মিশ্র ডোজ নিয়ে দেশে গবেষণার উদ্যোগ

| রবিবার , ৪ জুলাই, ২০২১ at ৬:২৪ পূর্বাহ্ণ

বিশ্বের কয়েকটি দেশে এখন করোনাভাইরাসের টিকার মিশ্র ডোজ নিয়ে আলোচনার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশেও এ নিয়ে গবেষণার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকারের কাছে এখন সিনোফার্ম, মডার্না ও ফাইজারের ৫৭ লাখ ডোজ টিকা রয়েছে।
অক্সফোর্ড-আ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দিয়ে দেশে ফেব্রুয়ারি মাসে গণটিকা কার্যক্রম শুরু হয়। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে সেই টিকার পূর্বনির্ধারিত ডোজ পাওয়া অনিশ্চিত হলে সংকটে পড়ে টিকা কার্যক্রম। সরকার বিভিন্ন দেশ থেকে চেষ্টা করে টিকা আনার। সেই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এখন হাতে রয়েছে চীনের সিনোফার্ম, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মডার্না ও ফাইজারের টিকা রয়েছে। প্রায় দুই মাসের বিরতির পর সরকার আবারো শুরু করেছে গণটিকা কর্মসূচি। কিন্তু সমস্যা রয়েছে নানা জায়গায়। দেশে এমন ১৫ লাখ মানুষ রয়েছেন, যারা অক্সফোর্ড-আ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছিলেন। কিন্তু এখনো দ্বিতীয় ডোজ নিতে পারেননি।
একই টিকার দুটি ডোজ না দিয়ে দুটি ভিন্ন টিকার দুটি ডোজ দিলে সেটি নিরাপদ এবং বেশি কার্যকর কিনা তা নিয়ে বিশ্বের নানা স্থানে গবেষণা চলছে। জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল নিজে দুটি ভিন্ন টিকার দুটি ডোজ নিয়েছেন। তাকে প্রথম ডোজ হিসেবে দেওয়া হয়েছিল অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা। দ্বিতীয় ডোজ মডার্নার।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের পরিচালক তাহমীনা শিরীন বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং আইইডিসিআরের পক্ষে টিকার মিশ্র ডোজ ব্যবহারের গবেষণার জন্য একটা প্রোটোকলপত্র তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছেন। একদিকে কোভিশিল্ডের ভ্যাকসিন আসছে না। অন্যান্য জায়গা থেকে আমরা ভ্যাকসিন পাচ্ছি। সেক্ষেত্রে আমাদের ‘মিঙ অ্যান্ড ম্যাচ’ করতেই হবে। কারণ একেক সময় একেক রকম ভ্যাকসিন আসবে। তাই এই গবেষণাটা এখন বাংলাদেশের জন্য জরুরি। সেই গবেষণা আমরা করব এবং তার ফলাফলটা আপনাদের সাথে শেয়ার করব।
আইইডিসিআর বলছে, সরকারের তরফ থেকে ঘোষণা এসেছে, কিছু তহবিল উদ্বৃত্ত আছে। সেই অর্থ কাজে লাগানোর জন্য বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান গবেষণা প্রোটোকলপত্র জমা দিয়েছে। তবে প্রতিযোগিতামূলক যাচাই-বাছাইয়ের পর তহবিল পাওয়ার ভিত্তিতে গবেষণা শুরু করা নির্ভর করবে। তবে গবেষণার ফল পাওয়া সময় সাপেক্ষ হবে বলে জানাচ্ছে সংস্থাটি।
এদিকে সরকারের টিকা বিষয়ক ন্যাশনাল ইমুনাইজেশন টেকনিক্যাল এঙপার্ট গ্রুপ নাইটেগ টিকার মিশ্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। নাইটেগের সদস্য সচিব ড. বে-নজীর আহমেদ দেশের মধ্যে মিশ্র ডোজের গবেষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন দিলে আর কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন।
তিনি বলেন, এখানে ২/৩টা বিষয় আছে। প্রথমত এর কার্যকারিতা। দেখা গেল এর কার্যকারিতা ঠিক আছে। তারপর আসে এর ফলে কোনো জটিলতা হচ্ছে কিনা। তৃতীয়ত এর স্থায়িত্ব কতটুকু? এই তিনটা প্রশ্নের মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত আপনি যখন সাধারণ জনগণকে কিছু দেবেন সেটা নৈতিকভাবে দেওয়া যায় না।
জুন মাসের শুরুর দিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বার্তায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনকে উদ্ধৃত করে জানানো হয়েছিল, কোভ্যাঙ কর্মসূচি থেকে ১০ লাখ ৮০০ ডোজ অঙফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তবে কবে নাগাদ এ টিকা হাতে আসবে কিংবা কীভাবে বাংলাদেশ এটি সংগ্রহ করতে পারবে তা নিশ্চিত করা হয়নি। এই বিষয়ে জানতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক কর্মকর্তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও উত্তর পাওয়া যায়নি। তবে আইইডিসিআর বলছে, যারা প্রথম ডোজ নিয়েছেন ২য় ডোজের জন্য তারা তিন মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধটানা সপ্তম দিন শতাধিক মৃত্যু, কমেছে শনাক্ত
পরবর্তী নিবন্ধযুক্তরাষ্ট্র ও চীন থেকে এলো ৪৫ লাখ টিকা