স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণে সুপারিশ : বিশিষ্টজনদের ভাবনা

আজাদী ডেস্ক | রবিবার , ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ at ৬:৩৮ পূর্বাহ্ণ

স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়েছে বাংলাদেশ। এতে করে অর্জনের পাশাপাশি নতুন কিছু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে দেশের অর্থনীতি। বন্ধ হবে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে পাওয়া কোটা সুবিধাও। নতুন এই অর্জনকে অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা কীভাবে দেখছেন তা জানতে চেয়েছিল আজাদী।

এই অর্জনে বিশ্বে আমাদের সম্মান বৃদ্ধি পাবে
ড. মইনুল ইসলাম
আজাদী প্রতিবেদন
স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উন্নীত হওয়াকে ‘অমর্যাদাকর’ অবস্থা থেকে উত্তরণ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম। দৈনিক আজাদীর সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় আমাদের দেশের নাম অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে জাতিসংঘ চূড়ান্ত সুপারিশ করেছে। এটি একটি বড় অর্জন। এই অর্জনের ফলে বিশ্ব দরবারে আমাদের সম্মান বৃদ্ধি পাবে। একটি অমর্যাদাকর অবস্থা থেকে দেশকে মর্যাদার আসনে নিয়ে যাওয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
ড. মইনুল ইসলাম বলেন, অর্থনীতিতে যে গতিশীলতা তৈরি হয়েছে তা ধরে রাখতে হবে। দেশের সাধারণ মানুষের জীবনে যাতে এই সুফল পৌঁছে তাও নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নিতে হবে।
তিনি বলেন, দেশের গুটিকয়েক ধর্ণাঢ্য ব্যক্তির হাতে জাতীয় আয় এবং সম্পদের বেশিরভাগ জমা হয়ে যাচ্ছে। এই বিষয়টি সরকারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রতিরোধ করতে হবে। তিনি টাকা পাচার এবং দুর্নীতি বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, দেশের অগ্রগতি হচ্ছে। জাতিসংঘের এই সুপারিশ তারই বড় প্রমাণ। দেশের বিভিন্ন সূচকে যেই অগ্রগতি তা ধরে রাখার মাধ্যমে সরকারকে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সস্তা শ্রমের পরিবর্তে প্রোডাকটিভ শ্রমের দিকে যেতে হবে
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান
আজাদী প্রতিবেদন
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যে সুপারিশ করা হয়েছে, তা আমাদের অর্থনীতির জন্য একটি স্বীকৃতি। তবে অর্থনীতির মাঠে একজন সক্ষম প্রতিযোগী হিসেবে একই সাথে তা বিরাট এক চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে আমাদের। আমরা সক্ষম প্রতিযোগী হিসেবে নিজেদের কতটুকু ধরে রাখতে পারছি তার ওপরই নির্ভর করবে এর সফলতা।
তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে আমাদের কিছু সুযোগ-সুবিধা ছিল। যেগুলো আমাদের হাতছাড়া হয়ে যাবে। অন্যের দয়ার বিষয়গুলো আর থাকছে না। স্বল্পসুদে ঋণ পাওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে নিজেদের সক্ষমতার প্রমাণ দিতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের সস্তা শ্রমের পরিবর্তে প্রোডাকটিভ শ্রমের দিকে যেতে হবে। এজন্য যতটুকু শিক্ষা-দীক্ষা বা কারিগরি দক্ষতা প্রয়োজন তা অর্জন করতে হবে। তিনি দেশের ব্যক্তি এবং প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, আমরা অর্থনীতির কিছু শর্ত পূরণ করেছি। আমরা কোয়ালিফাই করেছি। কিন্তু পরবর্তীতে অর্থনীতিতে আমরা কতটুকু টিকে থাকতে পারবো তার ওপর আমাদের অর্থনীতির ভবিষ্যত নির্ভর করবে।
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, জাতিসংঘের তিনটি সূচক আমরা ক্রস করেছি। তারা আমাদের জন্য সুপারিশ করেছে। ২০২৬ সালে তা অর্জিত হবে। কিন্তু আমরা দুর্নীতি কতটুকু কম করতে পারছি, শিক্ষা ব্যবস্থাকে কোথায় নিয়ে যেতে পারছি, সরকারি ব্যয় এবং অপচয় কতটুকু কমাতে পারছি সেই সবের ওপরই আমরা সক্ষম কিনা তা নির্ভর করবে। তিনি এই লক্ষ্য অর্জনে সরকার কি ধরনের নীতিমালা তৈরি করছে বা কতটুকু মনযোগ দিতে পারছে তাও ফ্যাক্টর বলে মন্তব্য করেন।

নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ব্যবসায়ীদের প্রস্তুতি নিতে হবে
মাহবুবুল আলম
আজাদী প্রতিবেদন
চট্টগ্রাম চেম্বার প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম বলেছেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উন্নীত হওয়া অনেক বড় একটি অর্জন। জাতীয় আয় বৃদ্ধি এবং মানবসম্পদ উন্নয়নে বাংলাদেশ জাতিসংঘের বিভিন্ন শর্ত পূরণ করে এই অর্জন লাভ করেছে। এটি আমাদের সম্মান অনেক বৃদ্ধি করেছে। উন্নয়নশীল দেশ থেকে ২০৩০ সালে বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হবে। এই লক্ষ্য নিয়ে সরকার কাজ করছে। ইতোমধ্যে আমরা আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের দিকে দ্রুত যাত্রা করছি।
প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে চেম্বার প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই জাতি হিসেবে আমরা একটি মর্যাদার আসনে যাচ্ছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে জাতিসংঘের এই সুপারিশ আমাদের অনেকদূর এগিয়ে দিল বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মাহবুবুল আলম বলেন, ব্যবসায়ী হিসেবে আমাদের সামনে অনেক বড় দায়িত্ব উপস্থিত হচ্ছে। বিভিন্ন চ্যালেঞ্জও আমাদের মোকাবেলা করতে হবে। স্বল্পন্নোত দেশ হিসেবে পাওয়া কোটা সুবিধা সামনের দিনগুলোতে আমরা পাবো না। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। বিশ্ব অর্থনীতিতে টিকে থাকার জন্য আমাদের ব্যবসায়ী সমাজকে এখন থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে।
তিনি বলেন, বিশ্বের স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে আমাদের অবস্থান ছিল খুবই অমর্যাদাকর। উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্তি আমাদের গৌরব বহুলাংশে বৃদ্ধি করবে। তিনি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এসে এই অর্জন জাতিকে নতুনভাবে গৌরবান্বিত করবে বলে মন্তব্য করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধলালদিয়ার চরে বন্দরের বড় অভিযানের প্রস্তুতি
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামের উন্নয়নে চাই সবার অংশগ্রহণ