কেন বাড়ছে চালের দাম

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১৮ মে, ২০২২ at ৭:২৮ পূর্বাহ্ণ

কৃষকের ঘরে উঠেছে বোরো মৌসুমের নতুন ধান। ধানের এই ভরা মৌসুমেও ঊর্ধ্বমুখী চালের বাজার। সাধারণত বাজারে নতুন ধান আসা শুরু হলে চালের বাজার কমে যায়। কিন্তু গত ক’বছর ধরে এর ব্যতিক্রম ঘটছে। চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারিতে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় সব ধরনের চালের দাম হঠাৎ বেড়ে গেছে। এবার হাওরে বন্যা ও বৃষ্টিতে ফসলহানি হয়েছে। এছাড়া কিছু কিছু শিল্পগ্রুপ ধানচাল মজুদ করার কারণেও চালের দামের এই ঊর্ধ্বগতি বলছেন তারা। গতকাল নগরীর দুই বৃহৎ চালের আড়ত চাক্তাইয়ের চালপট্টি ও পাহাড়তলীতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একদুই সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে সব ধরনের সরু চালের দাম বস্তায় ২০০ টাকা বেড়ে গেছে। এর মধ্যে জিরাশাইল সিদ্ধ, নাজিরশাইল সিদ্ধ, মিনিকেট সিদ্ধ ও কাটারিভোগ সিদ্ধ, স্বর্ণা সিদ্ধ, বেতি আতপ, পাইজাম আতপ, মিনিকেট আতপ, কাটারিভোগ আতপ, মোটা সিদ্ধ ও চিনিগুড়া চাল অন্যতম। তবে স্থিতিশীল আছে কেবল মোটা সিদ্ধ চালের দাম। এসব চালের সিংহভাগ আসে উত্তরাঞ্চলের

দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, ময়মনসিংহ, বগুড়া, মেহেরপুর ও কিশোরগঞ্জের আশুগঞ্জ থেকে।

চালের আড়তদাররা জানান, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে জিরাশাইল সিদ্ধ বস্তায় ২০০ টাকা বেড়ে গিয়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার টাকায়। এছাড়া মিনিকেট সিদ্ধ ১০০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৩৫০ টাকা, পাইজাম সিদ্ধ বস্তায় ১০০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ২৫০ টাকা, কাটারিভোগ সিদ্ধ ২০০ টাকা বেড়ে গিয়ে ৩ হাজার ৬০০ টাকা, কাটারিভোগ আতপ বস্তাপ্রতি ২০০ টাকা বেড়ে গিয়ে বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৫০০ টাকা, মিনিকেট আতপ ১০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬০০ টাকা, পাইজাম আতপ ১০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৩৫০ টাকা, স্বর্ণা সিদ্ধ ১০০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ২০০ টাকা, নাজিরশাইল সিদ্ধ ১৫০ টাকা বেড়ে ৩ হাজার ৫০০ টাকা এবং মোটা সিদ্ধ চাল ১০০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৯০০ টাকায়।

পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এস এম নিজাম উদ্দিন আজাদীকে বলেন, আমরা অতীতে সবসময় দেখেছি, নতুন ধান উঠলে চালের দাম কমে যায়। কিন্তু গত কয়েক বছর সেটি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। আমরা যতটুকু শুনেছি, দেশের কিছু শিল্পগ্রুপ সরু ধান কিনে মজুদ করছে। বর্তমানে সরু ধানের মণ প্রায় ১ হাজার ১০০ টাকা। ধানের ভরা মৌসুমে এটা অস্বাভাবিক বলা চলে। ধানচালের বাজারে সরকারের এই মুহূর্ত থেকে নজরদারি বাড়ানো উচিত।

চট্টগ্রাম রাইচ মিলস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রফিক উল্লাহ বলেন, চালের বাজার এখন বাড়তি। বিশেষ করে ধানের দাম বেশি। এবার প্রত্যাশিত ফসল উৎপাদিত হয়নি। ধানে চিটা বেশি, যার ফলে দাম বাড়ছে।

চট্টগ্রাম চাউল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজম আজাদীকে বলেন, এ বছর হাওরে ভারতীয় পানির ঢল থেকে সৃষ্ট বন্যায় ফসলহানি হয়েছে। বলা যায়, ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ধান নষ্ট হয়েছে। এছাড়া একসময় প্রতি মণ ধান থেকে ২৪২৫ কেজি চাল পাওয়া যেত। এখন পাওয়া যাচ্ছে ১৮ কেজির মতো। ফলে ধানের ভরা মৌসুমেও বাজার কমার পরিবর্তে বাড়ছে। আরেকটি বিষয় আমরা সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি, সরকার প্রতি বছর স্থানীয়ভাবে কৃষকদের কাছ থেকে ধানচাল কিনে। এবার সরকার যদি সেটি বিদেশ থেকে কিনে তবে দেশের বাজারে চাপ পড়বে না। বাজারে ধানচালের সরবরাহও স্বাভাবিক থাকবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধখোলা বাজারে ডলার একশ ছাড়াল
পরবর্তী নিবন্ধসাশ্রয়ী ও মিতব্যয়ী হওয়ার পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর