লাশের পাশের ফোন ধরিয়ে দিল ৬ খুনিকে

মাদক কারবার নিয়ে দ্বন্দ্ব, তিন মাস ধরে বাড়ায় সখ্যতা, কয়েকবার পরিকল্পনার পর খুন

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২৫ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৪:৫৭ পূর্বাহ্ণ

মাদক কারবারের দ্বন্দ্বে সোর্সের হাতে খুন হয়েছে আরেক সোর্স। খুন হওয়া ব্যক্তির লাশের পাশ থেকে উদ্ধার হওয়া মোবাইল ‘খুনি’ শনাক্ত করে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। নগরীতে গত তিন দিন আগে সড়কের পাশ থেকে কায়েস নামে পুলিশের ‘সোর্সের’ খুনের অভিযোগে নগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ছয় জনকে গ্রেপ্তারের পর এ রহস্য উদঘাটন করেছে। গ্রেপ্তার ছয় জন হলেন হুমায়ূন কবির ওরফে মাসুদ তালুকদার (৪৫), মো. খোকন ওরফে সোনা মিয়া (৩১), রফিকুজ্জামান সানি ওরফে আফরান (২২), নজরুল ইসলাম (২৩), মো. রায়হান (২১) ও আব্দুল কাদের জীবন (২২)

চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (বন্দরপশ্চিম) মোহাম্মদ আলী হোসেন জানান, নিহত কায়েস ও গ্রেপ্তার হুমায়ূন কবির দুই জনই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ‘সোর্স’ হিসেবে কাজ করত। চার মাস আগে তারা আইস (মাদক) কিনতে রাঙামাটিতে পাহাড়ি এক ব্যক্তির কাছে যায়। কায়েস ও হুমায়ূন রাঙামাটিতে মাদক কিনতে যাওয়ার দুইএকদিন পর সেই মাদক কারবারীরা হুমায়ুনকে মাদক দেখতে আবার রাঙামাটিতে যেতে বলে। ওইদিন হুমায়ূনকে তারা পুলিশের সোর্স সন্দেহে বেদম মারধর করে এবং ইট দিয়ে শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে আঘাত করে। সেখান থেকে সে কোনরকমে প্রাণে বেঁচে ফিরে আসে। নিহত কায়েস মাদক কারবারিদের কাছে হুমায়ূনকে পুলিশের সোর্স হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল বলে সন্দেহ ছিল তার। তখন থেকেই মূলত সে কায়েসকে খুন করার পরিকল্পনা করে। অবশেষে গত ২০ জানুয়ারি পরিকল্পিতভাবে ডেকে নিয়ে খুন করা হয় কায়েসকে। পরদিন ২১ জানুয়ারি সকালে নগরীর কর্ণফুলী থানাধীন সিডিএ আবাসিক এলাকায় সড়কের পাশ থেকে মোহাম্মদ কায়েসের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশ উদ্ধারের পর কর্ণফুলী থানার ওসি দুলাল মাহমুদ আজাদীকে জানিয়েছিলেন, কায়েসের পেটে, বুকে ধারালো অস্ত্রের ছয় থেকে সাতটি আঘাতের চিহ্ন আছে। তার মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ কিছুই খোয়া যায়নি। নিহত কায়েস আইনশৃক্সখলা রক্ষাকারী বাহিনীর ‘সোর্স’ হিসেবে কাজ করতেন বলে জানিয়েছিলেন ওসি দুলাল মাহমুদ।

সিএমপির ডিবি পুলিশের পরিদর্শক কায়সার হামিদ বলেন, লাশ উদ্ধারের সময়ই আমরা বুঝতে পেরেছিলাম এটা একটি হত্যাকাণ্ড। কিন্তু কারা, কী কারণে খুন করেছে এসব বিষয় উদঘাটনের জন্য কোন ক্লু পাচ্ছিলাম না। এক পর্যায়ে লাশের পাশ থেকে ভিকটিমের মোবাইল পাওয়া যায়। সেখানে কথোপকথনের সূত্রে একটি নম্বর পাই। কিন্তু সেটি বন্ধ ছিল। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে অবস্থান শনাক্ত করে আমরা প্রথমে ওই মোবাইল নম্বর ব্যবহারকারী হুমায়ূনকে গ্রেপ্তার করি। তার তথ্যে বাকি পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পরিদর্শক কায়সার বলেন, গত তিন মাস ধরে হুমায়ূন নিহত কায়েসের সাথে সখ্য বাড়িয়ে দিয়েছিল। বিভিন্ন সময়ে তাকে ডেকে এনে খুন করার পরিকল্পনা করলেও কায়েস কখনও একা তার সঙ্গে দেখা করতেন না। যার কারণে কয়েকবার পরিকল্পনা করেও হুমায়ূন মারতে পারেনি কায়েসকে। এরপর হুমায়ূন তার অন্য এক বন্ধুর সঙ্গে কায়েসকে খুন করার বিষয়ে পরামর্শ করে এবং এক লাখ টাকার চুক্তি করে। হুমায়ূনকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে উপকমিশনার আলী হোসেন জানান, গত ২০ জানুয়ারি বিকালে কাজের কথা বলে কৌশলে কায়েসকে ফোন করে বাসা থেকে ডেকে আনে হুমায়ূন। কিছুক্ষণ একসঙ্গে এদিকওদিক ঘোরাঘুরি করে সন্ধ্যা নামার পর দুইজন একটি সিএনজি টেক্সি নিয়ে চট্টগ্রামকক্সবাজার মহাসড়কের পাশে সিডিএ আবাসিক এলাকায় গিয়ে দাঁড়ায়। এ সময় কায়েসকে টেক্সিতে রেখে হুমায়ূন মইজ্জারটেক এলাকায় যায়। আরেকটি সিএনজি টেক্সি করে সে তার অন্য বন্ধু ও সহযোগীদের নিয়ে আবার কায়েস যে স্থানে ছিলেন সেখানে যায়। তারা ছুরি ও লোহার ধারালো পাত দিয়ে সিএনজি টেক্সির দুই পাশ থেকে আঘাত করতে থাকে কায়েসকে। এক পর্যায়ে কায়েস নিজের জীবন রক্ষা করতে আবাসিক এলাকার ড্রেনের দিকে দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টা করে। হামলাকারীরা সেখানে গিয়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে। গ্রেপ্তার ছয়জন ছাড়াও হত্যাকাণ্ডে জড়িত আরও কয়েকজন আছে এবং তাদের ধরতে অভিযান চলছে বলে জানান গোয়েন্দা কর্মকর্তা আলী হোসেন।

গতকাল আসামিরা ধরা পড়েছে জেনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন কায়েসের বাবা। তিনি বলেন, তারা আমার ছেলেকে মেরে ফেলছে। তাদের আপনারা ফাঁসি দেন, তাদের শাস্তি দেন। শরীরের ১১ জায়গায় ছুরি মারছে। কত কষ্ট পেয়েছে আমার কায়েস। আমার ছেলেরে না মেরে, তারা আমাকে মেরে ফেলতো। তার তিনটা ছোট ছোট বাচ্চা আছে। তাদের কী হবে?

পূর্ববর্তী নিবন্ধজলকদর খালে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে পুড়ল ফিশিং বোট
পরবর্তী নিবন্ধদুই জঙ্গি গ্রেপ্তারের ঘটনায় মামলা, কারাগারে প্রেরণ