বৃষ্টি মেয়ে ও ঘাসফড়িং

সুজন সাজু | বুধবার , ১৩ অক্টোবর, ২০২১ at ১১:১১ পূর্বাহ্ণ

ঝুপ ঝুপ ঝরছে বৃষ্টি। বৃষ্টি মেয়ে ঠিক যেন নূপুর পায়ে নাচছে। এদিক সেদিক জমে গেছে বৃষ্টির পানি। ঘাসফড়িংরা একটু খেলবে সেই সুযোগও দিচ্ছে না বৃষ্টি মেয়ে। গাছের সবুজ পাতার আড়ালে চুপটি করে বসে আছে।
কখন বৃষ্টি মেয়ের নাচ থামবে? এদিকে সকাল থেকেই ঝুপ ঝুপ ঝরছে বৃষ্টি। একটু যে থামবে, ভাবসাবে সেটাও বুঝা যাচ্ছে না। ঘাসফড়িং ভাবছে বৃষ্টি মেয়েকে পেলে তাদের কষ্টের কথা বুঝিয়ে বলবে। কিন্তু বৃষ্টি মেয়েকে পাবে কোথায়? সারাদিন এই স্থির হয়ে বসে থাকা। পেটের ক্ষুধায় পুরো শরীরটা ক্লান্ত লাগছে। এদিক সেদিক উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছে, যদি বৃষ্টি মেয়ের কোন দেখা পায়?
না, এবার আর বসে থাকা যাবে না। বাইরে বের হতেই হবে। যেই ভাবা সেই কাজ। এদিকে বৃষ্টি মেয়ে ঝুপ ঝুপ নাচছে।
আকাশের সূর্যটাও যেন বৃষ্টি মেয়ের সাথে চুক্তি করছে, আজ সারাদিন লুকিয়ে থাকবে? ঘাসফড়িং সবুজ পাতার আড়াল থেকে বের হয়ে একটি জবা ফুলের উপর এসে বসল। বৃষ্টির ফোটা যখন ঘাসফড়িঙের গায়ে পড়ছে এসে, ঘাসফড়িংও চিৎকার দিয়ে ওঠে। কিন্তু কার চিৎকার কে শোনে? বৃষ্টি মেয়ে তার ইচ্ছে মত ঝরছে তো ঝরছেই।
এবার ঘাসফড়িঙের চিৎকারে জবা ফুলও মেতে ওঠল। ঘাসফড়িং অবাক হয়ে জবা ফুলের উপর বসে আছে।
জবা ফুল বলল, ভাই ঘাসফড়িং তোমার চিল্লাচিল্লি আমার গায়ের উপর এসে কেন? কিছুক্ষণ চুপ হয়ে রইল ঘাসফড়িং। কারণ, এর আগেও কত শতবার এই জবা ফুলের উপর বসে কত খেলাধুলা করেছে নিজের ইচ্ছে মতো কখনো জবা ফুল বিরক্তবোধ করেনি। জবা ফুলের আওয়াজ শোনার সৌভাগ্য হয়নি। আজ কেন মেতে ওঠল? ধীরে ধীরে জবা ফুলের মন মেজাজ বুঝার চেষ্টা করছে ঘাসফড়িং। বলল, ওরে আমার জবা ফুল বন্ধু, তুমি আজ আমার উপর বিরক্তিবোধ প্রকাশ করলে এতে আমি লজ্জিত ও দুঃখিত।
কিন্তু ফুল বন্ধু তুমিই বলো, সারাদিন বৃষ্টি মেয়ে যেভাবে ঝুপ ঝুপ ঝরছে, আমরা কি একটু বের হতে পারছি? আমাদের কি খাবার দাবার প্রয়োজন হয়না? কীভাবে আমরা বের হই? উত্তরে জবা ফুল বলল, দেখো ঘাসফড়িং, বৃষ্টি মেয়ে কিন্তু কোন অন্যায় করছে না। এখন বর্ষাকাল।
বর্ষাকালে বৃষ্টিরা ঝরবেই। এটাই এদের কাজ। বছরে দুইমাস এরা নাচবে, হাসবে, ঘুরবে যা ইচ্ছে তাই করবে। আষাঢ় শ্রাবণ দুইমাস এদের দখলে থাকবে এটা তো আমরা সবাই জানি। তাহলে কেন তুমি বৃষ্টি মেয়ের উপর দোষ চাপাচ্ছো?
