বঙ্গবন্ধুর ছেলেবেলা

মর্জিনা আখতার | বুধবার , ১৬ মার্চ, ২০২২ at ১০:৪০ পূর্বাহ্ণ

১৯২০ সালের ১৭ মার্চ (ভারতীয় উপমহাদেশের বঙ্গ প্রদেশে) ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমায় টুঙ্গিপাড়া গ্রামে একটি শিশু জন্ম নেয়। তবে এ শিশুটির জন্ম শুধু তার পরিবারকে নয়, সমগ্র জাতিকে ধন্য করেছে। তোমরা কী তাঁর নাম জানতে চাও? হয়তো বুঝেই ফেলেছো আমি জাতির পিতা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা বলছি।
শেখ মুজিব বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় নেতা। তিনি একদিনে তো এতবড় নেতা হননি এর পিছনে এমন কিছু মানবিক শিক্ষা এবং কিছু অসাধারণ জন্মগত গুণাবলী ছিল যা অন্য সবার থেকে তাঁকে আলাদা করেছে। ছোট্ট বন্ধুরা বড় দুই বোনের পর তিনি ছিলেন প্রথম ছেলে। পরে অবশ্য তাঁর আরো দুই বোন ও এক ভাই জন্মগ্রহণ করেন। আচ্ছা তাঁর অমন সুন্দর নাম কে রেখেছেন বলতো? তাঁর নানাভাই, তাঁর নাম রাখার পর বলেছিলেন দেখিস এই নাম জগৎজোড়া খ্যাত হবে। দেখেছো তাঁর নানাভাইয়ের কথাটি কেমন করে সত্যি হয়ে গেছে। তবে তাঁকে এই নামে মোটেও ডাকা হতো না। তাঁর আম্মু আব্বু তাঁকে আদর করে ডাকতেন ‘খোকা’ নামে। আর ভাইবোন ও গ্রামের লোক কি নামে ডাকতো জানো, ‘মিয়া ভাই’।
তাঁর প্রথম স্কুল ছিল গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১৯২৭ সালে সাত বছর বয়সে ভর্তি হন। সেই স্কুলে যাওয়া আসার পথে তিনি একদিন নৌকা উল্টে খালের পানিতে পড়ে যান। সেই কথা শুনে মা তাঁকে সেই স্কুল থেকে ছাড়িয়ে নিলেন। এরপর গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুল, তারপর ভর্তি হলেন ইসলামিয়া হাই স্কুলে। ১৯৩৪ সালে তাঁর ‘বেরি বেরি’ রোগ হলো। চোখের জটিল অপারেশন হয়। চার বছর লেখাপড়া বন্ধ ছিল। ১৯৩৭ সালে গোপালগঞ্জে মাথুরানাথ ইনস্টিটিউট মিশন স্কুলে ৭ম শ্রেণিতে ভর্তি হন। পরবর্তীতে ওখান থেকেই তিনি ম্যাট্রিকুলেশন মানে এখনকার এসএসসি পাস করেন। বাকি পড়াশোনা দেশভাগের পর ইসলামিয়া কলেজে দেশভাগের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ আইন বিভাগে করেন।
তাঁর প্রিয় খাবার কি ছিল জানো? ভাত, মাছের ঝোল আর সবজি। আর খাওয়ার শেষে দুধ, কলা, গুঁড় না থাকলে তাঁর যেন খাওয়াই পূর্ণ হতো না।
ছেলেবেলা থেকেই তিনি ছিলেন ভারী দয়ালু। যখন কোন ছেলে ছাতার অভাবে বৃষ্টিতে ভিজছে, তখন তিনি তাঁর ছাতাটি দিয়ে দিতেন। বইপত্র কিনতে না পারলে নিজের বইপত্র, ছেঁড়া কাপড়চোপড় পড়লে নিজের পরণের কাপড় খুলে দিয়ে দিতেন। পশুপাখি আর জীবজন্তুর প্রতি ছিল তাঁর অনেক মমতা। হিন্দু-মুসলমান এর সাথে মিলে মিশে অসামপ্রদায়িক পরিবেশে বড় হয়েছেন। দরিদ্র, দুঃখীর প্রতি ছিল তার অগাধ ভালোবাসা।
