সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে তৈরি করতে হবে জনসচেতনতা

| মঙ্গলবার , ২১ মার্চ, ২০২৩ at ৫:০১ পূর্বাহ্ণ

বিজ্ঞান প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ ইন্টারনেটের কারণে যেমন যোগাযোগ বেড়েছে, তেমনি নানা ধরনের সুবিধা পাচ্ছে মানুষ। বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর একটা বিশাল অংশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী এবং এই ব্যবহারকারীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তবে ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা যেভাবে বেড়ে যাচ্ছে সেই অনুপাতে সচেতন গ্রাহকের সংখ্যা বাড়ছে না। যার কারণে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় অনেক ব্যবহারকারী জড়িয়ে পড়ছে সাইবার অপরাধের জালে। বলা যায় সুবিধার পাশাপাশি একইসঙ্গে বাড়ছে সাইবার ক্রাইম, উদ্বেগ। গত ১৯ মার্চ দৈনিক আজাদীতে ‘বাড়ছে সাইবার ক্রাইম’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রযুক্তির আধুনিকায়ন, প্রশিক্ষিত দক্ষ জনবল ও সচেতনতার অভাবেই সাইবার ক্রাইমের প্রবণতা বাড়ছে। ডিজিটাল মাধ্যমের ব্যবহার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনলাইনে নারীর প্রতি সহিংসতা ও হয়রানির ঘটনা বাড়ছে। ফেসবুকসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহারের ফলে প্রতিদিনই ঘটছে নানান অঘটন। নগর গোয়েন্দা শাখাসহ সিএমপির প্রায় সবকটি থানায় এ সংক্রান্ত বেশ কিছু অভিযোগপত্র জমা পড়েছে।

দুটি গোয়েন্দা সংস্থা এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রযুক্তি খাতে নিত্যনতুন সফটওয়্যার আসছে। সাইবার অপরাধীরা সেগুলো ব্যবহার করছে। সাইবার ক্রাইমের ধরনও পরিবর্তিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সাইবার ক্রাইম নিয়ে গবেষণাকারীরা বলেন, একদল নিজের অজান্তেই সাইবার ক্রাইম করছে। প্রতিহিংসা বা একান্ত কৌতুহলের কারণেই তারা এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। আরেক দল জেনেশুনেই অন্যের ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে সাইবার ক্রাইম করছে। সাইবার ক্রাইমের কারণে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী নারীরা। পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন এর তথ্যানুযায়ী, সাইবার হয়রানির শিকার ভুক্তভোগীদের ৮০ ভাগের বয়স ১৪ বছর থেকে ২২ বছর। অপরাধের শিকার হয়ে একটি বড় অংশই অভিযোগ করেন না।

পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, ফেসবুক আইডি হ্যাকের শিকার হচ্ছেন অনেকেই। এ ছাড়া ইমেইল আইডি হ্যাক, ফেক আইডি তৈরি করে ব্ল্যাকমেইল করা, মোবাইল ব্যাংকিং জালিয়াতি ও অন্যান্য হ্যারাসমেন্টের শিকারও হচ্ছেন অনেকে। বিশেষ করে ফেক আইডির মাধ্যমে অন্যের বিরুদ্ধাচরণ করা মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘এ কথা পরিষ্কার যে, ভুক্তভোগীদের বিরাট অংশ বিভিন্ন কারণে আইনের আশ্রয় নিচ্ছেন না এবং এই আইনের আশ্রয় না নেয়ার কারণে অপরাধী বারবার একই অপরাধ করার সাহস পেয়ে যাচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে সমাজে বেড়ে যাচ্ছে সাইবার অপরাধ। এখন সময় এসেছে এই সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণের দিকে নজর দেওয়ার। সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে যে বিষয়টিতে সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করা উচিৎ তা হচ্ছে, সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে। জনসচেতনতা তৈরির কাজে রাষ্ট্র থেকে ব্যক্তি সবার দায় আছে। ব্যক্তিকে যেমন তার পারিবারিক পর্যায় থেকে জনসচেতনতা তৈরির কাজ করতে হবে, পরিবারের কেউ ভুক্তভোগী হলে তার পাশে থেকে সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে তার ন্যায়বিচার নিশ্চিতে কাজ করে যেতে হবে ঠিক তেমনি রাষ্ট্রকে ব্যাপক আকারে এই সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে জনমত তৈরিতে মনোনিবেশ করতে হবে। পাঠ্যপুস্তকে সাইবার সচেতনতামূলক বিষয়গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সাইবার অপরাধের ভিকটিম কিভাবে আইনি সহায়তা পেতে পারে সেই আইনি বিষয়গুলোকে সহজ এবং বোধগম্য ভাষায় ব্যাপক আকারে প্রচার করতে হবে। এই জন্য আমাদের গণমাধ্যমকে এগিয়ে আসতে হবে। গণমাধ্যমে সাইবার সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান বেশি বেশি প্রচার করতে হবে।’

সিটিও ফোরাম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তপন কান্তি সরকার তাঁর এক লেখায় বলেছেন, তথ্যপ্রযুক্তিতে নিরাপত্তা বিভিন্ন স্তরে অব্যাহত নজরদারি আর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে হয়। প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের দায়িত্ব হলো সব নাগরিকের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়া। কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে পরিচালনা পর্ষদ, নির্বাহী পর্ষদ এবং একদল তথ্যপ্রযুক্তি নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হবে। সবাইকে একযোগে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। বিশ্বজুড়ে তথ্যপ্রযুক্তি একটা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এরই সুযোগ নিচ্ছে অসাধু তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা যাদের আমরা হ্যাকার বলে থাকি। তবে সচেতন হলে এদের থেকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে নিরাপদ রাখা কঠিন কিছু নয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে