বঙ্গোপসাগর থেকে মাছ ধরে ফিরছে জেলেরা। তবে এখনও আশানুরূপ ইলিশের দেখা নেই বঙ্গোপসাগরে। গতকাল শুক্রবার শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারীঘাটে এসেছে মাত্র ৪ মেট্রিক টন ইলিশ। আগের দুইদিনের অবস্থাও ছিল প্রায় একই। ইলিশসহ অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীর প্রজনন মৌসুম উপলক্ষে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার উপর টানা ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে গত ২৪ জুলাই কক্সবাজারের মাছধরা ট্রলারগুলো সাগরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলেও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে মাছ না ধরেই ঘাটে ফিরে আসে। এরপর টানা ১০ দিনের দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া কেটে যাওয়ার পর গত শনিবার (৩ আগস্ট) থেকে ট্রলারগুলো মাছ ধরতে বঙ্গোপসাগরে রওয়ানা দেয়।
কক্সবাজার শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারীঘাট মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী বলেন, গত ২০ মে থেকে মাছধরা ও পরিবহণের উপর নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়ার পর গত ৩ দিন ধরে শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারীঘাট ফের সচল হয়ে ওঠেছে। আড়াই মাসের বেশি সময় পর ফিশারীঘাটে পুনরায় প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে।
কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাস্টার মোস্তাক আহমদ জানান, বঙ্গোপসাগরে বিভিন্ন ধরনের জাল দিয়ে মাছ ধরা হয়। এরমধ্যে ইলিশ ধরা হয় ৪ থেকে ৫ আঙুলের ফাঁসযুক্ত সুতার জাল দিয়ে, যেটি ভাসা জাল নামেই জেলেদের কাছে পরিচিত। আর সাগর থেকে তাইল্যা ও কোরাল মাছ ধরা হয় ২ থেকে ৩ আঙুলের ফাঁসযুক্ত এক ধরনের রক জাল দিয়ে, যেটি তাইল্যা জাল নামেই পরিচিত।
তিনি জানান, কক্সবাজারে ছোট বড় ৭ সহস্রাধিক যান্ত্রিক বোট রয়েছে। যারমধ্যে নৌকায় ৩০ থেকে ৪০ জন এবং ছোট নৌকায় ৫ থেকে ১৭ জন জেলে থাকে। আবার কক্সবাজার শহরতলীর দরিয়ানগর ঘাটের ইঞ্জিনবিহীন ককশিটের বোটে থাকে মাত্র ২ জন জেলে। ট্রলারগুলোর মধ্যে ইলিশ জালের বোটগুলো ৮/১০ দিনের রসদ নিয়ে এবং তাইল্যা জালের বোটগুলো এক সপ্তাহের রসদ নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যায়। আবার ৭/৮ আঙুলের ফাঁসযুক্ত ফইল্যা জালের বোটগুলো সাগরে মাছ ধরতে যায় ৫/৬ দিনের রসদ নিয়ে। এই বোটগুলো রূপচান্দা জাতীয় মাছ ধরে। এছাড়া চাউপ্পা জাল, ডোবা জাল, চামিলা জাল ও চোখফোলা জালের বোটগুলো মাত্র একদিনের রসদ নিয়ে সাগরে যায় এবং মাছ ধরে দিনে দিনেই ফিরে আসে। এই ধরনের জালের বোটগুলো সাগর উপকূলে ছোট প্রজাতির মাছ ধরে, যাকে স্থানীয় ভাষায় ‘পাঁচকাড়া’ (পাঁচ প্রকারের) মাছ বলা হয়। এই ধরনের বোটগুলোতে একেক মৌসুমে একেক প্রজাতির মাছ বেশি ধরা পড়ে। গত শনিবার থেকে এই ‘পাঁচকাড়া’ মাছগুলো বাজারে আসতে শুরু করলেও ইলিশ জালের বোটগুলো ফিরতে শুরু করেছে গত ৩ দিন ধরে। তবে বঙ্গোপসাগরে এখনও আশানুরূপ ইলিশের দেখা পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।
কক্সবাজার শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারীঘাট মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী বলেন, আড়াই মাসের বেশি সময় পর গত ৩ দিন ধরে শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারীঘাট ফের সচল হয়ে ওঠলেও আশানুরূপ ইলিশ আসছে না।
গতকাল শুক্রবার ফিশারীঘাট থেকে একটি মিনি ট্রাকে মাত্র ২শ কার্টন (এক কার্টুনে ২০ কেজি) ইলিশ ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আগের দুইদিনের অবস্থাও ছিল প্রায় একই।
তিনি জানান, ধরা পড়া ইলিশের গড় আকার ৭শ থেকে সাড়ে ৭শ গ্রামের মধ্যে। তবে শতে মাত্র একটি ইলিশের আকার ১ কেজি থেকে সর্বোচ্চ ১২শ গ্রাম পর্যন্ত পাওয়া গেছে।