সাড়ে তিনশো বছর আগেও লকডাউন হয়েছিল যে গ্রামে

সরোজ আহমেদ | বুধবার , ৯ জুন, ২০২১ at ৭:১৫ পূর্বাহ্ণ

বৈশ্বিক মহামারি করোনা আমাদের শিখিয়েছে অনেক নতুন শব্দ। এর মধ্যে সামাজিক দূরত্ব, লকডাউন ও কোয়ারেন্টাইন অন্যতম। করোনাভাইরাসের কারণে সারা বিশ্ব ঘরবন্দি থাকার অর্থ বুঝেছে। এমন সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব হলে কীভাবে নিজেকে ঘরে বন্দি রেখে কিংবা অন্যদের থেকে দূরত্ব গড়ে তুলে সুস্থ থাকা যায় এবং অন্যদের সুস্থ রাখা যায় তা শিখিয়েছে এই মহামারি। আর একে অন্যের থেকে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখাকে বলা হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব।
যদিও এই শব্দগুলো আমাদের কাছে একেবারে আনকোড়া। করোনাভাইরাসের কারণে আমাদের জীবনে প্রথম পরিচয় ঘটেছে এসব নতুন শব্দমালার সঙ্গে। কিন্তু অবাক করা তথ্য হচ্ছে- পৃথিবীতে আজ থেকে সাড়ে তিনশো বছর আগেও লকডাউন হয়েছিল। ছিল কোয়ারেন্টাইনও।
ইংল্যান্ডের একটি ছোট্ট গ্রাম সারা বিশ্বের কাছে লকডাউনের অর্থ শিখিয়ে গিয়েছিল। মহামারি প্লেগের সংক্রমণ রুখতে নিজেদের ঘরবন্দি করে ফেলেছিল গোটা গ্রাম। বাইরের জগতের সঙ্গে রাতারাতিই যোগাযোগ প্রায় ছিন্ন করে ফেলেছিল তারা।
সেই ছোট্ট গ্রামটির নাম ইয়াম। অবস্থান ইংল্যান্ডের ডার্বিশায়ারে। তবে ৩৫৬ বছর আগের ওই ঘটনার পর থেকে এই গ্রাম বিশ্বের দরবারে পরিচিতি পায় ‘প্লেগ গ্রাম’ নামে। তখন মহামারিকে হারিয়ে এই গ্রাম পুরোপুরি সুস্থ ও নিরাপদ হয়ে ওঠেছিল। কিন্তু ৩৫৬ বছর আগের সে সময়ের কাহিনি যেন আজও তুলে ধরে গ্রামটি। তাই পর্যটকদেরও বিশেষ আকর্ষণের জায়গা হয়ে উঠেছে ইংল্যান্ডের এই ছোট্ট গ্রামটি। গভীর অরণ্যের মধ্যে হওয়ায় গ্রামটির জনসংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। ২০১১ আদমশুমারি অনুযায়ী জনসংখ্যা মাত্র ৯৬৯ জন।
ঘটনাটি ঘটে ১৬৬৫ সালে। প্লেগ মহামারির কবলে পড়েছিল ইয়াম। সে সময় গ্রামের জর্জ ভিকারস নামে এক দর্জি লন্ডন থেকে অনেক কাপড় নিয়ে এসেছিলেন। সেই কাপড়ের সঙ্গেই গ্রামে ঢুকে পড়েছিল প্লেগের জীবাণু। পুরো গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে জীবাণু। এক সপ্তাহের মধ্যেই গ্রামজুড়ে শুরু হয় মৃত্যুর মিছিল। প্রথম মারা যান ওই দর্জি জর্জ ভিকারস। তারপর তার পরিবারের অনেকে এবং গ্রামে তার গ্রাহকদের অনেকেই।
বিষয়টি গ্রাম প্রধানের বুঝতে অসুবিধা হয়নি। প্লেগ যে বিশ্বব্যাপী ভয়ানক রূপ ধারণ করছে সে খবর তার জানা ছিল। তাই তিনি আর দেরি করেননি। রাতারাতি কড়া লকডাউন ঘোষণা করেন। গোটা ইয়াম গ্রাম নিজেকে সম্পূর্ণ আলাদা করে ফেলেছিল। গ্রামের কোনও লোকজনই নিজের বাড়ি থেকে বিশেষ বার হতেন না। পাশের গ্রামগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ প্রায় ছিন্ন করে ফেলেছিল ইয়াম।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রজাপতির জন্মদিন
পরবর্তী নিবন্ধপ্রাণহানি ঠেকাতে স্থায়ী সমাধানের আশ্বাস