বিষাদ-ছোঁয়া সেই রাতের গল্প

পংকজ দেব অপু | রবিবার , ১৪ আগস্ট, ২০২২ at ৬:০২ পূর্বাহ্ণ

নীরবতার গালে সজোরে চপেটাঘাত করে
ঢং ঢং ঢং করে
বেজে উঠলো শেষরাতের ঘন্টা।
৩২ নম্বর বাড়ি
তারই রেলিংয়ে কয়েকটি বাদুড়
কয়েকবার ডানা ঝাপটিয়ে
উড়ে গেলো দিগন্তে।

কয়েকটি কালো পেঁচা
‘নিম নিম’ শব্দ করে
এসে বসলো
কার্নিশ এর উপরে।

শোনা গেলো
ক্ষুধার্ত কুকুরের কান্না
মৌনতা ভেঙে খানখান হয়ে গেলো
রাত জাগা শৃগালের করুণ আর্তনাদে;

ইথারে প্রতিধ্বনি তুললো সেই পবিত্র আহ্বান
‘আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম’
তিনি তড়িঘড়ি করে
বিছানায় উঠে বসলেন
হাতের স্পর্শ লেগে টেবিল থেকে গড়িয়ে পড়লো কাঁচের গ্লাস
চৌচির হলো প্রচণ্ড শব্দ তুলে;

সুবিখ্যাত কালো ফ্রেমের চশমা
হাতে তুলে নিয়ে
দূরে সরিয়ে রাখলেন আসন্ন পতনের আশঙ্কা
থেকে বাঁচাবেন বলে।
ক্রিং ক্রিং ক্রিং—
রাত্রিকে বিদীর্ণ করে ক্রমাগত বেজেই চলল
টেলিফোন।

কিছুটা উৎকন্ঠিত, খানিকটা উত্তেজিত জলদগম্ভীর
কণ্ঠস্বর শোনা গেলো ‘কেন দুষ্কৃতিকারী আসবে?
কী করেন আপনারা?’
গ্রেনেডের মুহুর্মুহু শব্দে
ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি
ভূমিকম্পের মতো যেন
বারবার দুলে দুলে উঠছিলো;

ইতোমধ্যে ঘাতকের নিষ্ঠুর আঘাতে
মাটিতে লুটিয়ে পড়েছেন ভাই ‘শেখ আবু নাসের’
অতঃপর কাজের ছেলে ‘আবদুল’।

নিশ্চিহ্ন করার যে প্রক্রিয়া শুরু করেছিলো
খাকি পোশাকের সেই বাহিনী
তাতেই আত্মাহুতি দিতে বাধ্য হলেন
একে একে– শেখ কামাল, সুলতানা খুকু, শেখ জামাল,
পারভীন জামাল, আবদুর রব সেরনিয়াবাত,
ফজলুল হক মণি, বেগম আরজুমণি,
কর্ণেল জামিলসহ আরো অনেকে।
১১ বছরের আদুরে মায়াবী মুখের নিষ্পাপ
শিশু রাসেলও শেষ পর্যন্ত…
হায়! সীমারের নিষ্ঠুরতাও যেন
হার মানলো অবশেষে–
শোনা গেল বিদ্রোহী কণ্ঠস্বর
‘অল ফিনিশড। অল কিলড’
পারিবারিক আবহছোঁয়া
একটু আগের কোলাহল
নির্বাক অন্ধকার-মোড়কে
ঢাকা পড়লো নিমিষেই।

পড়ে রইলেন রুধিরে সিক্ত হয়ে
বিশাল হৃদয়ের সেই সিংহ পুরুষ;
ইয়াহিয়া আর ভুট্টোর রক্তচক্ষু
যাঁকে এতটুকুও বিচলিত করতে পারেনি-
আজ তিনি
একেবারে ভাবলেশহীন।
ষড়যন্ত্র আর বিশ্বাসঘাতকতা
বুলেটের নির্মম আশ্রয়ে
চিরকালের জন্য স্তব্ধ করে দিলো
একজন বজ্রকণ্ঠ বিশ্বনেতাকে,
যিনি লাল সবুজের পতাকা-আচ্ছাদিত
বাংলাদেশকে ঠাঁই করে দিয়েছেন
বিশ্বের বিশাল মানচিত্রে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবঙ্গবন্ধু
পরবর্তী নিবন্ধ১৫ই আগস্ট