বিদেশিরা ৭ জানুয়ারির নির্বাচন গ্রহণ করেননি : আমীর খসরু

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২৮ মার্চ, ২০২৪ at ৫:৪৮ পূর্বাহ্ণ

আওয়ামী লীগকে অভিনন্দন জানানো বিদেশিরা ৭ জানুয়ারির নির্বাচন গ্রহণ করেননি বলে দাবি করেছেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, বিদেশিদের অভিনন্দন জানানোর অর্থ মানে এ নয় তারা নির্বাচনকে গ্রহণ করেছে। নির্বাচনের পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আমেরিকা, জাতিসংঘসহ সকল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিষ্কারভাবে বলেছে, নির্বাচন গ্রহণযোগ্য নয়। দ্বিপাক্ষিক রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্ক থাকবে। ব্যবসা বাণিজ্য ও বিনিয়োগ থাকবে। সেটার সঙ্গে অবৈধ সরকারকে গ্রহণ করার বিষয় এক নয়।

মাহে রমজান ও স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। গত মঙ্গলবার নগরের কাজীর দেউড়িস্থ একটি কনভেনশন সেন্টারে এ ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন। নগর বিএনপি’র সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার, এস এম ফজলুল হক, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির শ্রম বিষয়ক সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দিন, সহসাংগঠনিক সম্পাদক জালাল উদ্দীন মজুমদার, ভিপি হারুনুর রশীদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হুম্মাম কাদের চৌধুরী ও তারিকুল ইসলাম তেনজিং এবং দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান।

এতে বিগত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ থেকে শুরু করে ৭ জানুয়ারি নির্বাচন পর্যন্ত ‘গণতন্ত্র পুরুদ্ধার আন্দোলনে’ নগর বিএনপির ৭০০ জন কারাগারে যাওয়া নেতাকর্মী ও স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা প্রদান করা হয়।

আমীর খসরু বলেন, ৭ জানুয়ারি তো কোনো নির্বাচন হয়নি, হয়েছে গণভোট। বিএনপির পক্ষ থেকে ডাক দেওয়া হয়েছিল বাংলাদেশের মানুষ যাতে নির্বাচনে না যায়। সেদিন বাংলাদেশের ৯৫ ভাগের বেশি মানুষ নির্বাচনে না গিয়ে গণভোটে শেখ হাসিনার সরকার ও তার নির্বাচন ব্যবস্থাকে প্রত্যাখান করেছে। সুতরাং এ গণভোটের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষ তাদের অবস্থান আবার পরিষ্কার করেছে। তারা এ ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিদায় করতে চায়। তারা তাদের ভোটাধিকার ফিরে পেতে চায়। গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক অধিকার ফিরে পেতে চায়। গণমাধ্যমের অধিকার ফিরে পেতে চায়।

খসরু বলেন, দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে ইফতার মাহফিল হবে কি হবে না সেটা এখন প্রশ্ন করা হচ্ছে। কোন দেশে আছি চিন্তা করেন, ইফতার মাহফিলে নাকি কৃচ্ছতাসাধন করতে হবে। লাখ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে। ব্যাংক খালি হয়ে যাচ্ছে। দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। মানুষ দু’বেলা খেতে পারছে না। আর ইফতার মাহফিলে নাকি কৃচ্ছতাসাধন করতে হবে। এ জন্য আমি বলেছি ইফতার মাহফিল বেশি বেশি করতে হবে। প্রতিদিন করতে হবে। প্রতিটি এলাকায় করতে হবে।

তিনি বলেন, ইফতার মাহফিল নিয়ে প্রশ্ন ওঠবে সেটা বাংলাদেশের মানুষ গ্রহণ করবে না। গরুর মাংস সরবরাহ করা যাবে না বলেও অনেক জায়গায় নোটিশ দেওয়া হচ্ছে। চিন্তা করে দেখেন বাংলাদেশ কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার সব তো কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এখন আমার খাওয়া দাওয়ার অধিকারও কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। আমি গরুর মাংস খাবো নাকি ইফতার খাবো সেটাও তাদের সিদ্ধান্ত দিতে হবে কেন?

খসরু বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ডাকে বাংলাদেশের মানুষ উজ্জীবিত হয়ে যার যা ছিল তা নিয়ে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল। আর যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে তাদের বেশিরভাগ লোক ভারতে পালিয়ে গিয়েছিল সেদিন। যুদ্ধক্ষেত্রে ছিল বাংলাদেশের সৈনিক, যুবক ও মুক্তিকামী যোদ্ধারা। জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে শুধু শেষ করেননি। সম্মুখ সারিতে যুদ্ধ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে তরান্বিত করেছেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী, সুশীল সমাজ, কৃষক ও শ্রমিকের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া গণঐক্যকে সামনে নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটানো হবে। বাংলাদেশে নির্বাচনের সরকার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। ক্ষমতা দখলের মধ্যে দিয়ে কেউ যদি মনে করে আন্দোলন আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে তাহলে তারা ভুল। আসলে আন্দোলন আঘাতপ্রাপ্ত হয়নি। আন্দোলন আরও বেশি শক্তিশালী হয়েছে। দেশে ও বিদেশে সমস্ত গণতান্ত্রিক শক্তি আজ ঐক্যমত হয়েছে। বাংলাদেশে একটি নির্বাচনের সরকার না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন অব্যহত থাকবে।

