সব আছে ঠিকঠাক, নেই শুধু ক্রিকেট

জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়াম

ক্রীড়া প্রতিবেদক | মঙ্গলবার , ১৭ নভেম্বর, ২০২০ at ১০:০৯ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের ক্রিকেটের অন্যতম লাকি গ্রাউন্ড জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়াম। শুধু তাই নয়, যেকোনো বিদেশি দলের পছন্দের তালিকায় উপরের দিকেই থাকে এই স্টেডিয়ামটি। কিন্তু করোনার কারণে গত দশ মাসেরও বেশি সময় এই মাঠে নেই কোনো ক্রিকেট। অথচ স্টেডিয়ামের সবকিছুই আছে আগের মত। সেই সবুজ মাঠ, সেই উইকেট, দৃষ্টিনন্দন সব স্থাপনা…। রোদ, ঝড়, বৃষ্টিতে গ্যালারির রংটা একটু ফ্যাকাশের দিকে গেলেও স্টেডিয়ামের সবুজ চত্বরটি যেন তৈরি হয়ে প্রতীক্ষায় আছে কবে পড়বে ক্রিকেটারদের পদধূলি।
স্টেডিয়ামের মূল ফটক দিয়ে প্রবেশ করতেই চোখে পড়বে সবুজের সমারোহ। দশ মাসে স্টেডিয়ামের ভেতর-বাহির জঞ্জালে পরিণত হতে পারত যদি না মাঠ কর্মীরা নিজ সন্তানের মত একে আগলে না রাখত। তাদের যত্ন ও পরিচর্যায় উইকেটও রয়েছে আগের মতই তৈরি। তবে ক্রিকেটহীনতায় স্টেডিয়ামটি যেন হাহাকার করছে। চাতক পাখির মত তার তৃষিত প্রতীক্ষা ক্রিকেটারদের বরণ করতে। এই মাঠে সর্বশেষ ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজন করা হয়েছিল গত ৩১ জানুয়ারি থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি। বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের সাউথ জোন এবং নর্থ জোনের ম্যাচটি ছিল এই স্টেডিয়ামের সর্বশেষ ম্যাচ। এরপর আর ক্রিকেটের একটি বলও গড়ায়নি এ মাঠে। আবার কবে বল গড়াবে তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। যদিও আগামী জানুয়ারিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বাংলাদেশ সফরের কথা রয়েছে। তখন যদি ভাগ্য খুলে এই মাঠের।
এরই মধ্যে ঢাকার মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়ে গেছে বিসিবি প্রেসিডেন্ট কাপ। আগামী ২৪ নভেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের সবগুলো ম্যাচই হবে মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে। কাজেই এই টুর্নামেন্টেও কপাল খুলছে না জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের।
খেলা না থাকলেও স্টেডিয়ামের মাঠ, উইকেট কিংবা নানা স্থাপনা ঠিক এবং সুন্দর রাখতে এই করোনার মাঝেও প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়ে গেছেন মাঠ কর্মীরা। করোনার ভয়াবহতার সময়ও স্টেডিয়ামের মাঠ কর্মীরা ছিলেন তৎপর। এ সময় বিসিবির পক্ষ থেকে তাদেরকে বিশেষ বোনাসও দেওয়া হয়েছে বলে জানান এক কর্মকর্তা। সবমিলিয়ে বর্তমানে স্টেডিয়ামের ৭ম পৃষ্ঠার ৬ষ্ঠ কলাম
মাঠ এবং উইকেট রয়েছে একেবারে শতভাগ প্রস্তুত। চাইলে যেকোনো সময় ম্যাচ আয়োজন করা যাবে। যদিও সে তুলনায় স্টেডিয়ামের গ্যালারিটা বেশ বিবর্ণ। ২০১১ বিশ্বকাপের সময় স্টেডিয়ামের গ্যালারি জুড়ে বসানো হয়েছিল চেয়ার। কিন্তু গত ৯ বছরে রোদ-ঝড়-বৃষ্টিতে গ্যালারির বড় একটা অংশে ভেঙে নষ্ট হয়ে গেছে অনেক চেয়ার। ফলে একটি হতশ্রী চেহারা দেখা দিয়েছে গ্যালারিতে। গ্যালারির সে সব চেয়ার মেরামতের জন্য বিসিবি একাধিকবার উদ্যোগ নিলেও তা আর হয়ে উঠেনি। ফলে গ্যালারি ছাড়া স্টেডিয়ামের বাকি সবকিছুই রয়েছে দারুণ সাজানো গুছানো। বিশেষ করে মাঠ এবং উইকেট বলতে গেলে চমৎকার।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাঠ কর্মীরা দল বেধে কাজ করছে মাঠের অপ্রয়োজনীয় ঘাস তুলে ফেলতে। বৃষ্টির কারণে মাঠের যে সব স্থানে ছোটখাট ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে সে সব স্থানে মাটি দিয়ে ভরাট করার পাশাপাশি সেখানে ঘাস তোলারও কাজ চলছে। স্টেডিয়ামের ভারতীয় কিউরেটর সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন মাঠের কাজের।
মাঠ কর্মীরা জানালেন, তারাও অপেক্ষায় আছে কবে আবার ক্রিকেটারদের পদচারণায় সরব হবে এই স্টেডিয়াম। যেহেতু বছরের একেবারে শেষ দিকে চলে এসেছে সেহেতু এ বছরে আর এই মাঠে ক্রিকেট গড়াবে কিনা তা নিয়ে রয়েছে তাদের সংশয়।
তবে ইদানিং একটি সম্ভাবনার কথা শোনা যাচ্ছে ক্রিকেট পাড়ায়। যদি মুজিববর্ষ উপলক্ষে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা ডিসেম্বরে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের আয়োজন করে তাহলে হয়তো দুয়েকটা ম্যাচ মাঠে গড়াতে পারে জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। অন্যথায় অপেক্ষায় থাকতে হবে জানুয়ারিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল আসে কিনা সেদিকে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকী আজ
পরবর্তী নিবন্ধসিসিএল-এমজিআই বিলিয়ার্ডে তাজবির চ্যাম্পিয়ন