আসলে ফুল বন্ধু সেরকম নয়। বৃষ্টি ঝরবে ঝরুক, সারাদিন না ঝরে একটু জিরোন দিলে আমাদের একটু সুবিধা হয় আর কী।
এরা তো আর তোমার কথায় চলবে না। তা অবশ্যই নয়।
ঘাসফড়িঙের কথা শুনে জবা ফুলেরও একটু মায়া জমে গেল। ভাবছে বৃষ্টি মেয়েকে বুঝিয়ে বলবে এদের সমস্যার কথা। ঘাসফড়িং জবা ফুলের উপর থেকে সরে একটু দূরে গিয়ে বসল।
বৃষ্টির ফোটা যখন জবা ফুলের উপর পড়ল, জবা ফুল কোমল সুরে ডাক দেয়, বৃষ্টি মেয়ে বৃষ্টি মেয়ে, কেমন আছো তুমি ? ওমা বৃষ্টি মেয়ে অবাক হয়ে গেল! হঠাৎ জবা ফুল কেন ডাকছে?
বৃষ্টির ফোটা তখনই বৃষ্টি মেয়ের রূপ ধারণ করল। জবা ফুলের পাশে দাঁড়াল। হ্যাঁ, ফুল বন্ধু আমি ভালো আছি। তুমি কেমন আছো? কী মনে করে আমার নাম ধরে ডাক দিলে? একটা কথা বলার ছিল, ভাবলাম বন্ধুকে ডেকে বলি। বলো বন্ধু নিঃসংকোচে নির্ভয়ে।
আচ্ছা বন্ধু, এখন তো তোমাদের সময়। মানে আষাঢ় শ্রাবণ মাস। তোমরা তোমাদের কাজ চালিয়ে যাবে, বৃষ্টি হয়ে ঝরবেই। যখন ইচ্ছে তখন। দিন দুপুরে, রাত দুপুরে।
ঠিক বলেছ বন্ধু, এটা আমাদের মৌসুম। আমরা বৃষ্টির জন্য সারা বছর সবুজ প্রকৃতি অপেক্ষা করে, আমরা যখন বৃষ্টি হয়ে ঝরি তখন সবুজ প্রকৃতি ফিরে পায় নতুন আশা, নতুন জীবন। এগুলো দেখে আমাদেরও পুলক জাগে প্রাণে।
অবশ্যই, অস্বীকার করার ক্ষমতা নেই। তবুও বলছি, শোনো বন্ধু, তোমরা ঝরো তোমাদের ইচ্ছে মতো।ওটাতে বাঁধা দেওয়ার কেউ নেই। তোমাদের পেয়ে আমরাও আনন্দিত হই। কিন্তু, তোমাদের একটানা ঝরাতে ছোট ছোট কিছু প্রাণীকূলের একটু সমস্যা হয়ে যায় বন্ধু।
এই যেমন দেখো, ঘাসফড়িং আজ সারাদিন তোমাদের জন্য ঘর থেকে বের হতে পারেনি, কারণ, তোমরা এক নাগাড়ে ঝরেই যাচ্ছ।
জবা ফুলের মিষ্টি মধুর আলাপনে, বিষয়টি বুঝতে পারলো বৃষ্টি মেয়ে। সায় দিয়ে বলে, আসলেই বন্ধু আমরা ওরকম কোনদিন ভাবেনি। তোমার কথায় বুঝতে পেরে আগামীতে বিষয়টি মাথায় রাখবো। ওকে বন্ধু ধন্যবাদ। ভালো থেকো, আসি।
দু’জনের কথোপকথন নীরবে কান পেতে শুনল ঘাসফড়িং। যাওয়ার সময় কৃতজ্ঞতা জানাল, বিনয়ী ঘাসফড়িংও।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভারতীয় সহকারী হাই কমিশনারের সঙ্গে সুজনের মতবিনিময়
পরবর্তী নিবন্ধপানির নিচে অন্য জগত