প্রযুক্তিতে নারীর অভাবনীয় সাফল্য

 ডেইজী মউদুদ | শনিবার , ১১ মার্চ, ২০২৩ at ৫:৪০ পূর্বাহ্ণ

নারী, কে বলে তোমায় আজ অবলা!

তোমার কপালে আজ প্রযুক্তির চন্দনে মোড়া

সুবসিত রাজটীকা। তোমার কালো কেশের লাল

ফিতা অদৃশ্য অন্তর্জালে চরে ভেসে যায় দূর নীলিমায়! ’

চার দেয়ালের বন্দী জীবন আজ অবলীলায় যেন অবমুক্ত। তোমার দুঃসহ আর্তনাদে কেঁপে উঠেছিল ক্লারা জেটকিন, বেগম রোকেয়া আর সুফিয়া কামালের অন্তরাত্মা।

আজ তাঁরা হাসছেন খিলখিলিয়ে!

কিষাণী আজ ক্ষেতের আইলে বসে সিম বেগুন

আর মূলা বেচে প্রযুক্তির ক্ষুদে বার্তায়। প্রবাসী গিন্নী

ও আর ঘর থেকে বেরোয় না, সে মগ্ন ভিডিও কলে। অনলাইন উদ্যোক্তাদের স্বপ্নও দুয়ারে।

তারা ভাবে , ‘এই বুঝি খুলে গেলো স্বপ্নের বাতায়ন!’

৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ছিল ‘তথ্য আর প্রযুক্তিতে নারী’। জাতিসংঘ বরাবরের মতোই অত্যন্ত বাস্তব এবং যুগোপযোগী প্রতিপাদ্য আমাদের সামনে তুলে ধরে। চলতি বছরে জাতিসংঘের তথ্য ও প্রযুক্তি শাখায় প্রথমবারের মতো প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন একজন নারী তার নাম ডোরিন বোডম্যান মার্টিন। ফলে এবারের প্রতিপাদ্য যথার্থই বলবো। আমাদের দেশও তথ্য আর প্রযুক্তিতে এগিয়েছে অনেক দূর বিশেষ করে নারীর অর্থনৈতিক মুক্তি আর উন্নয়নে। তথ্য ও প্রযুক্তি নারীদের জন্য ব্যবসা আর বাণিজ্যসহ নানা খাতে এক বিরাট সাফল্য এনেছে। নারীদের জন্য আইসিটির প্রভাবে ব্যবসা বৃদ্ধির বিভিন্ন সুযোগ তৈরি হয়েছে। এই খাতের যথোপযুক্ত সুযোগ ব্যবহারের মাধ্যমে বিশ্বে নারী উদ্যোক্তাদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করার সুযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। নারীরা আজ এই প্রযুক্তি ব্যবহারের মধ্য দিয়ে তাদের উৎপাদিত পণ্যের মার্কেটিং, বাজেট প্রসেসিং, ব্যাংকিংসহ বিভিন্ন সমস্যার সমাধান, লাভলোকসান, সবকিছুর হিসাব সেরে ফেলছেন। এক কথায় তথ্য প্রযুক্তি নারী উদ্যোক্তাদের কাজের ধরন বদলে সময়ের সাশ্রয় করতে শিখিয়েছে। আমরা আগে দেখেছি, নারী উদ্যোক্তারা অনেক কষ্ট করে তাদের ছোটখাটো ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খেয়েছেন। তারা একাধারে সংসার করেছেন পাশাপাশি ব্যবসাও করেছেন। ফলে তারা জটিলতা ও সময় বাচাতে ফোন, এসএমএস, ইমেইলসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকেই কাজে লাগিয়ে কাস্টমারদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে ব্যবসার পরিসর বৃদ্ধি করেছেন। আর যারা ইকমার্সের সাথে যুক্ত হয়েছেন, তারা পুরাপুরি সফল হয়ে পরিপূর্ণ ব্যবসায়ীতে পরিণত হয়েছেন। শুধুমাত্র কাস্টমারদের সাথে লেনদেন নয়, বরং তাদের বিভিন্ন সহযোগিতার অডিও বা ভিডিও কলের মধ্য দিয়ে তাদের সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক রক্ষা করেছেন। আগে যারা দোকানে গিয়ে অথবা কলের মাধ্যমে পণ্য সম্পর্কে খবরাখবর নিতো , এখন তারা সকলের জন্য ওয়েবসাইট তৈরি করে, যাতে কাস্টমার নিজের পছন্দমতো পণ্য নিতে সক্ষম হন। ফলে কাস্টমার পণ্য এবং উদ্যোক্তার সাথে যোগাযোগে ব্যবসার ধরনে নতুন এক মাত্রা পায়। এই খাতের উন্নয়নের ফলে নারী উদ্যোক্তারা নিজেরা ব্যবসা পরিচালনা করে একদিকে অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন অন্যদিকে তারা কর্ম সংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রণীত বাংলাদেশ সংবিধানে নারী ও পুরুষের সমান অধিকার ও সম মর্যাদার বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন। সেই প্রণীত বিধান অনুযায়ী বাংলাদেশের নারীরা আজ প্রযুক্তি শিক্ষায় আপন মহিমায় উদ্ভাসিত হচ্ছেন। একই ধারবাহিকতায় সমতাভিত্তিক ও ডিজিটাল সমাজ প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিস্বরূপ ‘প্ল্যানেট ৫০.৫০ চ্যাম্পিয়ন, পিস ট্রি, এজেন্ট অব চেঞ্জ এওয়ার্ড, সাউথ সাউথ, গ্লোবাল ‘উইমেন লিডারশিপ এওয়ার্ড, চ্যাম্পিয়ন অব স্কিল ডেভেলপমেন্ট, এসডিসি প্রোগ্রেস এওয়ার্ড ২০২১ , মুকুটমনি ২০২১ এবং তথ্য প্রযুক্তির অলিম্পিকখ্যাত ‘ উইটস ২০২১ আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুগান্তকারী নেতৃত্বে আমাদের দেশের নারী সমাজ আজ একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে যোগ্য ও দক্ষ জনশক্তি হিসাবে গড়ে উঠেছে। তথ্য ও প্রযুক্তিতে নারীদের অবাধ বিচরণের পথ সুগম করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের আর্থসামজিক উন্নয়নসহ চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সাথে যুক্ত হচ্ছে এদেেশর নারীরা। নারীর মৌলিক অধিকারের পাশাপাশি সমাজের সর্বত্র নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়েছে। তারপরেও প্রশ্ন থেকে যায় একটি জাযগায়, নারীর ক্ষমতায়নের জায়গায়। সিদ্ধান্ত নেয়ার জায়গাগুলোতে, নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের জায়গাগুলোতে কি পরিমাণ গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত হয়েছে শুধুমাত্র নারীদের জন্য?

পূর্ববর্তী নিবন্ধএগিয়ে যাবার পালা
পরবর্তী নিবন্ধসীতাকুণ্ডে তুলার গুদামে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৫ ইউনিট