সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাস করতে গেলে প্রতিরোধের মুখে পড়ে

আজাদী ডেস্ক

| শুক্রবার , ২৪ মার্চ, ২০২৩ at ৫:৩১ পূর্বাহ্ণ

১৯৭১ সালের এদিন ছিল লাগাতার চলা অসহযোগ আন্দোলনের ২৩তম দিন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী রংপুর, সৈয়দপুর, চট্টগ্রামসহ বিভিন্নস্থানে বিক্ষুব্ধ জনতার মিছিলের ওপর গুলি চালায়। সৈয়দপুরে সেনাবাহিনী গুলি চালিয়ে ১৫ গ্রামবাসীকে হত্যা করে। সৈয়দপুরের ঘটনার পর পরই ঢাকার মিরপুরেও

 

অবাঙালিরা বাঙালিদের ওপর হামলা চালায়। এর প্রতিবাদে ধানমন্ডির ৩২নং বাসভবনে সমবেত বিক্ষুব্ধ জনতার উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু বলেন, সৈয়দপুর, রংপুর, চট্টগ্রাম ও জয়দেবপুরে সেনাবাহিনীর কার্যকলাপে আমি শোকাহত।

বঙ্গবন্ধু হুঙ্কার ছেড়ে বলেন, জোর করে কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হলে তার ফল ভাল হবে না। এদিন বঙ্গবন্ধু ও ইয়াহিয়ার মধ্যে কোনো বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে প্রেসিডেন্ট ভবনে বঙ্গবন্ধু ও ইয়াহিয়ার উপদেষ্টামণ্ডলীর মধ্যে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী আলোচনা হয়েছে। বৈঠকের পর তাজউদ্দীন আহমেদ

অপেক্ষমান সাংবাদিকদের বলেন, আওয়ামী লীগ আলোচনা আর দীর্ঘায়িত করতে ইচ্ছুক নয়। আলোচনার নামে কালক্ষেপণ করে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বিমান বোঝাই করে বিপুল পরিমাণে সৈন্য আর অস্ত্র আনা হয়। এরই অংশ হিসেবে অস্ত্রের সবচেয়ে বড় চালানটি আসে এমভি সোয়াত নামক জাহাজে। চট্টগ্রাম

বন্দরের ১৭ নং জেটিতে নোঙর করা হয়। অস্ত্র বোঝাই জাহাজ সোয়াত থেকে পাকসেনারা অস্ত্র খালাস করতে গেলে প্রথমে শ্রমিকরা অস্ত্র খালাসে অস্বীকার করে ও বাধা দেয়। এতে সেনাবাহিনী গুলি চালায়। ফলে ঘটনাস্থলেই ১৪ জন শ্রমিক প্রাণ হারায়। এরপর সেনা সদস্যরা কিছু অস্ত্র খালাস করে ১২টি ট্রাকে

করে নিয়ে যাওয়ার সময় প্রায় ৬০ হাজার শ্রমিক রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে তাদের পথরোধ করে। এ সময় সেনাবাহিনীর নির্বিচার গুলিবর্ষণে কমপক্ষে ২৫০ শ্রমিক নিহত হয়। চট্টগ্রাম জেটির ভয়াবহ সেই গণহত্যা সম্পর্কে মেজর জেনারেল (অব.) সুবিদ আলী ভূঁইয়া লেখেন, ২৪ মার্চ, ১৯৭১ : বেলা দেড়টায় কর্নেল

সিগরীর হুকুমে ইবিআরসি থেকে ৬০ জন বাঙালি সৈন্যকে ২০ নম্বর বেলুচ রেজিমেন্টের একটা কোম্পানির সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরে পাঠানো হয়। বাঙালি সৈন্যদের বিনা অস্ত্রে বন্দরে পাঠানো হয়েছিল, এতে কোনো সন্দেহ নেই। অন্যদিকে বেলুচ রেজিমেন্টের সেনাদের পাঠানো হয়েছিল অস্ত্রসজ্জিত করে। চট্টগ্রাম বন্দরের

১৭ নম্বর জেটিতে পোঁছানোর পর বেলুচ রেজিমেন্টের জওয়ানরা ওই জেটির চতুর্দিক ঘিরে রাখে। আর বাঙালি সেনাদের নিয়োগ করা হয় সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ খালাস করার জন্য। বেলুচ রেজিমেন্টের জওয়ানদের সঙ্গে কমান্ডার ছিলেন এক পাঞ্জাবি মেজর। আর বাঙালি সেনাদের সঙ্গে ছিলেন

নায়েব সুবেদার নূরল ইসলাম ও নায়েব সুবেদার গোলাম সাত্তার। বেলুচ রেজিমেন্টের জওয়ানরা যখন জেটির চতুর্দিকে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে মজবুত করার জন্য ব্যস্ত, তখন বাঙালি সৈন্যরা সোয়াত থেকে অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ খালাসের কাজে ঘামে ভিজে একাকার। জেটিতে যাওয়ার পর বাঙালি সৈন্যদের প্রথম খাবার

দেয়া হয় ২৫ তারিখের বিকালে অর্থাৎ পুরো একটা দিন পর। তাও সে খাবার জোটে মাত্র দশজন সৈন্যের ভাগ্যে। এ রকম অভুক্ত অবস্থায় যখন বাঙালি সৈন্যরা মাল খালাসে ব্যস্ত, তখন ব্রিগেডিয়ার আনসারী ও কর্নেল সিগরী বারবার জেটিতে গিয়ে তদারক করেন। এর আগে আমরা কখনও দেখিনি কিংবা শুনিনি যে,

জাহাজের মাল খালাসের সময় কোনো ব্রিগেডিয়ার স্বয়ং এ ধরনের কাজ করেন। বাঙালি সৈন্যরা যখন অনাহার আর ক্লান্তিতে দিশেহারা, তখন ব্রিগেডিয়ার আনসারী ও কর্নেল সিগরী বারবার তাগিদ দিচ্ছেন দ্রুত মাল খালাসের জন্য। সেদিন চট্টগ্রামের এ ঘটনায় সারাদেশের মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। স্রোতের মতো মিছিল রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থান প্রদক্ষিণ করে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে এসে সমবেত হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিএনপির মধ্যেই সংকট : তথ্যমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধজেটি সংকটে ইউরিয়া সরবরাহ ব্যবস্থায় ধস