প্রাণ পাচ্ছে আউটার স্টেডিয়াম

মাঠ সংস্কার ও সবুজায়নের কাজ প্রায় শেষ,খেলার উপযোগী হতে আরও সময় লাগবে

নজরুল ইসলাম | বুধবার , ১৭ এপ্রিল, ২০২৪ at ৬:১৯ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের আউটার স্টেডিয়াম। এক সময়ের খেলোয়াড় তৈরির কারখানা। আকরাম, নান্নু থেকে শুরু করে নাফিস, আফতাব, তামিম পর্যন্ত এই মাঠে খেলেছেন নিয়মিত। স্টার সামার বা স্টার যুব টুর্নামেন্টের মত বড় বড় টুর্নামেন্ট আয়োজিত হয়েছে এখানেই। আর সে টুর্নামেন্টে খেলেছে অনেক নামিদামি ক্রিকেটার। কিন্তু গত তিন দশক ধরে আউটার স্টেডিয়াম পরিণত হয় জঞ্জালে। কখনো বিজয় মেলা, কখনো নানা ধরনের মেলা, কিংবা সুইমিং পুল নির্মাণের অপ্রীতিকর ঘটনাসহ নানা কারণে আউটার স্টেডিয়াম জায়গা করে নিয়েছে ইতিহাসের পাতায়। গত কয় বছর ধরে আউটার স্টেডিয়ামে মেলা বন্ধ হলেও খেলার মাঠ ফেরেনি খেলার কাছে। উল্টো সৌন্দর্য বর্ধনের নামে আউটার স্টেডিয়ামকে পরিণত করা হয় জঞ্জালে। অবশেষে মুক্ত হয়েছে সে জঞ্জাল। তবে কোনো ক্রীড়া সংগঠকের কৃতিত্বে নয়। আউটার স্টেডিয়াম জঞ্জাল মুক্ত হয়েছে একজন সরকারি কর্মকর্তার হাত ধরে। তিনি চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। আউটার স্টেডিয়ামকে জঞ্জাল থেকে কাননে পরিণত করেছেন তিনি।

গত তিন দশক ধরে পতিত জমিতে পরিণত হওয়া আউটার স্টেডিয়াম এখন যেন সবুজ গালিচা। যদিও আউটার স্টেডিয়াম খেলার উপযোগী হতে আরো সময় লাগবে। তবে সবচাইতে বড় কাজ যেটা সেই মাঠ সংস্কার এবং মাঠ সবুজ করণের কাজ বেশিরভাগই শেষ হয়েছে। মাঠ ভরাট এবং সবুজায়নের দায়িত্ব পাওয়া প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন একেবারে আধুনিক পদ্ধতিতে নির্মাণ করা হচ্ছে আউটার স্টেডিয়ামের মাঠ। মাঠে ঘাস তোলার আধুনিকতম পদ্ধতি স্প্রেডিং পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে আউটার স্টেডিয়ামের ঘাস তুলতে। সচরাচর মাঠে ঘাস তোলা হয় রোপণ করে। তবে আধুনিক স্প্রেডিং পদ্ধতিতে মূলসহ ঘাস কেটে তা মাঠে ছিটিয়ে দেওয়া হয়। তার উপর হালকা বালি দিয়ে চট দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। এরপর পানি দিয়ে দিয়ে সে ঘাসকে ঘজিয়ে তোলা হয়। ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ঘাসের বর্তমানে যে অবস্থা তার উপর আবার হালকা বালির স্তর দেওয়া হবে। এরপর পানি ছিটিয়ে তা আরো সবুজ এবং গোড়া শক্ত করা হবে। এর আগে মাঠের পানি নিষ্কাশনের জন্য মাঠের নিজে আধুনিক ড্রেনেজ সিস্টেম বসানো হয়েছে। একই সাথে চারপাশে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে, যাতে মাঠ সুরক্ষিত থাকে। মাঠের কাজ শেষ হতে আরো কিছুদিন সময় লাগবে। কারণ যেহেতু বালির উপর গজিয়ে তোলা হচ্ছে এই ঘাস, সেহেতু ঘাসের গোড়া শক্ত হতে কিছুটা সময় লাগবে। এরপর নিয়মিত পানি দেওয়ার মাধ্যমে ঘাসের ঘনত্ব আরো বাড়ানো হবে। এরপর এই মাঠ খেলার উপযোগী হবে।

