সময়সীমা শেষ, সরেনি অবৈধ স্থাপনার অধিকাংশ

বিশেষায়িত বার্ন ইউনিট স্থাপনে নির্ধারিত জায়গা

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২১ মার্চ, ২০২৩ at ৪:৩৫ পূর্বাহ্ণ

বিশেষায়িত বার্ন ইউনিট স্থাপনের জন্য চূড়ান্ত করা গোঁয়াছি বাগান এলাকায় কাঁচা ও আধা পাকাসহ তিন শতাধিক স্থাপনা রয়েছে। এসব স্থাপনার বেশির ভাগই মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের কর্মচারীদের গড়ে তোলা। বহিরাগতও অনেকে রয়েছেন। বেশির ভাগই ঘর তুলে ভাড়া দিয়েছেন। যার সবটাই অবৈধ বলে জানায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অবৈধ এসব স্থাপনা সরাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ২০ মার্চ পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়। গতকাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বেঁধে দেয়া এ সময়সীমা শেষ হয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অল্পকিছু স্থাপনা নিজ থেকেই সরিয়ে নিয়েছে বাসিন্দারা। তবে অবৈধ এসব স্থাপনার অধিকাংশই রয়ে গেছে।

বার্ন ইউনিট স্থাপনে চূড়ান্ত হওয়া এ জায়গায় থাকা স্থাপনা সরিয়ে না নেয়ায় এখন প্রশাসন ও পুলিশের দিকে তাকিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

অবৈধ স্থাপনার অধিকাংশই সরেনি নিশ্চিত করে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান আজাদীকে বলেন, ২০ মার্চ পর্যন্ত আমরা তাদের সময় দিয়েছিলাম। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অল্পকিছু সংখ্যক বাসিন্দা নিজ থেকেই তাদের স্থাপনা সরিয়ে নিয়েছেন। অনেকে স্থাপনা (বাসা) বেচাবিক্রি করে দিয়েছেন বলে শুনেছি। কিন্তু বেশির ভাগই সরেনি।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যারা স্থাপনা সরিয়ে নেন নি, তাদের বিরুদ্ধে এখন প্রশাসন ও পুলিশ ব্যবস্থা নেবে জানিয়ে হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলেন, আমরা জেলা প্রশাসন ও পুলিশকে আগেই চিঠি দিয়ে রেখেছি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে স্থাপনা না সরালে তারা ব্যবস্থা নেবেন বলে আমাদের জানিয়েছিলেন। এখন তারাই ব্যবস্থা নেবেন। আমরা প্রশাসন ও পুলিশের দিকে তাকিয়ে আছি।

জানতে চাইলে বিষয়টি অবগত আছেন জানিয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হাসান গতকাল আজাদীকে বলেন, আমরা এ বিষয়ে অবগত আছি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে না সরলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। বিষয়টি যেহেতু জনস্বার্থ সম্পৃক্ত। আমরা কয়েকদিনের মধ্যেই পদক্ষেপ নেব।

এর আগে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রস্তাবনার প্রেক্ষিতে বিশেষায়িত বার্ন ইউনিট স্থাপনে গোঁয়াছি বাগানের এই জায়গাটি পরিদর্শন করে চীনা টিম। পরিদর্শনের পর জায়গাটি উপযুক্ত এবং পছন্দ জানালেও এখানে থাকা বসতি ও স্থাপনা সরানোর বিষয়ে জানতে চেয়ে চিঠি দেন তারা। চীনা প্রতিনিধি টিমের চিঠির প্রেক্ষিতে এখানে বৈধ কোনো স্থাপনা নেই এবং অবৈধ এসব স্থাপনা সরিয়ে ফেলার কথা জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের এ সংক্রান্ত চিঠির পরই বিশেষায়িত বার্ন ইউনিট স্থাপনে ওই জায়গাটি চীনের পক্ষ থেকে চূড়ান্ত করা হয়। সর্বশেষ গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ৫ সদস্যের একটি চীনা টিম চট্টগ্রামে আসে। তারাও গোঁয়াছি বাগানের এ জায়গাটি কয়েক দফা পরিদর্শন করে বিদ্যমান স্থাপনা সরাতে তাগিদ দেন।

সেখানকার বাসিন্দাদের সরে যেতে আগেই নোটিশ করা হয় জানিয়ে চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান আজাদীকে বলেন, অবৈধ স্থাপনা তুলে এখানে থাকছেন বা ভাড়া দিচ্ছেন; এমন তিন শতাধিক নাম আমরা পেয়েছি। যেহেতু এখানে বৈধ কোনো স্থাপনা নেই, সেহেতু সরকারি প্রয়োজনে নির্দেশ দেয়া মাত্রই তারা এসব স্থাপনা সরিয়ে ফেলতে বাধ্য। এই মর্মে তারা সবাই আমাদের কাছে লিখিত দিয়েছে। আমরাও বলেছি খুবই শর্ট নোটিশে তাদের উঠে যেতে হবে। তারা তাতে রাজি হয়ে লিখিত দিয়েছে।

প্রসঙ্গত, শুধু জায়গা সংক্রান্ত জটিলতায় দীর্ঘ সময় ধরে বিশেষায়িত এ বার্ন ইউনিট স্থাপন থমকে রয়েছে। সর্বশেষ প্রস্তাবিত গোঁয়াছি বাগানের জায়গাটি পছন্দ করেছে চীনা টিম। শতভাগ তাদের অর্থ সহায়তায় বার্ন ইউনিটটি করে দিতে প্রস্তত রয়েছে তারা। কাজ শুরুর কথাও বলেছে।

চট্টগ্রামবাসীর জন্য এ সুযোগটি হাতছাড়া করা যাবে না জানিয়ে সারাদেশের বার্ন চিকিৎসা সম্প্রসারণে সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকা ডা. সামন্ত লাল সেন আজাদীকে বলেন, যেভাবেই হোকজায়গাটি খালি করে তাদের (চীনা টিমকে) বুঝিয়ে দেয়া জরুরি। ৯ বছর ধরে চেষ্টা করছি। এখানে (চট্টগ্রামে) আধুনিক চিকিৎসাসুবিধা সম্বলিত একটি বার্ন ইউনিট হোক। কিন্তু বিভিন্ন জটিলতার কারণে সেটি হচ্ছিল না। চীনা প্রতিনিধিরা এবার গোঁয়াছি বাগানের জায়গাটি খুবই পছন্দ করেছে। তারা প্রস্তাবনা নিয়ে এসেছে। শতভাগ অর্থ সহায়তায় দেড়শ শয্যার বিশেষায়িত বার্ন ইউনিটটি তারা করে দেবে। তারা ২০ মিলিয়ন ডলার খরচ করে এটি করে দিতে প্রস্তুত। এখন কেবল নির্ধারিত জায়গাটি তাদের বুঝিয়ে দেয়া বাকি। এ কাজে সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানিয়েছেন ডা. সামন্ত লাল সেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসুখের সূচকে বাংলাদেশের ২৪ ধাপ অবনমন
পরবর্তী নিবন্ধপ্রতারণা মামলায় হেলেনা জাহাঙ্গীরের দুই বছরের কারাদণ্ড