প্রশংসাযোগ্য আশ্রয়ণ প্রকল্পে কোনো অনিয়ম কাম্য নয়

| রবিবার , ৮ মে, ২০২২ at ১০:৩৫ পূর্বাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার হিসেবে গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারের মাঝে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় তৃতীয় ধাপে আরও ৩২ হাজার ৯০৪ পরিবারকে সরকারি অর্থে নির্মিত ঘর দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব পরিবারকে উপহারের বাড়িসহ ঘর প্রদান করেন। ‘গৃহহীনে গৃহ দিলে আমি থাকি ঘরে’- কবিতার এই মহান বাণীকে বুকে ধারণ করে প্রধানমন্ত্রী মহৎ কাজের ধারাবাহিক কাজ অব্যাহত রেখেছেন, যা সত্যিই প্রশংসনীয়। গৃহপ্রাপ্তির কারণে সংশ্লিষ্টরা এখন নতুন করে তাদের জীবনকে সাজাতে পারবে। বলা যেতে পারে, তাদের পক্ষে এখন ভাগ্যবদল করা সহজ হবে। আশ্রয়ণ প্রকল্প শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত লাখ লাখ পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। সেগুলোর লক্ষ্য অতিদরিদ্র মানুষের স্বাভাবিক জীবনধারা সমুন্নত রাখা। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য সরকারের এ উদ্যোগ অভিনন্দনযোগ্য।

এখানে উল্লেখ্য, কেবল চট্টগ্রামে তৃতীয় পর্যায়ে এক হাজার ২১৬টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবার জমিসহ ঘর পেয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মমিনুর রহমান আগেই এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সারাদেশের মতো চট্টগ্রাম জেলায় প্রথম পর্যায়ে এক হাজার ৪৪৪টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ২ শতাংশ জমিসহ সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে ঘর দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০২১ সালের ২০ জুন সারাদেশে ৫৩ হাজার ৩৪০টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ২ শতাংশ জমিসহ সরকারি অর্থায়নে ঘর দেওয়া হয়েছে। এ পর্যায়ে চট্টগ্রাম জেলায় ৬৪৯টি পরিবারকে ২ শতাংশ জমিসহ সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে ঘর প্রদান করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর এ অনন্য উদ্যোগে শামিল হবার জন্য এখন বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিরাও এগিয়ে আসছেন। ইতোমধ্যে বেসরকারি উদ্যোগে চট্টগ্রাম জেলায় ১২০টি ঘর নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প খাতে অর্থ অনুদান দিচ্ছে।

তৃতীয় পর্যায়ে চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলায় ৮৫টি, কর্ণফুলী উপজেলায় ১০টি, আনোয়ারা উপজেলায় ১৩০টি, বোয়ালখালী উপজেলায় ৪৫টি, চন্দনাইশ উপজেলায় ৬৫টি, সাতকানিয়া উপজেলায় ২৮টি, লোহাগাড়া উপজেলায় ১৪৫টি, বাঁশখালী উপজেলায় ১২০টি, রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় ৭০টি, রাউজান উপজেলায় ৫৬টি, হাটহাজারী উপজেলায় ২৪টি, ফটিকছড়ি উপজেলায় ৩৯০টি, সীতাকুণ্ড উপজেলায় ২৮টি, মীরসরাই উপজেলায় ২০টিসহ মোট এক হাজার ২১৬টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ঘর প্রদান করা হয়েছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কোটি মানুষকে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন; সাহস জুগিয়েছিলেন মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার। আর তাঁর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চান দেশের কোনো অসহায় মানুষকে যেন দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত হতে না হয়। যেন কষ্টে জীবন অতিবাহিত করতে না হয়। মাথা গোঁজার ঠাঁই যেন হয়। সেই লক্ষ্যেই ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষদের জমি ও বাড়ির মালিক বানিয়েছেন। বাড়িয়েছেন তাদের সামাজিক মর্যাদা। বিশ্লেষকরা বলেন, ‘এই বাড়ি এখন তাই কেবল তাদের ঠিকানা নয়, আত্মমর্যাদা আর সম্মানেরও প্রতীক। ক্রমান্বয়ে বাকি সব পিছিয়ে পড়া মানুষের বাসস্থান নিশ্চিত করার পরিকল্পনা করেছেন তিনি। তখন বিস্ময়ভরা চোখে সারা পৃথিবী দেখবে বিশ্বের বুকে জেগে উঠছে এক নতুন ব-দ্বীপ বাংলাদেশ। হাজার বছরের বাঙালির ইতিহাসে জড়িয়ে যাওয়া বন্যা, ঝড়, খরা ও নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মাড়িয়ে তাঁর যোগ্য নেতৃত্বে বদলে যাবে দেশের অর্থনীতি। সবাইকে অবাক করে দিয়ে পরিবর্তনের গল্পগুলো এভাবে রচিত হবে, তা কি কেউ কখনো ভেবেছে!’

সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের বিপুলসংখ্যক ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল, অসহায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে পুনর্বাসিত করা হচ্ছে। এটা আনন্দ ও প্রশংসার সংবাদ। তবে আমরা আশা করবো, এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে যেন কোনো অনিয়ম পরিলক্ষিত না হয়। যাতে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি না হয়, তা নিশ্চিত করা দরকার। পুনর্বাসনের আওতায় আসা মানুষের জীবনযাত্রা মনিটরিং করা উচিত। মানুষগুলো যাতে উন্নত জীবনযাপন করতে পারে, সেজন্যও যথাযথ কর্মসূচি গ্রহণ করা দরকার বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। পুনর্বাসিত পরিবারের মানুষগুলো যদি সরকারের এই কর্মসূচির ওপর ভর করে তাদের জীবনের মোড় ঘোরাতে পারে, তাহলে তা হবে অত্যন্ত আনন্দের। এদের ভাগ্য পরিবর্তনের মাধ্যমে দেশে ঘটবে ইতিবাচক ঘটনা। দেশের সামগ্রিক উন্নয়নেও তা বড় ধরনের ভূমিকা পালন করবে নিঃসন্দেহে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে