ফেরোমোন হরমোন

নিগার সুলতানা | শনিবার , ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ১০:৪১ পূর্বাহ্ণ

পিরিয়ড’ শব্দটি ইংরেজি। বাংলায় আমরা ঋতুস্রাব বলি। শাব্দিক বিশ্লেষণ না জানলেও আমরা জানি প্রত্যেক মাসে চাক্রিক নিয়মে নারীদের শরীর থেকে এই স্রাব বের হয়ে থাকে। একসময় সমাজ ঋতুস্রাবের রক্তকে অপবিত্র বলে আখ্যা দিলেও বিজ্ঞান নির্ভর এই যুগে কেবল নারী নয়, পুরুষেরাও ঋতুস্রাব নিয়ে বিভিন্ন তথ্যের যোগান পাচ্ছেন।

তোমার পিরিয়ডের তারিখ কি মনে আছে? তোমার পিরিয়ড হয়েছে এখন এই বাতাস আমারো লাগবে! তোমার পিরিয়ডের কিছুদিন পরই আমার পিরিয়ডের তারিখ! তোমার পিরিয়ড হয়েছে শুনলে আমিও প্রস্তুতি নিই!’’

আমরা যারা এক ঘরে অনেক মেয়েরা থাকি কিংবা একই বেড শেয়ার করে ঘুমাই, তাদের প্রত্যেকের মুখে এই কথাগুলো নিশ্চিত শুনেছেন। পিরিয়ড নিয়ে জল্পনাকল্পনার যেমন শেষ নেই তেমন শেষবার পিরিয়ডের তারিখ মনে রাখাও যেন এক প্রকার যুদ্ধ আমাদের কাছে। কিন্তু অন্যের পিরিয়ড হলে এই হাওয়া বাতাসের কথা কতটুকুইবা সত্য? আদৌ কী এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে? একটি অভিজ্ঞতা শেয়ার করি চলুন। আমরা বোনেরা যখন একসাথে থাকতাম তখন আমরা পিরিয়ডের তারিখ মনে রাখলাম অন্য বোনের পিরিয়ডের হিসাব দিয়ে। ছোট থাকতে ভাবতাম এসব কেবলই অলৌকিক কিছু কিন্তু বোনেরা চাকরি সূত্রে অন্যত্র গেলো এবং ছুটিতে বাসায় এসে কিছুদিন একসাথে থাকলেই আবার আগের মত আমাদের পিরিয়ডের তারিখ এক হয়ে যেতো। আমরা তো বোনদের মায়ার টান ভেবে অনেক খুশি হতাম কিন্তু পরবর্তীতে এর বৈজ্ঞানিক সত্যতা খুঁজতে গিয়ে জানতে পারলাম এর জন্যে দায়ী ফেরোমোন হরমোন।

বিজ্ঞানীরা জিনতত্ত্বের গবেষণার পাশাপাশি এক প্রকারের রাসায়নিক পদার্থের কথা সামনে এনেছেন যা মূলত ফেরোমোন হরমোন। এই হরমোন ‘নার্ভ জিরো’ নামের এক ধরনের করোটিক স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কে সঞ্চালিত হয়ে প্রাণিজগতে সঙ্গী নির্বাচনসহ প্রজননকে ত্বরান্বিত্ব করে। জানা যায় এই হরমোনের কারণে অনেক প্রাণিরাই নিজেদের যৌনসঙ্গী নির্বাচন, প্রজনন, পরিবেশ এবং পদমর্যাদার বিষয়গুলো নির্ধারণ করে থাকে। তবে প্রাণিজগতে এই হরমোনের প্রভাব খুব জোরালোভাবে পাওয়া গেলেও মানুষের জীবনে এর প্রভাব সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য জানা যায়নি। মানুষেরা তাদের বুদ্ধিমত্তা, শ্রবণেন্দ্রিয়, দৃষ্টিশক্তির উপর নির্ভরশীল তাই তারা এই ফেরোমোন হরমোনের তেমন একটা সাহায্য নেন না কিন্তু এরপরেও ফেরোমোন হরমোনের প্রভাব বুঝতে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন গবেষক মার্থা এবং ক্যাথলিনের গবেষণায় তার প্রমাণ মেলে। তারা একটি বিশ্ববিদ্যালয় ডর্মে কয়েকজন শিক্ষার্থীদের অনেকদিন যাবত একই কক্ষে অবস্থান করান এবং অভাবনীয়ভাবে দেখা যায় তাদের পিরিয়ডের সময়কালের মধ্যে একটি বিন্যাস পাওয়া যায় এবং প্রত্যেকের পিরিয়ডের তারিখ প্রায় সমাপাতিত হয়েছে। মার্থা এবং ক্যাথলিন দেখিয়েছিলেন এর মূল কারণ ফেরোমোন হরমোন।

মার্থা দেখান, ফেরোমোন হরমোন কেবল পিরিয়ডের চক্রকে সমাপাতিত করতেই নয়, অনিয়মিত পিরিয়ডকে নিয়মিত করতেও সাহায্য করে। সাধারণত দেহের লোমশ জায়গা থেকে এই হরমোন নিঃসৃত হয়। তাই বায়ুর মাধ্যমে আমরা তা অনুভব করতে পারি। শুধু নারীদের ফেরোমোন হরমোনই নয়, পুরুষদের ফেরোমোন হরমোনও নারীদের ঠোঁটে লাগানো হলে তাদের অনিয়মিত পিরিয়ড নিয়মিত হয়ে যায়।

বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, ফেরোমোন হরমোনের খুব বিস্তরর প্রভাব না থাকলেও মানব জীবনেও এর খানিকটা প্রভাব রয়েছে এবং গন্ধের মাধ্যমে আমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ কাজে এটি ভূমিকা রাখে। তাই অন্যের শরীরের গন্ধ আমাদের যেমন প্রেম ভালোবাসায় উদগ্রীব করে তেমন পিরিয়ডের আশঙ্কাও থেকে যায়। একই স্থানে অনেকদিন বসবাসের ফলে অন্যের পিরিয়ডের বাতাস বলে কিছু না থাকলেও বৈজ্ঞানিকভাবে সত্যে যে ফেরোমোন হরমোনের কারণে নিজেদের পিরিয়ডের তারিখ এগিয়ে আসতে পারে এবং অন্যদের সাথে সমাপাতিত হতে পারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধযে কথাটি ‘মা’ কে হয়নি বলা
পরবর্তী নিবন্ধমহেশখালীতে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প