রেল লাইনে ভূতের বাড়ি

রশীদ এনাম | বুধবার , ১২ জানুয়ারি, ২০২২ at ৬:২৮ পূর্বাহ্ণ

ঝিকঝিক ঝিক করে বুঁ বুঁ সুবর্ণ এক্সপ্রেস প্রবেশ করছিল চট্টগ্রামের পাহাড়তলী স্টেশনের দিকে। রেলওয়ে বস্তির পাশে ছিল আদি বাড়ি, অনেকে ভূতের বাড়ি হিসেবে চিনে। বস্তির এলাকার পাশ থেকে প্রায় সময় কিছু কিশোর ছুটে চলা ট্রেনের মধ্যে পাথর নিক্ষেপ করত। এই ঘটনাটি কুমিল্লায় হয়েছে বেশ কয়েকবার। নিক্ষেপ করা পাথরের আঘাতে বেশ কয়েকজন শিশু আহত হয়েছিল। চট্টগ্রামে ছুড়ে মারা পাথরের আঘাতে মারাও গিয়েছিল। নিষ্ঠুর পাথর খেলা কখনও ট্রেনের বগিতে কখনও বা ট্রেনের জানালায়। কিশোরেরা খুব আনন্দ পেত। কারও মাথায় পাথরের আঘাতে ফেটে রক্ত বের হলে ওরা আনন্দে ফেটে পড়ত। বিপদগামী কিশোরগুলো বেশির ভাগই সুবিধাবঞ্চিত ও নিষ্পেষিত পরিবারের। কিশোরদের নিষ্ঠুর কাজটি অনেকটা কুয়োর ব্যাঙের গল্পের মতো। সাঁতার কেটে আনন্দে মেতেছে ব্যাঙের দল, শিশুরা মিলে পাথর নিক্ষেপ করল ব্যাঙের উপর। ব্যাঙ বলল, তোমাদের যা আনন্দ খেলা আমাদের জন্য তা মরণ খেলা।
একদা রাতে এক কিশোর চলন্ত ট্রেনে পাথর ছুড়ে মারতে লাগল। পাথর হাতে নেয়ার সাথে সাথে পাথরটা কথা বলে উঠল, হাতের সাথে চুম্বকের মতো পাথরটি লেগে রইলো। বস্তির কিশোর ভয়ে আঁতকে উঠল। কে কথা বলছে কে কে ? কোথাও কেউ নেই। পাথরটি হাত থেকে কিছুতেই নিচে রাখা যাচ্ছে না। হঠাৎ পাথর কথা বলে উঠল, এই আমি পাথর ভূত, অনেকদিন ধরে তোমাকে খুঁজছি। আমাকে ছুড়ে মেরে আমাকে দিয়ে অন্যকে আঘাত করেছ। তোমার ছুড়ে মারা পাথর থেকে শিশুরা পর্যন্ত রেহাই পাইনি। কেন এই ঘৃণিত কাজ করছো ? কেন মরণ খেলায় মেতেছো তোমরা ? তোমাদের নিক্ষেপ করা পাথরের আঘাতে যে মানুষ মারা যায় তোমরা কি তা বোঝ না। কত নিষ্ঠুর হলে তোমরা এ খেলা খেলো, তোমরা কি জানো?
