সীতাকুণ্ডে ৫০ বছরে চিহ্নিত হয়েছে মাত্র চার বধ্যভূমি

হয়নি তথ্য অনুসন্ধান ও গবেষণা ।।অরক্ষিত বধ্যভূমিগুলোতে নেই কোনো স্মারক ও স্মৃতিস্তম্ভ

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি | শুক্রবার , ২৫ মার্চ, ২০২২ at ৮:১০ পূর্বাহ্ণ

সীতাকুণ্ডের বধ্যভূমিগুলো স্বাধীনতার ৫০ বছরেও চিহ্নিত হয়নি। অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকা এসব বধ্যভূমিতে করা হয়নি যুদ্ধের কোনো স্মারক ও স্মৃতিস্তম্ভ। হাতে গোনা কয়েকটি চিহ্নিত করা হলেও সেসব সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য অনুসন্ধান ও গবেষণায় কাজ হয়নি এখনো।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা বলেছেন, উপজেলার অন্তত ১০টি স্থানে একাত্তরের পাকিস্তানি বাহিনী হত্যাকাণ্ড চালিয়ে মানুষের লাশ ফেলেছে। চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ বলেছে, তারা বধ্যভূমিগুলো চিহ্নিতকরণ, সংস্কার ও সংরক্ষণের কাজ শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত চারটি বধ্যভূমি শনাক্ত করতে পেরেছে। সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পাদদেশে উপজেলার সবচেয়ে বড় বধ্যভূমির অবস্থান বলে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানিয়েছেন। এই বধ্যভূমির খুব কাছেই মুক্তিযুদ্ধে নিহত ভারতীয় সেনাদের স্মরণে স্থাপিত হয়েছে ভাস্কর্য ‘মৃতুঞ্জয়ী মিত্র’। এলাকাটির পাশেই যে একটি বধ্যভূমি রয়েছে, তা বোঝা যায় না। বধ্যভূমির স্থানটিতে গেলে দেখা যায়, দুটি পাহাড়ের মধ্যে গভীর খাদ।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানান, একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীর সীতাকুণ্ডে রেলস্টেশনে লোকজনকে ধরে নিয়ে হত্যা করে এই খাদে এনে ফেলত। স্থানটি এখন জঙ্গলে ঘেরা। এটি ছাড়াও উপজেলার পাক্কা মসজিদ এলাকায়, ফৌজদারহাট পুলিশ ফাঁড়ির পূর্ব পাশে, কুমিরা পরিত্যক্ত টিবি হাসপাতাল এলাকায়, ভাটিয়ারির কদমরসুল, ফৌজদারহাট ওভারব্রিজ এলাকায় বধ্যভূমি রয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ সদস্য আ ম ম দিলসাদ বলেন, উপজেলার ছোট কুমিরা এলাকায় ‘স্মৃতি ৭১’, শুকলালহাট সেতু এলাকায় ‘সেতু-৭১’ ও চন্দ্রনাথ পাহাড় এলাকায় ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মিত্র’ নামের তিনটি যুদ্ধস্মারক ও ভাস্কর্য করা হয়েছে।
সোনাইছড়ি পাক্কা মসজিদ এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা খায়ের হোসেন বলেন, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বিকেলে মসজিদে নামাজ পড়ারত অবস্থায় পাকিস্তানি সেনারা মুসল্লিদের নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করে ফেলে যায়। লাশ পড়ে ছিল মসজিদের ভিতরে, ওজু খানায় ও সীমানা প্রাচীরের ওপর। ভয়ে এলাকার মানুষ একদিন ওই মসজিদে নামাজ আদায় করতে আসেননি। একদিন পর নিহত মুসল্লিদের মধ্যে স্থানীয় ব্যক্তিদের লাশ স্বজনেরা নিয়ে যান। তবে ওই এলাকায় অচেনা ১১ জনের লাশ মসজিদের পাশে দাফন করা হয়। দীর্ঘ ৪৯ বছর পর স্থানীয় এক বীর মুক্তিযোদ্ধা নিজের উদ্যোগে বধ্যভূমিটির সংরক্ষণের উদ্যোগ নেন।
সীতাকুণ্ডের বীর মুক্তিযোদ্ধা মনিরুল ইসলাম বলেন, সীতাকুণ্ডে ১০টির বেশি বধ্যভূমি আছে। কিন্তু সরকার এগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ না নেওয়ায় অযত্নে-অবহেলায় পড়ে রয়েছে।
সীতাকুণ্ড মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে আলোচনা করে বধ্যভূমিগুলো শনাক্ত, সংস্কার ও পুনরুদ্ধার করে সংরক্ষণ করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনগরে মানবসৃষ্ট সমস্যা নিরসনে ব্যক্তি পর্যায়ে উদ্যোগী হতে হবে
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম বিমানবন্দরে লিফটে আটক তিন যাত্রী, ফ্লাইট বিলম্ব