আর একটি কথা শোন। গল্প নয় সত্যি। তার এক শিক্ষক গরিব ও মেধাবী ছাত্রদের জন্য একটি সংগঠন করেছিলেন। শেখ মুজিব ছিলেন সেই সংগঠনের কর্মী। তিনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধান-চাল সংগ্রহ করে ছাত্রদের সাহায্য করেছেন।
১৯৩১ সালে অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক গোপালগঞ্জ মাথুরানাথ ইনস্টিটিউট মিশনারি পরিদর্শনে আসেন। সাথে ছিলেন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী। পরিদর্শন শেষে তিনি যখন ডাক বাংলার দিকে হেঁটে যাচ্ছিলেন তখন একদল ছাত্র পথ আগলে ধরলো। হেডমাস্টার চিৎকার করছিলেন। কিন্তু সেদিকে কর্ণপাত না করে হ্যাংলা-পাতলা লম্বা ছিপছিপে মাথায় ঘন কালো চুল, ব্যাক ব্রাশ করা একটি ছেলে একেবারে মুখ্যমন্ত্রীর সম্মুখে।
মন্ত্রী মহোদয় বললেন কি চাও? বুকে সাহস নিয়ে ছেলেটি বললো, আমরা স্কুলেরই ছাত্র। স্কুলের ছাদে ফাটল ধরেছে বৃষ্টি এলে পানি চুইয়ে বইখাতা ভিজে যায়। ক্লাস করতে অসুবিধা হয়। স্কুল কর্তৃপক্ষকে বারবার বলেও কোন লাভ হয়নি।
কিশোর ছাত্রের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, সততা ও সাহসে মুগ্ধ হয়ে জানতে চাইলেন, ‘ছাদ সংস্কার করতে কত টাকা লাগবে? সাহসী ছেলেটি বললো, ‘বারশত টাকা’। মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘ঠিক আছে তোমরা যাও, আমি ছাদ সংস্কারের ব্যবস্থা করছি। তিনি তাঁর তহবিল থেকে ওই টাকা মঞ্জুর করে দিলেন। বঙ্গবন্ধু তখন ৮ম শ্রেণির ছাত্র।
নদীর ঘোলাজলে ছেলেদের সাথে সাঁতার কেটে, দৌড়ঝাঁপ দিয়ে, হাডুডু, ফুটবল, ভলিবল খেলে কেটেছে তাঁর শৈশব। তিনি ছিলেন দস্যি ছেলেদের নেতা। আজ তিনি বিশ্বনেতা।
একবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল। গ্রামে বহু লোক না খেতে পেয়ে কষ্ট পাচ্ছিলো। তিনি কাউকে কিছু না বলে গোলার ধান গরিবদের বিলিয়ে দিয়েছিলেন। বাবা যখন বাড়ি ফিরলেন, তিনি অকপটে সব বললেন। বাবা ছেলের ভেতরটা চিনতেন, তাই কিছু বললেন না।
বঙ্গবন্ধু ছোটদেরকে ভীষণ ভালোবাসতেন। কচি কাঁচার মেলা ও খেলাঘর ছিল তাঁর প্রিয় সংগঠন। আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর কন্যা শেখ হাসিনাকে তিনি কৈশোরেই কচিকাঁচার আসরে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি তাঁর জীবনের শেষ দিনটিও কাটিয়েছেন সংগঠনের ভাইবোনদের মাঝে। তাঁর জন্মদিনটিকে আমরা জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালন করি। শিশুদের কাছে দিনটি অনেক রঙিন, অনেক আনন্দ ও খুশীর।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাংলার খোকা
পরবর্তী নিবন্ধপূর্ব সুয়াবিলে জগন্নাথ মন্দিরে মহানামযজ্ঞ