সাশ্রয়ী ও মিতব্যয়ী হওয়ার পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর

| বুধবার , ১৮ মে, ২০২২ at ৭:২৯ পূর্বাহ্ণ

বর্তমান প্রেক্ষাপটে অর্থনীতির উপর চাপ কমাতে প্রকল্প অনুমোদনে অগ্রাধিকার চিহ্নিত করার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখনই জরুরি নয় এমন প্রকল্প কিছুটা ধীর গতিতে বাস্তবায়ন করার কথা বলেছেন। তিনি চলমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক বাজারদরের ঊর্ধ্বগতি ও পণ্য সরবরাহে সংকটের মধ্যে দেশে খাদ্যশস্যের উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি সবাইকে মিতব্যয়ী হওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পত্রিকায় কী লিখল, তাতে ঘাবড়ে না গিয়ে দেশ ও দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে যে কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন তিনি। খবর বিডিনিউজের।
‘বৈশ্বিক এ মন্দার সময়ে’ বেছে বেছে প্রকল্প নেওয়া হবে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এই প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও বাজেট দিতে যাচ্ছি। ভালোই বাজেট মোটামুটি আমরা মনে করি। আজকে সেটা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির অনুমোদন দেব। এখানেও আমি এইটুকু অনুরোধ করব প্রত্যেকটা মন্ত্রণালয়, এখানে মন্ত্রীরা আছেন, সচিবরা আছেন, পরিকল্পনা কমিশনে যারা আছেন- তাদেরকে আমি অনুরোধ করবো আমরা আপনাদের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির প্রকল্প অনুমোদন করে দেব, আমরা নেব এটা ঠিক। কিন্তু এগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আপনাদের অগ্রাধিকারটা ঠিক করতে হবে।
সরকারপ্রধান বলেন, কোনটা আমার এক্ষুণি প্রয়োজন সেগুলো আমরা করব, আর যেগুলো এক্ষুণি প্রয়োজন নেই সেগুলো একটু ধীর গতিতে করব। যেন আমাদের অর্থনীতির উপর চাপটা না আসে। যেখানে সারা বিশ্বব্যাপী এই মন্দা এবং বিশ্বব্যাপী একটা দুর্ভিক্ষ অবস্থার দিকে যাচ্ছে সেখানে আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে। সেজন্য টাকা খরচের ক্ষেত্রে বা সব ক্ষেত্রেই আমাদের অত্যন্ত সতর্ক হতে হবে। অহেতুক আমাদের সম্পদ যেন আমরা ব্যয় না করি। সেগুলো আমাদের সংরক্ষণ করতে হবে। আমরা যদি খুব ভালোভাবেই হিসেব করে চলতে পারি তাহলে আমাদের দেশে কোনো সমস্যা হবে না।
করোনাভাইরাস মহামারী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, আন্তর্জাতিক বাজারদরের ঊর্ধ্বগতি এবং সংকটের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী সবাইকে সব কিছু ব্যবহারে সাশ্রয়ী ও মিতব্যয়ী হওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, যেগুলো আমাদের আমদানি করতে হয় তার তো দাম বেড়ে যাচ্ছে। আমাদের জাহাজ ভাড়া বেড়ে গেছে। আর তাছাড়া যেখানে যেখানে উৎপাদন হত উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে এবং সেখানে যুদ্ধ এবং করোনার কারণে। তার ফলে আমাদের দেশের ভিতরে মূল্যস্ফীতি বা জিনিসের দাম বাড়বে।
সবাই যদি একটু সাশ্রয়ী হয়, মিতব্যয়ী হয় বা সব ব্যবহারে সবাই যেন একটু সতর্ক হয় তাহলে খুব সমস্যা হওয়ার কথা না। আর দ্রব্যমূল্যের দাম যে বেড়েছে, এটা যে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির কারণে এই কথাটাও দেশবাসীর সামনে তুলে ধরতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, করোনা, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এটা আমাদের অর্থনীতির ওপর বিরাট প্রভাব ফেলেছে। শুধু আমরা না সমস্ত পৃথিবীর উন্নত দেশ, অনুন্নত দেশ সব দেশেই সমস্যা। দ্রব্যমূল্যের চাপ, ইউরোপে এখন এমন এমন দেশ আছে যেখানে ১৭ পারসেন্ট থেকে ৫০ পারসেন্ট পর্যন্ত দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়ে গেছে। জার্মানির মত জায়গায় ভোজ্য তেলের অভাব, একমাত্র অলিভ অয়েল ছাড়া কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না। ইংল্যান্ডের মতো জায়গায় সেখানে তেল নির্দিষ্ট করে দেওয়া, এক লিটারের বেশি কেউ নিতে পারবে না। আমেরিকায় ইনফ্লেশন আট ভাগের ওপর উঠে গেছে, ১০ ভাগে পৌঁছে যাবে। ১ ডলারের ডিজেল-পেট্রোল এখন ৪ ডলারের ওপর উঠে গেছে। সেখানেও এখন মানুষ এক বেলা খেতেই কষ্ট।
পত্রিকা পড়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার দরকার নেই : পত্রিকায় কী লিখল, তাতে ঘাবড়ে না গিয়ে দেশ ও দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে যে কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সরকারি কর্মকর্তাদের পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমি সেইভাবেই চলি। সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে চলছি বলেই আজকে দেশটা এগিয়ে যাচ্ছে। আমি যদি ভয়ে ভয়ে থাকতাম- ও কী লিখল, ও কী বলল, ও কী করল, তাহলে কোনো কাজ করতে পারতাম না। নিজের বিশ্বাস হারাতাম। কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, অনেক সময় পত্রিকা পড়ে আপনারা অনেকে ঘাবড়ান। এই পত্রিকা এই সমালোচনা করেছেৃ। বাংলাদেশের কিছু পত্রিকা আছে তারা সব কিছুতে একদিন ভালো লিখলে পরের সাতদিন লিখবে খারাপ। এটা তাদের চরিত্র। আমি চিনি সবাইকে। হাই স্কুল থেকে তো রাজনীতি করি। সবাইকে আমার চেনায় আছে। সব পরিবারকেও চেনা আছে। এটা তাদের চরিত্র। কাজেই ওই পত্রিকা দেখে ঘাবড়ানোর কোনো দরকার নেই। আর পত্রিকা পড়েও সিদ্ধান্ত নেওয়ার দরকার নেই। সরকারপ্রধান বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নেব দেশের মানুষের মুখের দিকে তাকিয়ে, দেশের কথা চিন্তা করে, দেশের উন্নয়নের কথা চিন্তা করে। এই কথাটা সব সময় মনে রাখতে হবে।
কর্মকর্তাদের আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলার পরামর্শ দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, অনেক সময় আপনাদের অনেকের মুখেই শুনি- এই পত্রিকা লিখেছে। ওটা নিয়ে কখনও ঘাবড়ানোর কিছু নেই। ওটা নিয়ে চিন্তাও করবেন না। নিজের আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলবেন। সেটাই আমি চাই। তাহলে দেশ এগিয়ে যাবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকেন বাড়ছে চালের দাম
পরবর্তী নিবন্ধকর্ণফুলী নদী ও খালের সংযোগস্থলে স্টিলের ট্র্যাপ অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