রাউজানে নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র

গ্যাসনির্ভর ৪৩৭ মেগাওয়াটের এ প্রকল্পে ব্যয় হবে দুই হাজার কোটি টাকা ।। ঠিকাদার নিয়োগের প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে ।। অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২০ জানুয়ারি, ২০২১ at ৬:৫০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের রাউজানে দুই হাজার কোটি টাকায় আরেকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। বর্তমান রাউজান ৪২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র সংলগ্ন পিডিবির নিজস্ব জমিতেই ৪৩৭ মেগাওয়াট সক্ষমতার গ্যাস নির্ভর নতুন কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্টটি নির্মিত হবে। প্রকল্পের ঠিকাদার নিয়োগের প্রক্রিয়াও প্রায় শেষ পর্যায়ে। সরকারের ক্রয় সংক্রান্ত কমিটি অনুমোদন দিলেই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
পিডিবি সূত্রে জানা গেছে, ৪২০ মেগাওয়াট রাউজান তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের আয়ুষ্কাল ২০২৩ সালে শেষ হচ্ছে। পিডিবির অর্থায়নে চায়না মেশিনারি ইক্যুপমেন্ট কর্পোরেশন ১৯৯৩ গ্যাস নির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করে। ২১০ মেগাওয়াট সক্ষমতার দুই ইউনিটের একটি দীর্ঘদিন থেকে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ রয়েছে। করোনার কারণে চায়না থেকে প্রকৌশলী আসতে না পারায় প্রায় এক বছর হয়ে গেলেও ত্রুটি সারানো সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে প্লান্টটির সক্ষমতাও কমে ৩৬০ মেগাওয়াটে নেমেছে। বর্তমানে গ্যাস সংকটের কারণে পুরো প্লান্টটি বন্ধ রয়েছে। পূর্ণ ক্ষমতায় উৎপাদনে গেলে প্লান্টটিতে দৈনিক ৯৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন হতো।
পিডিবি জানিয়েছে, চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে বর্তমান তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের লাগোয়া পিডিবির নিজস্ব জায়গায় ৪৩৭ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন নতুন কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্টটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রাথমিক কার্যক্রম শেষে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রকল্পের ইপিসি (ইঞ্জিনিয়ারিং, প্রকিউরমেন্ট এন্ড কন্সট্রাকশন) ঠিকাদার নিয়োগে দরপত্র আহবান করা হয়। ২০২০ সালের ২৬ আগস্ট দরপত্র গ্রহণ করা হয়। পর্যালোচনা শেষে সেপকো চায়না সর্বনিম্ন দরদাতা নির্বাচিত হয়েছে। ৪৩৭ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্টের প্রকল্প পরিচালক পিডিবির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মুন্সী বশির আহমেদ আজাদীকে বলেন, বর্তমান রাউজান তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাশেই নতুন পাওয়ার প্লান্ট হচ্ছে। এটি হবে কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট। প্রকল্পের জন্য দুই হাজার কোটি টাকার ডিপিপি (ডিটেইল প্রজেক্ট প্রপোজল) অনুমোদন আছে। ইতোমধ্যে ইপিসি ঠিকাদার নিয়োগের টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে ১৬শ কোটি টাকায় সেপকো চায়নাকে ইপিসি ঠিকাদার নির্বাচিত করা হয়েছে। ক্রয় সংক্রান্ত কমিটির অনুমোদন পেলেই আগামী জুন মাসের আগেই প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু করা যাবে।
তিনি বলেন, নতুন প্রকল্পে জ্বালানি হিসেবে গ্যাস ব্যবহৃত হবে। নতুন প্রযুক্তির প্লান্ট হওয়ায় গ্যাসের সাশ্রয় হবে। আগের হিসেবে যেখানে ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট লাগতো সেখানে লাগবে ৭০ মিলিয়ন ঘনফুট। গ্যাস থেকে প্রথমে ২৬০ মেগাওয়াট এবং প্লান্টের স্টিম প্রসেস থেকে অবশিষ্ট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে। আশা করা হচ্ছে, ২০২৩ সালে প্রকল্পের নির্মাণ সম্পন্ন করা যাবে। এটি উৎপাদনে গেলে পুরনো তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ করে দেয়া হবে। কারণ ওই বছরই বর্তমান প্লান্টের আয়ুষ্কাল শেষ হবে।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে চট্টগ্রামে গ্যাস নির্ভর ছয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। এরমধ্যে ২২৫ মেগাওয়াট শিকলবাহা কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট, ১৫০ মেগাওয়াট শিকলবাহার ডুয়েল ফুয়েল পাওয়ার প্লান্ট, সদ্য বিলুপ্ত ৬০ মেগাওয়াট শিকলবাহা পাওয়ার প্লান্ট, ১৮০ মেগাওয়াট সক্ষমতার রাউজান পাওয়ার প্লান্ট, বাড়বকুণ্ড ২২ মেগাওয়াট পাওয়ার প্লান্ট, ৭১ মেগাওয়াট মালঞ্চ পাওয়ার প্লান্ট।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅ্যান্টিবায়োটিকের অকার্যকর হয়ে ওঠা ঠেকাতে গবেষণা
পরবর্তী নিবন্ধপুঁজি যখন ১০ হাজার থেকে ৯০ হাজারে