এগিয়ে যাবার পালা

মিতা দাশ | শনিবার , ১১ মার্চ, ২০২৩ at ৫:৩৯ পূর্বাহ্ণ

৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এই দিনে সারাদিনব্যাপী কত আয়োজন চলে। কত মিছিল, সম্মেলন, সভা, সেমিনার, আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, টক শো আরও কতকিছু। একদিনের কার্যক্রম দেখে মনে হয় নারীর প্রতি সবাই কত উদার, কত সচেতন। সম্মান দেখানো হয় নারীদের ঘরেবাইরে, সংসারে সব জায়গায়।

বাস্তবে তা সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। এখনো অনেক পরিবারে নারীদের মর্যাদা দেয়া হয়না। মেলে না স্বাধীনতা। একজন পুরুষের ক্ষেত্রে তা কিন্তু নয়।

নীরবে চোখের জল ফেলে অনেক নারী। এখনো ঘরে ঘরে শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার সহ্য করে অনেক নারী।

একটা পরিবারের কাহিনি বলি, স্বামী প্রশাসনে আছেন স্ত্রী কলেজে পড়ান। কিন্তু ঐ স্বামী এত শিক্ষিত হয়েও প্রায়ই কথায় কথায় স্ত্রীর গায়ে হাত তোলেন। স্ত্রীর অনেক গুণ থাকা সত্ত্বেও, সারাদিন আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে থাকেন স্বামীর আক্রমণাত্মক মারের জন্য ক্ষেপে আসা নিয়ে।

এই মানসিক চাপ নিয়ে চলতে চলতে এক সময়, একটা সন্তান হওয়ার পর কেমন যেন আস্তে আস্তে এলোমেলো আচরণ করতে শুরু করলো। সন্তান মেয়ে হওয়ার কারণে আরও স্বামীর গালি শুনতে শুনতে মেয়েটাকে মা আর কোলে নিত না, খাবার দিতো না, নিজের সন্তানের প্রতিও কোন ভালোবাসা, মায়া কাজ করতো না। মেয়েটা মায়ের আদর ছাড়া, বাবার উপেক্ষা নিয়েই পৃথিবীতে বেঁচে রইলো কিন্তু মা (স্ত্রী টা) মারা গেলো।

কি অদ্ভুত সংসার! স্ত্রী মারা যাওয়ার পঁয়তাল্লিশ দিনের মাথায় প্রশাসনিক কর্মকতা বিয়ে করলেন, ছোট বাচ্চা মেয়েটার উছিলা দিয়ে। যেই মেয়েটা এই পৃথিবীতে মেয়ে হিসেবে আসার কারণে বাবার সামান্য আদর পর্যন্ত পায়নি এতদিন। আজ তার আদর বেড়ে গেলো লক্ষগুণ।

তবে কিছুটা যে একেবারেই পরিবর্তন হয়নি নারীদের ভাগ্য তা কিন্তু নয়। এখন সমাজে সবাই মেয়েদের মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করান কমপক্ষে। নারীদের কিছুটা স্বাধীনতা অর্জন করেছে। মেয়েরা এখন সাইকেল চালায়, স্কুটি চালায়, প্রাইভেট কার চালায়, কেরাতে চর্চা, দোকানে বেচাকেনা করা, এভারেস্ট বিজয়, ফুটবল, ক্রিকেটে বাইরের দেশের সাথে খেলে জয় লাভ করে বিজয় ছিনিয়ে আনতে পারছে। এই প্রজন্মেও বাবা মাও সচেতন হয়েছে। দেশে আইন হয়েছে ১৮ বছরের আগে বিয়ে দেয়া নয়। কেউ চুরি করে দিলেও আইনানুগ শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর সঠিক নির্দেশনা ও আইনের জন্য মানুষ আগের চেয়ে অনেক সচেতন হয়েছে। এসিড নিক্ষেপ থেকে শুরু করে মেয়েদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নেয়ার কারণে এখন এই দুর্নীতিগুলো কমে এসেছে।

আগের মতো এখন আর কোন মা, তার সন্তানদের শিক্ষিত না করে ঘরে বসিয়ে রাখেন না। প্রত্যেক সন্তানদের যোগ্য নাগরিক করে গড়ে তুলতে ব্যস্ত। স্কুল কলেজে সকল শিক্ষার্থীর সমান সুযোগসুবিধার ব্যবস্থা রয়েছে।

মেয়েদের উপবৃত্তি, বিনা বেতনে অধ্যয়ন, বিনামূল্যে বই বিতরণ, উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করতে পারা, এরকম আরো সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা সরকার করে দিয়েছে। মেয়েরা যাতে প্রতিমাসে ঋতুস্রাবের জন্য স্কুল কামাই না করে তার জন্য সরকারিভাবে সেনিটারি ন্যাপকিনের ব্যবস্থাও আছে। এছাড়া সকল শিক্ষার্থীদের আয়রন ট্যাবলেট খাওয়ানো, করোনার টিকা প্রদানও নিশ্চিত করা হয়েছে সরকারিভাবে। নিজ যোগ্যতাকে প্রমাণ করে নারীদের এখন শুধু এগিয়ে যাবার পালা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসমদর্শিতাকে আলিঙ্গনের ডাক
পরবর্তী নিবন্ধপ্রযুক্তিতে নারীর অভাবনীয় সাফল্য