জেটি সংকটে ইউরিয়া সরবরাহ ব্যবস্থায় ধস

বেশিরভাগ অংশ দেবে যাওয়া সিইউএফএল জেটিতে পাঁচটির স্থলে ভিড়তে পারে একটি লাইটার দৈনিক পাঁচ হাজার টনের স্থলে সরবরাহ হচ্ছে ৭শ টন

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২৪ মার্চ, ২০২৩ at ৫:৩৩ পূর্বাহ্ণ

কৃষির ভর মৌসুমে চট্টগ্রাম থেকে ইউরিয়া সার সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ ভেস্তে যাচ্ছে। শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে সার সরবরাহ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও জেটি সংকটের কারণে সম্ভব হচ্ছে না। সিইউএফএল জেটির বেশিরভাগ অংশ দেবে যাওয়ায় পাঁচটি জাহাজের স্থলে মাত্র একটি লাইটারেজ জাহাজে সার সরবরাহ দেয়া সম্ভব হচ্ছে। সার সরবরাহের সক্ষমতা দৈনিক পাঁচ হাজার টনের স্থলে নেমে এসেছে মাত্র সাতশ’ টনে। সরবরাহ কমে যাওয়ায় সংকট প্রকট হয়ে উঠতে পারে।

 

সূত্র জানিয়েছে, দেশে বছরে গড়ে ২৬ লাখ টনেরও বেশি ইউরিয়া ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে কৃষিতে সার ব্যবহারের ভর মৌসুম চলছে। চট্টগ্রামের বহুজাতিক সার কারখানা কাফকো এবং দেশীয় সার কারখানা সিইউএফএলে উৎপাদিত ইউরিয়া দেশের কৃষি খাতে চাহিদা মেটাচ্ছে। বর্তমানে সিইউএফএলে উৎপাদন বন্ধ

থাকলেও কাফকোতে উৎপাদন চলছে। কাফকো থেকে দৈনিক আড়াই হাজার টন সার দেশের বিভিন্ন জেলাস্থ বাফার গুদামে সরবরাহের কথা। কিন্তু কাফকো থেকে দৈনিক ১৭শ টনের বেশি সার সরবরাহ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। পরিবহনজনিত সমস্যার কারণে সার সরবরাহ কমে আসে। এতে কাফকো এবং

সিইউএফএলএর গুদামে সারের পাহাড় গড়ে উঠলেও তা মাঠে সরবরাহ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম থেকে দেশব্যাপী ইউরিয়া সারের সরবরাহ বাড়াতে সড়ক পথের পাশাপাশি নৌপথেও সার পরিবহনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে সার পরিবহনে জড়িত পরিবহন ঠিকাদার এবং বাফার

কেরিয়ারদের সাথে বৈঠক করে সারের সরবরাহ বাড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ারও নির্দেশনা দেয়া হয়। বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি) এবং বহুজাতিক সার কারখানা কাফকোর উচ্চ পর্যায়ের দুটি টিমের কর্মকর্তারা কাফকো, সিইউএফএল, ড্যাপ, পরিবহন ঠিকাদার এবং বাফার

কেরিয়ারের সাথে বৈঠক করে কাফকো থেকে সার পরিবহন কমে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। বৈঠকে কাফকো থেকে সার সরবরাহ দৈনিক আড়াই হাজার টনে উন্নীত এবং তা দেশের ২৫টি বাফারে পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করতে সড়ক পথের পাশাপাশি নৌপথে সার সরবরাহ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু

উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত এবং তাগাদার পরও নৌপথে সার সরবরাহ বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। জেটি সংকটের কারণে নৌপথে সার সরবরাহ কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে। নৌপথে সার বোঝাই করার সিইউএফএলএর জেটি কার্যতঃ অচল হয়ে পড়ায় এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

চট্টগ্রামের কাফকো এবং সিইউএফএল কারখানায় উৎপাদিত সার নৌপথে পরিবাহিত হয় সিইউএফএল জেটি থেকে। আশির দশকের শেষদিকে নির্মিত প্রায় আড়াইশ’ মিটার দৈর্ঘ্যের জেটিতে একইসাথে পাঁচটি লাইটারেজ জাহাজ বার্থিং করে সার বোঝাই করা হতো। দৈনিক ৫ হাজার ২শ’ টন পর্যন্ত সার এ জেটি

থেকে দৈনিক সরবরাহ দেয়া হতো। কিন্তু দীর্ঘদিনের অব্যবস্থপনা এবং যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মাটি সরে যাওয়ায় সিইউএফএল জেটির বড় অংশ দেবে যায়। এতে করে জেটিতে জাহাজ বার্থিং দিয়ে সার বোঝাই করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। আগে যেখানে একইসাথে পাঁচটি লাইটারেজ জাহাজ বার্থিং দেয়া যেতো

এখন সেখানে মাত্র একটি জাহাজ বার্থিং দিয়ে সার বোঝাই করা সম্ভব হচ্ছে। ফলে নৌপথে সার পরিবহন তলানিতে নেমে এসেছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নৌপথে সার পরিবহন বাড়ানোর বিকল্প কোনও ব্যবস্থা নেই বলে মন্তব্য করে সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, নৌপথে সার পরিবহন বাড়ানো না গেলে দেশের ইউরিয়ার

চাহিদা মোকাবেলা কঠিন হবে। প্রচুর সারের মজুদ থাকলেও শুধুমাত্র পরিবহনজনিত সংকটের কারণে কৃষকেরা সহজে ইউরিয়া পাবে না। যা কৃষিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলেও তারা মন্তব্য করেন।

অপর একটি সূত্র বলেছে সিইউএফএল এর মতো কাফকোর একটি জেটি রয়েছে। কিন্তু কাফকোর জেটি থেকে কখনো অভ্যন্তরীণ নৌপথে পরিবহনের জন্য লাইটারেজ জাহাজে সার বোঝাই হয় না। এই জেটি থেকে শুধুমাত্র রপ্তানিকালে বড় জাহাজে সার বোঝাই করা হয়। কাফকোর জেটি অভ্যন্তরীণ নৌরুটে সার

পরিবহনের জন্য ব্যবহার করা গেলে বহু সংকটেরই সুরাহা হতো বলে সূত্র মন্তব্য করেছে। বিষয়টি নিয়ে গতকাল সিইউএফএল এর দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেন, আমাদের জেটি নষ্ট বহুদিন ধরে। এটি সংস্কারের জন্য দফায় দফায় বলা হলেও কার্যতঃ হয়নি। ফলে সংকট রয়ে গেছে। কাফকো বহুজাতিক কোম্পানি। তাদের জেটি দেশীয় ব্যবহারের জন্য দেবে কিনা তা অনিশ্চিত।

কাফকোর একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমাদের জেটি শুধুমাত্র রপ্তানির সময় বড় জাহাজে সার বোঝাই করতে ব্যবহার করা হতো। বহুদিন আমরা বিদেশে সার রপ্তানি করি না। এখন জেটি অব্যবহৃত পড়ে আছে। এটি ব্যবহার করতে দেয়া যাবে কিনা সে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা এখানের কারো নেই বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাস করতে গেলে প্রতিরোধের মুখে পড়ে
পরবর্তী নিবন্ধআলোকিত জীবন গড়ার অবারিত সুযোগ