প্রজাপতির জন্মদিন

সুবর্ণা দাশ মুনমুন | বুধবার , ৯ জুন, ২০২১ at ৭:১৫ পূর্বাহ্ণ

দোতলায় উঠার সিঁড়ি ধরে কিউপিডটা যেখানে বসানো, তার ঠিক পেছনেই বসে ছিল টুনটুন।আজ তার মন ভালো নেই। ঘুম থেকে উঠার আগেই চলে গেছে বাবা।বাবা যাওয়ার সময় সে কাঁদবে। তাই কেউ তাকে ঘুম থেকে জাগায়নি।মা বলেছে,বাবা ঢাকায় মস্ত বড় চাকরি করে। বাবার অনেক কাজ।কে জানে বাবা আবার কবে আসবে?ভাবতে ভাবতেই চোখ দিয়ে জল গড়াচ্ছিল টুনটুনের।
এমন সময় একটা খিল খিল করা হাসিতে চমকে তাকালো সে।একটু এগিয়েই দেখল,একুরিয়ামের সামনে উড়ছে এক মস্ত প্রজাপতি। ভীষণ সুন্দর!খয়েরির উপর সাদা ছোপ বসানো।
টুনটুনকে দেখতেই জিজ্ঞেস করে উঠল, এটা কিগো ? প্রজাপতি দেখছি পানিতে সাঁতার কাটছে,বলতেই সে আবার খিলখিল করে হেসে উঠলো? টুনটুনও হেসে ফেলল তার সাথে।
ও…এই কথা! আরে এটাতো এঞ্জেল ফিস। দেখতে প্রজাপতির মতো। প্রজাপতি আবার জিজ্ঞেস করলো,তোমরা বুঝি একুরিয়ামে কুমিরও পোষো?
এবার টুনটুনই হেসে উঠল বেশ শব্দ করে।বলল, এটা কুমির নয়, এটাও একটা মাছ। কুমিরের মতো দেখতে বলে, এ মাছের নাম হয়েছে ক্রোকোডাইল ফিস।
কথা বলতে বলতে টুনটুন ভুলেই গেল একটি প্রজাপতির সাথে সে গল্প করছে।কখন যে তার মন ভালো হয়ে গেছে এটাও সে খেয়াল করেনি।এবার সে জিজ্ঞেস করলো, আচ্ছা প্রজাপতি তোমার নাম কি?
প্রজাপতি বললো,আমার নাম ঝিলমিল।
হঠাৎ মনে পড়তেই টুনটুন আবার জিজ্ঞেস করলো, আচ্ছা ঝিলমিল তুমি কথা বলো কিভাবে? এর আগেতো কখনোই কথা বলা প্রজাপতি দেখিনি।ঝিলমিল বললো, ও এই কথা,আমি হচ্ছি প্রজাপতির দেশের রাজকন্যা। আমি কথা বলতে পারি কিন্তু সবাই আমাদের দেখতে পাই না। দেখলুম তুমি কাঁদছিলে তাই তোমার মন ভালো করতে কথা বলতে এলুম।
জানো গত শীতে কিছু মানুষ আমার বাবাকে ধরে নিয়ে যায়।কথা বলা প্রজাপতি দেখিয়ে অনেক টাকা আয় করবে বলে তারা বাবাকে মিউজিয়ামে আটকে রাখে। সেখানে বাবার খুব কষ্ট হয়। ছটফট করতে করতে বাবা একদিন মরেই গেল। তোমরা মানুষরা খুব খারাপ।বলতে বলতেই কেঁদে ফেলল প্রজাপতিটা। টুনটুনেরও খুব কান্না পেল। বাবার কথা শুনে ওর মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল।
টুনটুনকে কাঁদতে দেখে প্রজাপতি ঝিলমিল নিজেকে সামলে নিল। বললো, জানো টুনটুন কাল না আমার জন্মদিন। অনেকক্ষণ হয়ে গেছে আমি এখানে এসেছি, মা নিশ্চয় আমার জন্য ভেবে ভেবে অস্থির। তুমি কি যাবে আমার সাথে?
টুনটুনতো এক পায়ে খাড়া। এমনিই জন্মদিনের কেক কাটা দেখতে এবং কেকের ক্রিম খেতে তার ভীষণ ভালো লাগে, তার উপর ঝিলমিল নামের এই প্রজাপতিটাকে সে ভীষণ ভালোবেসে ফেলেছে। প্রজাপতি বললো,তাহলে আমার ডানা ছুঁয়ে দাও। অমনি টুনটুনেরও বেরিয়ে এল দুটো ঝিলমিলে ডানা। দুজন মিলে উড়ে গেল প্রজাপতির দেশে।
পরদিন সকালবেলা সূর্য উঠতেই চারদিকে সাজ সাজ রব পড়ে গেল। মা প্রজাপতি কলা পাতায় গড়ানো কুয়াশার জলে সূর্যস্নান করালো ঝিলমিলকে । নাম না জানা ফুলেরা সব রং বেরঙের পাপড়ি মেলে সুগন্ধে মাতোয়ারা করে তুলল পুরো রাজ্যকে।
আরেকটু বেলা গড়াতেই ফুলের মধু দিয়ে মুখ মিষ্টি করা হল রাজ্যের সকল প্রজাপতিদের।বিকেল বেলায় ফড়িং রাজ্য, মৌমাছি রাজ্য সহ বিভিন্ন রাজ্য থেকে রাজারা আসলেন প্রজাপতি ঝিলমিলের জন্য উপহার নিয়ে। সব যেন স্বপ্নের মতো সুন্দর। সন্ধ্যে নামতেই আকাশ থেকে টুপটাপ নেমে এল তারারা।হাসি,গান আর গল্পে মেতে উঠল প্রজাপতি রাজ্য।এত কিছুর মধ্যে টুনটুনের আর মনেই পড়লোনা মা- বাবার কথা।
টুনটুন… এই টুনটুন… ওঠ মা,অনেক বেলা হয়ে গেছে। টুনটুনের কোন সাড়া না পেয়ে বাবা আবার তাড়া দিল…
মা, দেখবে চল, বাগানে কি সুন্দর প্রজাপতির মেলা বসেছে।
বাবার গলা জড়িয়ে ঘুমিয়ে ছিল টুনটুন।কখন যে স্বপ্নের দেশে চলে গেছে কে জানে।
আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে শুধু জিজ্ঞেস করল,বাবা প্রজাপতিরা কি কথা বলতে পারে?

পূর্ববর্তী নিবন্ধশুনি বৃষ্টির গান
পরবর্তী নিবন্ধসাড়ে তিনশো বছর আগেও লকডাউন হয়েছিল যে গ্রামে