মানুষের ভূতের ভয়

আরিফ রায়হান | বুধবার , ৩০ জুন, ২০২১ at ৭:২৭ পূর্বাহ্ণ

ভূতের কথা শুনলেই ভয়ে শরীরটা কেমন জানি শিউড়ে ওঠে। আবার ঘরে কিংবা নির্জনে একা চলতে গেলে মনে হয় এই বুঝি সত্যি সত্যি ভূত এসে গেল। আজ আর রক্ষে নেই। এমন কতো ভয় ঘুরপাক খায় মনে। আসলে ভূত কি আছে? যদি নাই বা থাকে তাহলে মানুষ কেন ভূতের ভয় পায়? ভৌতিক কাহিনী নিয়ে কেনো এতো গল্প নাটক সিনেমা তৈরি হয়? এতো কিছুর পরও মানুষের প্রশ্ন ভূত দেখতে কেমন? কেনই বা মানুষ ভূত দেখে? আবার ভূতেরও নাকি হরেক রকম নাম আছে। যেমন- পেত্নী, শাকচুন্নি, চোরাচুন্নি, পেঁচাপেঁচি, মেছোভূত, গেছোভূত, বেঘোভূত, মামদো ভূত, দেও, নিশি আরো কতো নাম। আবার এদের নাকি আচরণে এক এক রকম বৈশিষ্টও আছে।
ত্রিশ বছর বয়সী অ্যামেথিস্ট রিয়েলম নামে এক তরুণী টিভি চ্যানেলে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, তিনি নাকি ভূতের সঙ্গে বসবাস করেছেন। তার দাবি তিনি এক বা দুজন নয়, প্রায় বিশজন ভূতের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব রয়েছে। তার এই কথায় ভূত বিরোধীদের মাঝে ব্যাপক হৈচৈ শুরু হয়। আবার আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা নিজেদের অতি সাহসী প্রমাণ করার জন্য ভূত দেখেছেন বলে দাবি করে নানা কাহিনী শোনান। কিন্তু অ্যামেথিস্ট রিয়েলমের কথায় সারা পৃথিবীতেই আলোড়ন পড়ে যায়। পক্ষে বিপক্ষে অনেকেই অনেক কিছু বলতে শুরু করেন। কেউ কেউ এটাকে সত্য বলে মনে করলেও অনেকে দিব্যি মিথ্যা বলে উড়িয়ে দেন। আসলে ভূত কে দেখেছে কিংবা কে দেখেনি এটা বড় কথা নয়, বড় কথা হলো ভূতের বিষয়ে বিজ্ঞান কী বলে?
আসলে অধিকাংশ মানুষ ভূত না দেখলেও ভৌতিক কথাবার্ত শুনেছে বেশি। যেমন অমুককে অমুক জায়গায় ভূতে পেয়েছে। অমুক নাকি রাতে ভূতের চেরাগ দেখেছে, এমন আরো কতো গল্প। তবে ভূতের অস্তিত্ব নিয়ে তাদের এসব কথাবার্তা বিজ্ঞানীরা বহু আগেই নাকচ করে দিয়েছেন। তবুও যুগের পর যুগ ধরে চলে আসছে এই বিতর্ক। ভবিষ্যতেও শেষ হবে না। কারণ এক গবেষণায় দেখা গেছে পৃথিবীর ৩০ শতাংশ মানুষ এখনো ভূত ও অতিপ্রাকৃতিক ঘটনায় বিশ্বাস করেন। আর এই বিশ্বাসের পালে হাওয়া দিতে প্রায়ই উড়ে আসে নানা ভৌতিক গল্প।
‘বনের বাঘে খায় না, মনের বাঘে খায়’ এই প্রবাদটির সাথে আমরা সবাই পরিচিত। আর ভূতে বিশ্বাস বা ভূত দেখার ব্যাপারেও বিজ্ঞানীরা এই কথাটিকেই মনে করেন সবচেয়ে বড় একটি কারণ। ভূত বিশ্বাসীদের মনে সবসময় গেঁথে থাকে ভৌতিক কল্পনা। আর ছোট্ট বয়সে আমাদের মনে এই ভূতের ভয় ঢুকিয়ে দেন আমাদের মা, বাবা, দাদা, দাদি, নানা-নানীরাই। যারা আমাদের ঘুম পাড়ানোর জন্য কিংবা কান্না থামানোর জন্য ভূতের গল্প শোনান। এতে করে আমাদের মনে ভূত স্থায়ী জায়গা করে নেয়।
বিজ্ঞানের বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, যারা ভূতে প্রচণ্ড বিশ্বাসী, ভূতের অস্তিত্বের ব্যাপারে সন্দেহ করে না তাদের ওপর কাজ করে এক বিশেষ বৈদ্যুতিক তরঙ্গ। ডি পিজ্জাগালি নামে এক বিজ্ঞানী ২০০০ সালে গভীর পর্যবেক্ষণ করে এই বিষয়টি তুলে আনেন। পরীক্ষায় তিনি দেখিয়েছিলেন, ভূতে বিশ্বাসীরা তাদের মস্তিষ্কের ডান গোলার্ধে নিজের ওপর অতিরিক্ত আস্থা পোষণ করেন। অর্থাৎ ভূতে অবিশ্বাসীদের তুলনায় ভূতে বিশ্বাসীদের মস্তিষ্কের ডান দিকে বৈদ্যুতিক ক্রিয়া বেশি সক্রিয়। আর যার ফলে নিজের ভূত দেখার অদম্য আগ্রহের সঙ্গে তাল মিলিয়ে, সামনের দেখা স্বাভাবিক জিনিসকে ভুতুড়ে করে তোলে মস্তিস্কের ডান গোলার্ধের এই অতি সক্রিয় তরঙ্গগুলি।
গবেষণায় দেখা যায়, একা থাকলেই মানুষ ভূতের ভয় পায় বেশি। যারা ভূত দেখেছেন বলে থাকেন তারা বেশিরভাগই কিন্তু একা থাকেন। দলবদ্ধ অবস্থায় ভূত দেখার কথা খুব বেশি শোনা যায় না। রাতের আঁধারে একাকিত্ব থাকা অবস্থায় ছাদে কারো পায়ের আওয়াজ টের পাওয়া যায়। বিদগুটে শব্দ শোনা যায় এসব ভেবেই মনের মধ্যে ভূতুড়ে পরিবেশ তৈরি হয়। সব কথায় এক কথা ভূত আছে কি নেই এই বিতর্ক একদিনের না, আবার এটা শেষও হবার নয়। তবে ভূত যদি থেকে থাকে মানুষের মনে- বনে জঙ্গলে নয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমরণফাঁদ
পরবর্তী নিবন্ধইউএনওর সঙ্গে পটিয়া গাউছিয়া কমিটির মতবিনিময়