মার্চ মাসের বেদনা ও গৌরব

ড. গৌরী ভট্টাচার্য | মঙ্গলবার , ২৬ মার্চ, ২০২৪ at ৫:৫২ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের ইতিহাসে মার্চ অত্যন্ত বেদনার মাস, আবার অন্যদিকে ঘটনাবহুল গৌরবের মাস। এই মাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্ম লাভ করেছেন। এই মাসেই বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ যা বিশ্ববাসীকে জানান দেয় বাঙালি ও বাংলাদেশ সম্পর্কে। এই মাসেই বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

১৯৭১ সালের ১লা মার্চ থেকে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানে সৈন্য সমাবেশ করতে থাকে। যদিও ৪৭ সন থেকেই এদেশের মানুষ পশ্চিমাদের দ্বারা নানাভাবে শোষণ এবং বঞ্চনার শিকার হতে থাকে। দীর্ঘ ২৩/২৪বছর ধরে বাঙালিরা নিগৃহীত হয়। এই একপেশে শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে ১৯৭১ এর ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে লক্ষ লক্ষ মানুষের সমুখে বজ্রকন্ঠে আহ্বান জানান, যুদ্ধের জন্য সবাইকে প্রস্তুত হতে, দেশকে শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করতে। ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ স্লোগান দিয়ে সর্বস্তরের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে আহবান জানালেন। পুরো মাস জুড়ে দিনে মিছিল রাতে কার্ফু চলতে থাকে। ২৫শে ঢাকার আকাশে সকাল থেকে হেলিকপ্টার ঘোরাঘুরি করতে সবার নজরে আসে। দেশের ভিতরে থমথমে অবস্থা মানুষ তখন নানা ধরনের অজানা আতঙ্কে আহার নিদ্রা ভুলতে বসেছে। মধ্যরাতে সেই ভয়াবহ নীরবতা ভেদ করে শুরু হয় প্রচণ্ড শব্দের গোলাগুলি, মানুষের বাঁচার আকুতি, আর্তচিৎকারে প্রকম্পিত হলো ধরাতল। পরদিন ভোর থেকে মানুষ সবকিছু ফেলে শহর ছেড়ে পালাতে থাকে, স্রোতের মত মানুষ গ্রাম ছেড়ে ভারতে শরণার্থী হয়ে আশ্রয় নেয়।

২৬শে মার্চ কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা পত্র পাঠ করা হয়। পর্যায়ক্রমে কুষ্টিয়ার মেহেরপুরের অন্তর্গত বৈদ্যনাথ তলার আমবাগানে স্বাধীন বাংলাদেশের সরকার গঠন করা হয়। প্রতিবেশী ভারত থেকে বাংলাদেশের সাহসী যুবকরা মুক্তিযুদ্ধ, গেরিলা যুদ্ধের ট্রনিং নিয়ে দীর্ঘ নয়মাস যুদ্ধ করতে থাকে। পাকবাহিনীর দোসর এদেশীয় কিছু রাজাকার, আলবদর, আলসামস দেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে পশ্চিম পাকিস্থানীদের পক্ষে অন্যায় ঘৃণ্য কাজে সহায়তা করে। গ্রামের বাড়িঘরে আগুন দেয়, লুটপাট করে, ধর্ষণ করে। দেশকে মেধাশূন্য করতে পাকিস্তানীদের দেখিয়ে দেয়, চিনিয়ে দেয় ডাক্তার, শিক্ষক, আইনজীবী, বুদ্ধিজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক তাদের সহায়তায় নৃশংসভাবে হত্যা করে দেশের অগণিত কৃতী সন্তান। আর যারাই জাতি, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে দেশকে স্বাধীন করতে জীবনের তোয়াক্কা না করে মুক্তিযুদ্ধ করছে, তাদের সকলের তখন একটাই পরিচয় মুক্তিযোদ্ধা। অবশেষে ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ বেলা ৪.৩০মি রেসকোর্স ময়দানে মুক্তি বাহিনী ও মিত্র বাহিনীর নিকট পরাজিত পাকবাহিনী আত্মসমর্পণ করে। মুক্তিযোদ্ধারা বিজয় লাভ করে, সেই বিজয় উল্লাসে ঘরে বাইরে বিজয় পতাকা নিয়ে মিছিল জয় বাংলার স্লোগান। মার্চমাসের ভয়াবহতার সমূচিত জবাব বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন, পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের সৃষ্টি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্বাধীনতা
পরবর্তী নিবন্ধমহান স্বাধীনতা