আমরা অনেকদিন ধরে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি রেলওয়ে স্টেশনে তোমাদের কিশোর গ্যাং বাহিনীকে খুঁজে বেড়াচ্ছি। চলন্ত ট্রেনে পাথর ছুড়ে মারার মজা বুঝবে এবার। তোমার হাতের পাথর দিয়ে আজকে তোমার মাথা ফাটানো হবে। যেভাবে অন্যজনের মাথায় পাথর ছুড়েছিল ঠিক সেভাবে দেখো পাথর ভূতেরা আজকে কি মজা দেখায়”! হঠাৎ রেল লাইনের পাথরগুলো এক সাথে করতালি দিয়ে উঠল। বড় একটা পাথর হামাগুড়ি দিয়ে কিশোরদের ধাওয়া করেতে আসছে। ওরে বাবারে! এ যে পাথর দৈত্য ভূত। কিশোর দৌড়াচ্ছে, পাথর ও পিছু পিছু দৌড়াচ্ছে। এক সময় রেললাইনের পাশে জরাজীর্র্ণ এক ভূতুরে বাড়িতে লুকানোর চেষ্টা করল। সাথে সাথে ভূতুরে বাড়ি সব দরজা বন্ধ হয়ে গেল। পাথর ছুড়ে মারা কিশোরেরা হাউ মাউ করে কাঁদতে লাগল। অন্য পাথরগুলো বলছে কোন লাভ নেই। যারা পাথর ছুড়ে মানুষ হত্যা করেছে এই গুহায় তাঁদেরকে পাথর ভূত বানিয়ে বন্দি করে রাখা হয়েছে যুগ যুগ ধরে। কিশোর দল বলতে লাগল, জীবনে এমন নিষ্টুর কাজ করব না। তওবা করলাম, মা গো বাবা গো আমাদের ছেড়ে দিন! আপনাদের পায়ে ধরছি, আর কখনও পাথর নিক্ষেপ করব না। চলন্ত ট্রেনে নয় শুধু, কোন বাসে কখনও পাথর ছুড়ব না। পাথর ভূতের সর্দারজী এসে বলল, তোমাদের আনন্দ ছিল কিন্তু যার শরীরের পাথর মেরেছো ওর জীবন শেষ।
ওদের পরিবারের সারা জীবনের কান্না হয়েছে তোমাদের ছুড়ে মারা পাথর। কি ভয়ানক খেলা খেলেছো? ভূতের বাড়িতে তোমাদেরকে পাথর বানিয়ে অনন্তকাল রেখে দেওয়া হবে। বাঁচার পথ একটাই, তোমাদের কিশোর গ্যাং রেল লাইনের আশেপাশে যারা পাথর নিক্ষেপসহ বিভিন্ন খারাপ কাজ করে বেড়ায় তাঁদের সবার নাম ঠিকানা দাও। সব জেলায় আমাদের পাথর ভূতেরা কাজ করছে। চলন্ত ট্রেনে পাথর ছুড়ে মারা দুই কিশোর সবার নাম প্রকাশ করে দিল। সবাইকে বিভিন্ন জেলা থেকে বন্দি করে ভূতের বাড়িতে নিয়ে আসা হলো। কিশোরদের সাথে কিছু খারাপ বয়স্কলোক ও জড়িত, ওরা শিশু-কিশোরদের দিয়ে চলন্ত ট্রেনে পাথর ছুড়ে মারার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছিল। ওদের গলায় বড় বড় পাথর ঝুলিয়ে দেয়া হলো।
পাথর হয়ে যাওয়া কিশোরদের পরিণতি দেখে সবাই শপথ করল যে, আর কখনও চলন্ত রেলে পাথর ছুড়ে মারবে না। মানুষের এবং সরকারি জানমালের ক্ষতি কখনও করবে না।
একসময় পাথর হয়ে যাওয়া কিশোরেরা আস্তে আস্তে মানুষে রূপান্তরিত হয়ে গেল। রেল লাইনের ভূতের বাড়ি থেকে বের হতে লাগল। এক কিশোর চিৎকার করে বলল, ওরে বাপরে কে কোথায় দৌড়ে পালা, পাথর ভূত ঘাড় মটকে পাথর বানিয়ে দিবে। ভূতের বাড়ি থেকে সবাই দৌড়ে বাড়ি ফিরছিল ঠিক সে সময় হুইসেল বাজিয়ে সোনার বাংলা এক্সপ্রেস রাজধানীর উদ্দেশ্য যাত্রা শুরু করল। ঘুম ভেঙে গেল, সুবর্ণ এক্সপ্রেসে বসে বসে ভূত সমগ্র পড়তে পড়তে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ছিলাম টেরও পায়নি। ট্রেনে ঘোষণা দিচ্ছে, আমরা অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছে যাব, আপনারা নিজ দায়িত্বে মালপত্র গুছিয়ে নিন। ট্রেন থেকে নামার সময় তাড়াহুড়া করবেন না। ধন্যবাদ সবাইকে। ট্রেনের যাত্রীরা নিজ থলে, গাঁটরি-বোঁচকা নিয়ে নামতে লাগল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিভিন্নস্থানে শীতবস্ত্র বিতরণ
পরবর্তী নিবন্ধশীত সকালে ঘোরাঘুরি