বাড়ছে না সক্ষমতা

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৫:১৫ পূর্বাহ্ণ

আমদানি-রপ্তানির গতি বাড়লেও বাড়ছে না চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের রাসায়নিক পরীক্ষাগারের (ল্যাব) সক্ষমতা। গত প্রায় এক বছর ধরে মাত্র একজন পরীক্ষক দিয়েই চলছে রাসায়নিক পরীক্ষণের কাজ। আগামী বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি আবদুল হান্নান নামের ওই পরীক্ষক চাকরি থেকে অবসরে চলে যাবেন। বিষয়টি মাথায় রেখে কয়েক মাস আগে পর্যাপ্ত জনবল বৃদ্ধি করার বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বরাবর চিঠি লিখে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্র্তৃপক্ষ। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া মেলেনি। একজন পরীক্ষক দিয়ে ল্যাব পরিচালনার ফলে পণ্যের নমুনা পরীক্ষায় সময়ক্ষেপণ হচ্ছে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। এছাড়া এতে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমদানি পণ্য খালাসেও সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘসূত্রতা। আবার অনেক পণ্যের পরীক্ষার জন্য ঢাকার বিভিন্ন ল্যাবের ওপর নির্ভর করতে হয়। ফলে পণ্য পরীক্ষা নিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সেবাগ্রহীতাদের।
আমদানি-রপ্তানি সংশ্লিষ্টরা জানান, আমদানি পণ্য বন্দর থেকে খালাসের আগে ক্ষেত্রবিশেষে পণ্যের নমুনা পরীক্ষা করতে হয়। রাসায়নিক পরীক্ষকরা ঘোষণা অনুযায়ী আমদানি পণ্যের মান ঠিক আছে কিনা সেটি পরীক্ষা করে দেখেন। কেবল রাসায়নিক পরীক্ষার রিপোর্ট সন্তোষজনক হলেই খালাসের অনুমতি মেলে। আবার কোনো আমদানিকারক মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য নিয়ে এলে নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদনে পরীক্ষকরা সেই পণ্যের যথাযথ শুল্কায়নের জন্য সুপারিশ করে থাকেন। এতে সরকারের প্রচুর পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি রোধ হয়।
কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, ল্যাবে বিদ্যমান জনবল কাঠামোতে ১৬ কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ৫ জন। এছাড়া কাঠামোর বাইরে দুজনকে ‘ঊর্ধ্বতন সহকারী পরীক্ষক’ পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। এর মধ্যে বর্তমানে আছেন মাত্র একজন। অথচ জনবল কাঠামো অনুযায়ী একজন প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক এবং ৩ জন উপ-প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষকের পদ ল্যাবের কার্যক্রম শুরু থেকেই শূন্য রয়েছে। বর্তমানে দুজন রাসায়নিক পরীক্ষকের মধ্যে আছেন একজন। এছাড়া ৬ জন সহকারী রাসায়নিক পরীক্ষকের মধ্যে একজনও নেই। জনবল কাঠামো অনুযায়ী ৩ জন ল্যাব এটেনডেন্ট থাকলেও আবার পিয়ন নেই। ফলে প্রতিদিন ল্যাবে যে পরিমাণ পণ্যের নমুনা এসে জমা হচ্ছে, সেইসব পরীক্ষা নিরীক্ষা করতেই রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে পরীক্ষকদের।
এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) ল্যাবের জন্য প্রস্তাবিত জনবল কাঠামোতে ৮ পদে ৯৫ জনকে নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন একজন অতিরিক্ত প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক, ৩ জন উপ-প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক, ৮ জন রাসায়নিক পরীক্ষক, ৪৬ জন সহকারী রাসায়নিক পরীক্ষক, ৬ জন ল্যাব এটেনডেন্ট, এবং একজন ডাটা এন্ট্রি অপারেটর।
কাস্টমস ল্যাব সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ল্যাবে প্রতিদিন গড়ে বিভিন্ন পণ্যের ৬০-৭০টি নমুনা আসে। এগুলো আবার দ্রুত পরীক্ষা করে দিতে হয়। কিন্তু জনবল সংকটের কারণে পরীক্ষা করতে রীতিমত নাভিশ্বাস উঠে যায়। বিদ্যমান জনবল দিয়ে পরীক্ষা করা একটু কষ্ট সাধ্য হয়ে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টমস সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানি রিগ্যান আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রাম কাস্টমসের ল্যাবের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য আমরা বিভিন্ন ফোরামের সভায় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ও এনবিআরের কর্তাব্যক্তিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কিছুই হয়নি। এত বড় একটা কাস্টম হাউসের ল্যাব মাত্র একজন পরীক্ষক দিয়েই চলছে, এটি ভাবা যায় না। আগামী বছরের শুরুতে তিনি আবার অবসরে চলে যাবেন বলে শুনেছি। দ্রুত জনবল বৃদ্ধি করা না হলে পুরো শুল্কায়ন প্রক্রিয়াই থমকে যেতে পারে।
কাস্টমসের ল্যাবের পরীক্ষকের প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. ফখরুল আলম আজাদীকে বলেন, প্রত্যেক শুল্ক স্টেশনে রাসায়নিক পরীক্ষাগার ও পদ সৃষ্টির জন্য মহামান্য হাই কোর্টের নির্দেশনা রয়েছে। বিষয়টি এনবিআর অবগত আছে। আমরা বেশ ক’বার এনবিআরকে এ বিষয়ে চিঠিও দিয়েছি। জনবল নিয়োগের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো আপডেট পাইনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধযে সন্ত্রাসী ঘটনায় বদলে গেছে বিশ্ব
পরবর্তী নিবন্ধআগে ছিল এক পাশে এখন উভয় পাশে