গত বছরের ১৯ মার্চ আউটার স্টেডিয়ামের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পর একই বছরের সেপ্টেম্বরে আউটার স্টেডিয়াম সংস্কার কাজের উদ্বোধন করা হয়। বিশিষ্ট স্থপতি আশিক ইমরানকে দিয়ে করানো হয় নকশা। যেখানে গ্যালারি, ওয়াকওয়ে, সবুজায়নে বৃক্ষ রোপণসহ নানা পরিকল্পনা রয়েছে। তবে সবার আগে খেলাধুলার জন্য যে জিনিসটি দরকার সেই মাঠ প্রস্তুতির কাজ শেষ হয়েছে অনেকাংশ। এখন খেলাধুলার আতুড়ঘর আউটার স্টেডিয়াম আবার ক্রীড়াবিদদের পদভারে মুখর হওয়ার অপেক্ষা। তবে আউটার স্টেডিয়ামের সংস্কার চট্টগ্রামের ক্রীড়াবিদদের মাঝে নতুন উদ্দীপনা জাগ্রত হলেও শংকা কাজ করছে এই মাঠ সংরক্ষণ করা যাবে কিনা সে বিষয়ে। বর্তমান জেলা প্রশাসক যেভাবে সবার সাথে আলোচনা করে, সবাইকে বুঝিয়ে, বিশেষ করে রাজনৈতিক নেতৃত্বকে তিনি বুঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে, খেলার মাঠে কেবলই খেলা হওয়া উচিত। তিনি বদলি হয়ে গেলে তার পরে যিনি আসবেন তিনি কতটা এই বিষয়টাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন সেটাও একটা বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।

তবে চট্টগ্রামের ক্রীড়াবিদ এবং ক্রীড়া সংগঠকদের দাবি, বর্তমান জেলা প্রশাসক যেভাবে সবাইকে বুঝিয়ে আউটার স্টেডিয়ামকে আবার হারানো রূপে ফেরাতে পেরেছেন সে বিষয়টি তিনি তার পরে যিনি আসবেন তাকেও যদি বুঝিয়ে দিতে পারেন তাহলে এই মাঠ খেলাধুলার থাকবে। পাশাপাশি এই মাঠের নিরাপত্তা বিধান করা এখন সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ যখনতখন যে কেউ নেমে খেলা শুরু করলে মাঠের ঘাস রক্ষা করা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন সবুজায়নের দায়িত্ব পাওয়া প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। কাজেই এখন এই মাঠের নিরাপত্তা বিধান করাই সবচাইতে বড় কাজ। এই মাঠ প্রস্তুতির কাজ শেষ হতে হয়তো আর বেশি সময় লাগবে না। আর এর পরই জেলা ক্রীড়া সংস্থা তাদের বেশ কিছু ইভেন্ট আয়োজন করতে পারবে এই মাঠে। যাতে মাঠের সংকট কিছুটা হলেও লাঘব হবে বলে মনে করছেন ক্রীড়াঙ্গন সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে সামনের বর্ষা মৌসুমটাতে একটু বেশি সতর্ক থাকতে হবে বলে জানিয়েছেন মাঠ বিশেষজ্ঞরা। কারণ যেহেতু মাঠটি এখনো নতুন তাই বর্ষায় বেশি ব্যবহার হলে তা ঘাসের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এই বর্ষাটা একট সতর্কতার সাথে মাঠ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন তারা। সে সাথে নিতে হবে মাঠের যত্ন। সঠিক পরিচর্যা নাহলে নষ্ট হয়ে যাবে অনেক কষ্টে পাওযা আউটার স্টেডিয়াম। তাই স্বাধীনতা অর্জনের চাইতে স্বাধীনতা রক্ষা করা যেমন কঠিন তেমনি আউটার স্টেডিয়াম ফিরে পাওয়ার চাইতে সেটি রক্ষা করাই এখন কঠিন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচকরিয়ায় হত্যা মামলার দুই আসামি প্রতিপক্ষের হাতে খুন
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ম সমাবর্তন ৮ ডিসেম্বর