলবো। কি মজার দেশের গল্প।
– মজার কেন ঠাম্মি? লিওন আবারও প্রশ্ন করে।
– কারণ এটা স্বাধীনতার গল্প। আচ্ছা আমাদের দেশের নাম কি বলো।
– বাংলাদেশ। নোরা উঁচু গলায় উত্তর দেয়। ঠাম্মি ভীষণ খুশি নোরার উত্তর শোনে।
– আচ্ছা বলোত বাংলাদেশের জাতির পিতা কে?
– বঙ্গবন্ধু শেখমুজিবুর রহমান। নারিতা বলে।
– ঠিক বলেছো নারিতা। আজ তা’হলে স্বাধীনতার গল্প শোনো। আমাদের দেশের নাম ছিলো পাকিস্তান। ওটা আবার দুটো দেশে ভাগ। একটার নাম পূর্ব পাকিস্তান, অন্যটার নাম পশ্চিম পাকিস্তান। দেশের প্রেসিডেন্ট ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের। ওরা আমাদের ভালো চোখে দেখতো না। পূর্ব পাকিস্তানের সকল আয়ের টাকা পশ্চিমপাকিস্তানে খরচ করতো। শুধু পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নয়নে ব্যস্ত ছিল। আর পূর্ব পাকিস্তানের মানুষেরা অভাব অনটনে দিন কাটতো। ভালো কোনকিছুই পূর্ব পাকিস্তানে ছিলনা। এসব করুণ অবস্থা দেখে শেখ মুজিবুর রহমান চুপ থাকতে পারেননি। আমাদের দেশে সবাই বাঙালি। বাংলা ভাষায় কথা বলি। বাংলা ভাষা আমার মায়ের মুখের ভাষা। কিন্তু আমরা সবাই অবহেলিত। কথা বললেই পুলিশ মারধর করতো। জেলে বন্দী করে রাখতো। এসব শেখ মুজিবুর রহমানের সহ্য হতেনা। তাই তিনি পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কথা, আন্দোলন শুরু করেন। সেই কারণে অনেকবার জেলে গেছেন। তারপর ১৯৭১ সালে তাঁর ডাকে সবাই স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। দীর্ঘ নয়মাস যুদ্ধ শেষে ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে দেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। দেশ স্বাধীন হয়। নাম হয় বাংলাদেশ। আমাদের দেশ এখন অনেক উন্নতি হয়েছে। দেশে সেরা ইশকুল, কলেজ, কলকারখানা, রাস্তা, প্রতিষ্ঠান, গাড়িবাড়ি হয়েছে। আমরা এখন অনেক সুখে আছি। প্রতিটি গ্রামে বিদ্যুৎ গেছে। পথঘাট পাকা হয়েছে। ঠাম্মির অপূর্ব দেশের গল্প শুনে সবাই আনন্দে পুলকিত হয়।
– আচ্ছা ঠাম্মি, আমাদের দেশটা কত সুন্দর। গ্রামের বাড়িতে যাবার সময় শুধু সবুজ ধানের মাঠ,কত নদী দেখি। মন ভরে যায়। পুকুর, দীঘি, পাহাড়,সাগর আছে।
– শুধু কি তাই, ঐ পুকুর, দীঘিতে মাছ খেলে,আর সাগরের কথা বলছো, কঙবাজার সমুদ্দুর ঢেউ দেখেছো,পতেঙ্গার বিচ দেখেছো কি সুন্দর! কতশত মানুষ ওখানে যায়। ঘুরে, বেড়ায়, দৌঁড়ে, সাগর জলে স্নান করে। সাগরে কত রকমের ঝিনুক, শামুক নোনা জলে হাঁটে। ঐ সাগরের কোলে সূর্য ডোবে। কি সুন্দর লাল রঙে আকাশ ঝিলমিল করে।
– সত্যি ঠাম্মি আমাদের বাংলাদেশের কত রূপ। নোরা ছোট গলায় বলে।
– হ্যাঁরে, তাইতো অনেকেই সোনার বাংলাও বলে। ঠাম্মি গালভরা হাসিতে বলে। লিওনকে চুপ দেখে বলে, আজকের গল্পটা কেমন বলবেনা দাদুভাই!
– আজকের স্বাধীনতার গল্পটা সেরা গল্প ঠাম্মি। কি সুন্দর নাম,স্বাধীনতার গল্প।
আনন্দে নারিতা,নোরা, লিওন ঠাম্মিকে জড়িয়ে আদর করে। ঠাম্মি না করে না। ওদের খুশিতে ঠাম্মির আনন্দের বাঁধ ভেঙে যায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতৃণমূল নেতা খুনের পর ১০টি ঝলসানো মরদেহ উদ্ধার
পরবর্তী নিবন্ধখোকার ডাকে স্বাধীনতা