বাবা-মার কবরের পাশে শেষ শয্যায় আফছারুল আমীন

আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রথম নামাজে জানাজা জমিয়তুল ফালাহ’র জানাজায় শোকার্ত মানুষের ঢল নেতাকর্মীদের শেষ শ্রদ্ধা

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৪ জুন, ২০২৩ at ৬:০০ পূর্বাহ্ণ

বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক মন্ত্রী, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি, চট্টগ্রাম১০ আসনের সংসদ সদস্য ডা. আফছারুল আমীনের দ্বিতীয় নামাজে জানাজা গতকাল শনিবার বাদে আছর জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় দল মত নির্বিশেষে হাজারো মানুষের ঢল নামে এবং চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও তাদের অঙ্গ সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়। বাদে এশা নিজ প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণ কাট্টলী পি এইচ আমিন একাডেমি স্কুল প্রাঙ্গণে তৃতীয় জানাজা শেষে মো. হোসেন চৌধুরী বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে মাবাবার কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।

এর আগে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সকাল সাড়ে ১০টায় তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্যসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ অংশ নেন। ডা. আফছারুল আমীনের মরদেহে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর পক্ষ থেকেও শ্রদ্ধা জানানো হয়। এছাড়া ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুসহ চিফ হুইপ ও হুইপরা শ্রদ্ধা জানান।

এসময় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

দুপুর পৌনে ১টার দিকে চট্টগ্রাম মহানগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে ডা. আফছারুল আমীনের মরদেহ বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে করে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে আনা হয়। জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের দ্বিতীয় জানাজায় মরহুমের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তব্য দেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, প্রয়াতের ছোটভাই ডা. এরশাদুল আমীন ও ছেলে ফয়সাল আমীন।

শ্রদ্ধা নিবেদনকালে বক্তারা বলেন, ডা. আফছারুল আমীন তার কর্ম ও ত্যাগের মধ্য দিয়ে চিরঞ্জীব হয়ে থাকবেন। দলের আদর্শ ও নীতি নৈতিকতার প্রতি আস্থাশীল জননেতা ডা. আফসারুল আমীন সকলের কাছে সম্মানিত ও শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। জনগণের অধিকার আদায়ে আন্দোলন সংগ্রামেও সম্মুখভাবে ছিলেন। দলে তার মতো ত্যাগী নেতা বর্তমান সময়ে খুবই দরকার ছিল।

মাওলানা আনিসুজ্জামানের ইমামতিতে অনুষ্ঠিত জানাজায় অংশ নেন হুইপ সামশুল হক এমপি, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এমপি, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, নজরুল ইসলাম চৌধুরী এমপি, নোমান আল মাহমুদ এমপি, আশিকুল্লাহ রফিক এমপি, এম এ লতিফ এমপি, দিদারুল আলম এমপি, মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম, মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম শফিউল্লাহ, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি নঈম উদ্দীন চৌধুরী, অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, ১৪ দল চট্টগ্রামের সমন্বয়ক খোরশেদ আলম সুজন, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, উত্তর জেলার আবুল কালাম আজাদ, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি আবু সুফিয়ান, রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান এহসানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল, জসীম উদ্দীন বাবুল, উপদেষ্টা একেএম বেলায়েত হোসেন, সফর আলী, শেখ মো. ইছহাক, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক আদনান, চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শফিকুল ইসলাম ফারুক, হাসান মাহমুদ শমসের, অ্যাডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, মসিউর রহমান চৌধুরী, হাজী মো. হোসেন, মাহবুবুল হক মিয়া, আবু তাহের, ডা. ফয়সল ইকবাল চৌধুরী, শহিদুল আলম, দক্ষিণ জেলার প্রদীপ দাশ, মহানগর আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য আবুল মনছুর, কামরুল হাসান বুলু, বখতেয়ার উদ্দীন খান, সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার, জাফর আলম চৌধুরী, মহব্বত আলী খান, আব্দুল লতিফ টিপু, হাজী রোটারিয়ান মো. ইলিয়াছ, . নেছার উদ্দীন আহমদ মঞ্জু, হাজী বেলাল আহমদ, মোর্শেদা আক্তার চৌধুরী প্রমুখ।

ডা. মো. আফছারুল আমীনের ছেলে ফয়সাল আমীন বলেন, আমার বাবা সারাজীবন রাজনীতি এবং সমাজ ও মানুষের উন্নয়নের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। পরিবারের সদস্যদের তেমন একটা সময় দিতেন না। যার কারণে আমরা বাবাকে পরিবারে কম সময় পেয়েছি। ক্যান্সার শনাক্ত হওয়ার পর পরিবারের সদস্যদের সময় দিয়েছেন। ২০২০ সাল থেকে ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করেছেন তিনি। শত কষ্টের মধ্যে দেশ ও সমাজের কাজগুলো করেছেন। বাবার জন্য সকলে দোয়া করবেন।

এদিকে, জানাজা শেষে প্রয়াত সংসদ সদস্য ডা. আফছারুল আমীনের প্রতি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক, এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ফাউন্ডেশন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এছাড়াও বিভিন্ন পেশাজীবী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সহযোগী ও অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ প্রাঙ্গণে জানাজা শেষে আফছারুল আমীনের লাশ শেষ বারের মতো তার দক্ষিণ কাট্টলীস্থ বাসভবনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে বাদ এশা দক্ষিণ কাট্টলী পি এইচ আমিন অ্যাকাডেমি স্কুল প্রাঙ্গণে তৃতীয় জানাজা শেষে দক্ষিণ কাট্টলী মো. হোসেন চৌধুরী বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে মাবাবার কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়। সেখানে রাষ্ট্রীয় গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।

পারিবরিক সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তার ফুসফুসে ক্যানসার ধরা পড়ে। প্রথমে তিনি সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এরপর দেশে নিয়মিত চিকিৎসা নিতেন। ডা. আফছারুল আমীন ও ডা. কামরুন্নেছা দম্পতির দুই সন্তানের মধ্যে ফয়সাল আমীন পারিবারিক ব্যবসা পরিচালনা করেন এবং ছোট ছেলে মাহিদ বিন আমীন চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার পদে কর্মরত আছেন।

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার বিকেল ৪টা ১৫ মিনিটে ঢাকায় স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ডা. আফছারুল আমীন মৃত্যুবরণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধলোডশেডিং দেড় হাজার মেগাওয়াটের বেশি : নসরুল হামিদ
পরবর্তী নিবন্ধদাওয়াত খেয়ে ফেরার পথে সড়কে প্রাণ হারাল দুই বন্ধু