তিনি বলেন, আমরা হালুয়া রুটি খাওয়ার জন্য আন্দোলন করিনি। এমপি বা মন্ত্রী হওয়ার জন্য আন্দোলন করিনি। আমরা আন্দোলন করেছি বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক, সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্বের জন্য। আন্দোলন চলমান আছে। সে আন্দোলন আজ অনেক বেশি শক্তিশালী। ৭ জানুয়ারির আগে যত বেশি শক্তিশালী ছিল, তার পরে আরও বেশি শক্তিশালী হয়েছে। সব রাজনৈতিক দল আমাদের এ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশের সুশীল সমাজ যারা বিগত দিনে মুখ খুলতেন না, কথা বলতেন না তারা কিন্তু সবাই কথা বলছে। এ সরকারের বিরুদ্ধেও নির্বাচন নিয়ে তারা কথা বলছে।

বামপন্থী দিয়ে বিএনপি হবে না :

বামপন্থীদের দিয়ে বিএনপি হবে না বলে মন্তব্য করেছেন মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন। তিনি বলেন, কেউ কেউ বলে, আমরা গণতন্ত্রের কথা বলি। অথচ তাদের ডিএনএ টেস্ট করলে দেখা যাবে তারা সবাই বামপন্থী। বামপন্থী দিয়ে বিএনপি হবে না। বিএনপি হবে মধ্যপন্থী, ডানপন্থি ও ইসলামী পন্থী মানুষদেরকে নিয়ে। এর বাইরে বিএনপি হতে পারে না। ভুল সিদ্ধান্তের কারণে আমরা অনেককে হারিয়েছি। তাই আমরা নতুন পরিকল্পনা শুরু করব। বিএনপিকে আবার স্বয়ংসম্পূর্ণ করবো জাতীয়তাবাদী শক্তির ভালো নেতৃত্বে।

নেতৃত্ব নির্বাচনে ডিএনএ টেস্টে গুরুত্ব দিয়ে মীর নাছির বলেন, আমরা শহীদ জিয়ার আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে এখন কোথায় চলে এসেছি? আমি অনুরোধ করবো, ডিএনএ টেস্ট না করে বিএনপির নেতৃত্ব ঠিক করা যাবে না। কারণ নেতৃত্ব এখন অনেক দুর্বল জায়গায় চলে গেছে। তাই আমাদেরকে শক্ত হাতে দলীয় আদর্শের প্রতি বিশ্বাসী লোকদের নিয়ে আসতে হবে। শহীদ জিয়ার আদর্শকে সমুন্নত রাখতে হলে তার আদর্শিত নির্দেশনা মেনেই দল করতে হবে।

গোলাম আকবর খোন্দকার বলেন, দেশে কোনো নির্বাচনী ব্যবস্থা নেই, সরকার সব ধ্বংস করে দিয়েছে। শুধু রাজনীতি নয়, সমাজের সবকিছু গ্রাস করছে সরকার। ক্ষমতা হারানোর ভয়ে ভীত তারা।

এস এম ফজলুল হক বলেন, ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য প্রশাসন ও বিচার ব্যবস্থাকে কুক্ষিগত করে রেখেছে সরকার। সরকার জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ক্ষমতায় টিকে থাকাই তাদের একমাত্র লক্ষ্য।

ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালোরাত্রিতে আওয়ামীলীগের অনেক নেতাই পার্শ্ববর্তী দেশে চলে গিয়েছিলেন। নেতৃত্বশূন্য এই জাতিকে মুক্তি দিতে এগিয়ে এসেছিলেন জিয়াউর রহমান। তিনি কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন আবার অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন। তার মেধা ও সামর্থ্যের কারণে তিনি দুইটা সেক্টরের দায়িত্ব পালন করেছেন। বীর উত্তম জিয়াউর রহমান ছিলেন জেড ফোর্সের অধিনায়ক। এটাই ইতিহাস। এর বাইরে আর কোন বক্তব্য থাকতে পারে না।

আবুল হাশেম বক্কর বলেন, স্বাধীনতার সকল অর্জন আওয়ামী লীগ সরকার ম্লান করে দিয়েছে। জনগণের অধিকার হরণ করে তারা স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠা করেছে। গণতন্ত্র আজ পুলিশের বুটের নিচে পিষ্ট। সরকারের জনপ্রিয়তা এখন শূন্যের কোঠায়।

আবু সুফিয়ান বলেন, একাত্তরের যুদ্ধ ছিল গণতন্ত্র অর্জনের যুদ্ধ। আজকে দেশে গণতন্ত্র নাই, মানুষের মৌলিক অধিকার নাই। পাঠ্যপুস্তকে বীরদের কথা লিখিত নাই। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে।

উত্তর জেলা বিএনপি : নগরের পাঁচলাইশস্থ একটি কনভেনশন সেন্টারে গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। উত্তর জেলা বিএনপি আহবায়ক গোলাম আকবর খোন্দকারের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, চেয়াপার্সনের উপদেষ্টা এস এম ফজলুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, সহসাংগঠনিক সম্পাদক জালাল উদ্দীন মজুমদার, সদস্য ফয়সাল মোহাম্মদ ফয়জী, ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দিন, হুম্মাম কাদের চৌধুরী, সাথী উদয় কুসুম বড়ুয়া, সদস্য তরিকুল আলম তেনজিং, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান, নগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপুরনো শর্তেই খালেদার মুক্তির মেয়াদ বাড়ল ৬ মাস
পরবর্তী নিবন্ধসংকট কাটিয়ে উঠাই আ. লীগের শক্তি